আব্রাহাম লিংকন, শ্যামনগর থেকে: গত ২০ ডিসেম্বর ২০২২ তারিখে সাতক্ষীরা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আশিকুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক সুমন হোসেনের যৌথ স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আগামী এক বছরের জন্য শ্যামনগর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মনোনীত করেন আব্দুল হাকিম সবুজ ও সাধারণ সম্পাদক মাহবুব আলম বাবুকে।
কমিটি ঘোষণার পর থেকে শ্যামনগরের সকল আওয়ামী অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের বর্তমান-সাবেক নেতা-কর্মীদের মধ্যে তীব্র সমালোচনার ঝড় বইছে সভাপতি পদকে নিয়ে। সবার মধ্যে একটাই আলোচনা এই আব্দুল হাকিম সবুজ শ্যামনগরের অন্যতম চিহ্নিত রাজাকার পরিবারের সন্তান। উপজেলার তৎকালীন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার দেবীরঞ্জন মন্ডল ও তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু সায়েদ মোহাম্মদ মনজুরুল আলম যৌথ স্বাক্ষরিত একটি পত্র এই প্রতিবেদকের হাতে পড়ে। যাতে ভূরুলিয়া ইউনিয়নের রাজাকারদের নামের তালিকায় সোনামুগারী গ্রামের বাহার আলী গাজী (রাজাকার) আব্দুল হাকিম সবুজের আপন চাচা এবং একই ইউনিয়নের গৌরীপুর গ্রামের সামছুর গাজী (রাজাকার) আব্দুল হাকিম সবুজের আপন ফুফা।
একজন রাজাকার পরিবারের সন্তান কিভাবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অন্যতম সহযোগী সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের মতো একটি শক্তিশালী সংগঠনের উপজেলা সভাপতি হয়? এ নিয়ে চলছে জনমনে নানা প্রশ্ন! তবে এই সমালোচনার মুখে ঘি দিয়ে সবুজ দেখালেন আরেক খেলা।
গত ২৭ ডিসেম্বর ২০২২ তারিখ মঙ্গলবার উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আব্দুল হাকিম সবুজের নেতৃত্বে প্রায় অর্ধশতাধিক মোটরসাইকেলের একটি বহর সদর ইউনিয়ন এর ৪ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি গোপালপুর গ্রামের মৃত কালিপদ মন্ডলের ছেলে সুরেশ মন্ডল (৫৬) এর বাড়িতে যেয়ে হামলা করে। এ ঘটনায় শ্যামনগর থানায় সুরেশ মন্ডল বাদী হয়ে ১৩ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ২৫/৩০ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং ২৭।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, শ্যামনগর উপজেলার সদর ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের ৩৩ বছর ধরে সভাপতি হিসেবে সুরেশ মন্ডল দায়িত্ব পালন করে আসছেন। গোপালপুর গ্রামের সুরেশ মন্ডলের বাড়ী ও শ্যামনগর উপজেলা ছাত্রলীগের নবগঠিত কমিটির সভাপতি আব্দুল হাকিম সবুজের বাড়ি পাশাপাশি হওয়ায় পূর্ব শত্রুতার কারণে সবুজ তার সাঙ্গপাঙ্গদের সাথে নিয়ে মঙ্গলবার দুপুর ২ টার সময় দা, রামদা, চাইনিজ কুড়াল, লোহার রড, জি আই পাইপ, ছোট বড় সাইজের লাঠি, দেশী-বিদেশী অস্ত্র সস্ত্রে সজ্জিত হয়ে পূর্বপরিকল্পনা মোতাবেক বেআইনি জনতায় দলবদ্ধ হয়ে শক্তির মহড়া প্রদর্শনপূর্বক সুরেশ মন্ডলের বসত বাড়ির আঙিনায় অন্যায় ভাবে অনধিকার প্রবেশ করে এবং গালিগালাজ করতে থাকে। এমতাবস্থায় এজাহারে প্রাপ্ত অন্যান্য আসামিদের নির্দেশে সুরেশ মন্ডলকে আব্দুল হাকিম সবুজ নিজেই চাইনিজ কুড়াল দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে কোপ দিলে তার মাথার পিছনের অংশে লেগে গুরুতর জখম হয়। যেখানে সাতটি সেলাই দিতে হয়েছে। এবং তিনি যখন বাড়ির উঠানে লুটিয়ে পড়েন এমতাবস্থায় সুরেশ মন্ডলের ডাক চিৎকারে তার পুত্র রঞ্জু মন্ডল (২৪) ছুটে আসলে তাকেও এলোপাতাড়ি ভাবে জখম করে।
এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে হতাশ হয়েছেন তৃণমূল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। একজন রাজাকার পরিবারের সন্তান ও সন্ত্রাসী সবুজকে দিয়ে শ্যামনগর উপজেলা ছাত্রলীগের কর্মকান্ড পরিচালিত হলে অদূর ভবিষ্যতে শ্যামনগর উপজেলায় এই সন্ত্রাসী কর্মকান্ড আরও ত্বরান্বিত হবে। এজন্যে অনতিবিলম্বে সকলেই আব্দুল হাকিম সবুজের বহিষ্কার দাবী করেছেন।
এ ব্যাপারে জানতে সভাপতি আব্দুল হাকিম সবুজের মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাতক্ষীরা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আশিকুর রহমান বলেন, বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। আমরা বিষয়টি যাচাই-বাছাই পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
পূর্ববর্তী পোস্ট