
জাতীয় ডেস্ক:
যারা রাজাকার-আলবদরদের টুপির নিচে নিয়ে গণতন্ত্রের লড়াই করে, তাদের সবক্ষেত্রে বর্জন করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি কমরেড রাশেদ খান মেনন। রবিবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে ‘মহান ভাষা আন্দোলনে কমরেড মোহাম্মদ তোয়াহার অনবদ্য ভূমিকা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই মন্তব্য করেন।এই আলোচনা সভার আয়োজন করে বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল (এম-এল)।
বাংলাদেশ আজকে কোথায় যাচ্ছে— প্রশ্ন করে রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘যারা রাজাকার-আলবদরদের টুপির নিচে নিয়ে গণতন্ত্রের লড়াই করে, তারা আমাদের বন্ধু হতে পারে না, বরং শত্রু। তাদেরকে সবক্ষেত্রে বর্জন করতে হবে।’ হিজাব-বোরকাতে বাংলাদেশ ছেয়ে গেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘বলা হচ্ছে হিজাব সুন্নতি পোশাক। ইসলাম ধর্মের কোথাও এটা আছে বলে আমার জানা নেই। কী হচ্ছে আজকে বাংলাদেশে। পার্বতীপুরে ১২টি মন্দির-প্রতিমা ভেঙে ফেলা হলো।’
তিনি আরও বলেন, ‘রবীন্দ্রনাথের কাটা মুণ্ডু সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পাওয়া গেলো। যদি বিএনপির আমলে এটি হতো, তাহলে বুদ্ধিজীবীরা এতক্ষণে রাস্তায় ১০টি মিছিল করতেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি বিবৃতি দিতো, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা রাস্তায় নেমে পড়তো। কিন্তু কিছুই হয়নি। আমি সাবাস দেই— আমাদের ছাত্র ইউনিয়নের সেই ছেলেদেরকে, যারা এমন একটি প্রতিবাদী ভাষ্কর্য তৈরি করতে পেরেছে এবং সেটি ভেঙে ফেলার পর, আবার সাহস করে ভাঙা টুকরোগুলো কুড়িয়ে এনে পুনঃস্থাপন করতে পেরেছে।’
মেনন বলেন, ‘আমি জানি না একুশ ও ৬০ এর দশকের সাহস নিয়ে বর্তমান তরুণরা এগিয়ে আসবে কিনা? যদি না আসে, তাহলে আফগানিস্তানের থেকেও খারাপ অবস্থা দেখবে বাংলাদেশ। আফগানিস্তানে তো অন্তত আমেরিকানরা সৈন্য দিয়ে চুক্তি করে, রক্তের হলি খেলা ঠেকিয়ে রেখেছে। বাংলাদেশে কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না। দেখা যাবে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় সাম্প্রদায়িক দেশে রূপান্তরিত হয়েছে।’
ভাষা আন্দোলনে কমরেড মোহাম্মদ তোয়াহা’র অবদান তুলে ধরে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি আরও বলেন, ‘আমাদের মাতৃভাষাকে রক্ষা করার জন্য এবং তার মধ্য দিয়ে নতুন জাতীয় চেতনার উন্মেষ ঘটনোর জন্য যারা অগ্রবর্তী ভূমিকা পালন করেছেন, তার মধ্যে তোয়াহা অন্যতম। ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস নিয়ে নতুন করে নতুন কিছু লেখা হচ্ছে। কিন্তু এই ভাষা আন্দোলনের সূত্রপাত যখন হয়, তার ধারাক্রম কেউ পাল্টাতে পারবে না। ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ প্রথম ভাষা আন্দোলনের যাত্রা শুরু হয়। সেই আন্দোলনে বঙ্গবন্ধু যেমন ছিলেন, তেমনি কমরেড তোয়াহাও ছিলেন। তাই কাউকে বাদ দিয়ে ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস রচনা করা যাবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘ভাষা আন্দোলন শুধু বাংলার স্বতন্ত্রবোধ, জাতীয়তাবাদের সৃষ্টি করেনি, এদেশের সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধেও রুখে দাঁড়িয়েছে। সেদিন বাংলাকে হিন্দুর ভাষা বলে আন্দোলনকে বিভক্ত করার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু ভাষা আন্দোলন সাম্প্রদায়িকতা, দক্ষিণপন্থা, দ্বি-জাতি তত্ত্বের বিরুদ্ধে এবং বাঙালি জাতীয়তাবাদের পক্ষে দাঁড়িয়েছে। সুতরাং, আজকে যখন দেখি— আমাদের রাষ্ট্র, সমাজ সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী শক্তির হাতে চলে যাচ্ছে, তখন আমাদের উদ্বিগ্ন হওয়া ছাড়া কোনও পথ নেই। একইসঙ্গে আমাদের শক্তি এতই কম যে, আমরা এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে পারছি না।’
এম-এল এর সাধারণ সম্পাদক কমরেড দিলীপ বড়ুয়ার সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন— জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু, এম-এল এর পলিট ব্যুরোর সদস্য কমরেড লুৎফর রহমান, সাইফুল হক মাস্টার, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সাইমুম হক প্রমুখ।