আরিফুল ইসলাম, মণিরামপুর থেকে: যশোরের মণিরামপুরে রমজানের শুরুতেই তীব্র বিদ্যুৎ-বিভ্রাট ( লোডশেডিং) শুরু হয়েছে। ৩-৪ দিন ধরে এ সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে। সব থেকে বেশি সমস্যা দেখা দেয় সন্ধ্যা নামলে। সন্ধ্যায় বিদ্যুৎ গেলে আসে রাত ১০ টার পরে। কোন কোন এলাকায় বিদ্যুৎ আসা – যাওয়ার মধ্যেই থাকছে।
ফলে রোজাদার ব্যক্তিরা সহ সকল মানুষ গরমে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জনজীবন। বিদ্যুৎ না থাকায় পড়ালেখায় ক্ষতি হচ্ছে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের। বিপাকে পড়েছেন রোজা পালনকারীও।
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির দাবি, হঠাৎ করে বিদ্যুতের উৎপাদন কমে যাওয়ায় লোডশেডিং শুরু হয়েছে। মণিরামপুরে চাহিদার তুলনায় অর্ধেক বিদ্যুৎ সরবরাহ হচ্ছে। সমস্যা সহনীয় হতে আরও ২-৩ দিন সময় লাগবে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে রমজানের শুরু থেকেই উপজেলার রাজাগঞ্জ, খেদাপাড়া, রোহিতা, কাশিমনগর, ঢাকুরিয়া, মনোহরপুর, নেহালপুর, বাকাশপোল সহ বিভিন্ন এলাকায় সন্ধ্যার পর বিদ্যুৎ থাকছে না। বেরা ডোবার পরই বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে। মাঝে মধ্যে লুকোচুরি চলতে থাকে বিদ্যুতের। রাত ৮ টার পর আবার বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে।
টানা দেড় থেকে দুই ঘন্টা বিরতি নিয়ে আবার আসছে বিদ্যুৎ ১০ টার পর। দিনের বেলায়ও একই অবস্থা। থেমে থেমে বিদ্যুৎ আসা- যাওয়া করছে। চৈত্রের তাপে বিদ্যুতের এ চুকোচুরি খেলায় অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জনজীবন।
গত মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত টানা লোডশেডিং দেখা গেছে উপজেলার খেদাপাড়া,কাশিমনগর অঞ্চলে। বিদ্যুৎ বিভ্রাট হচ্ছে বিভিন্ন সময়ে। মণিরামপুরের সব এলাকায় বিদ্যুৎ বিভ্রাট হচ্ছে বিভিন্ন সময়ে। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন সময় দেখা যাচ্ছে বিদ্যুৎ – বিভ্রাট। তবে সন্ধ্যার পর থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত সব এলাকায় বিদ্যুৎ- বিভ্রাট। পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে তথ্যমতে, মণিরামপুর অঞ্চলভেদে লোডশেডিং থাকছে ৪- ৬ ঘন্টা।
এদিকে সন্ধ্যার পর বিদ্যুৎ না থাকায় বিপাকে পড়ছেন রোজা পালনকারীরা। মাগরিব ও এশার নামাজের সময় বিদ্যুৎ না থাকায় নামাজ আদায়ে কষ্ট হচ্ছে মুসল্লিদের। মথুরাপুরের আব্দুর রহিম বলেন, রোজাের শুরু থেকে বিদ্যুতের সমস্যা শুরু হয়েছে। ইফতারির সময় চলে যাচ্ছে। মাঝে দিয়ে এসে এশার আজানের পর চলে যাচ্ছে। এর পর তারাবির নামাজ শেষ হলে বিদ্যুৎ আসে।
কদমবাড়িয়া গ্রামের এসএসসি পরীক্ষার্থী রনি হোসেন বলেন, পরিক্ষার আর দুই মাস বাকি আছে। দিনের বেলায় ঠিকমতো বিদ্যুৎ থাকছে না।সন্ধ্যায় পড়ার আসল সময়। তখন চলে গিয়ে রাত ১০ টার পরে বিদ্যুৎ আসে।এর মধ্যে দু- একবার বিদ্যুৎ আসে।বই নিয়ে বসার পরপরই চলে যায়।
তবে গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎ বিভ্রাট তীব্র হলেও এ সমস্যা তেম নেই মণিরামপুর উপজেলা সদরে। মাঝেমধ্যে কিছু সময়ের জন্য বিদ্যুৎ চলে গেলেও এখানে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ ভালো।
বিদ্যুৎ বিভ্রাটের বিষয় জানতে চাইলে যশোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি – ২ এর জ্যেষ্ঠ ব্যাবস্থপক প্রকৌশলী মনোহর কুমার বিশ্বাস বলেন,লোডশেডিং সমস্যা নিয়ে বিপাকে আছি।বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যাবহৃত গ্যাসের পেশার কমে যাওয়া অনেকগুলো জেনারেটর বন্ধ হয়ে গেছে। প্রকৌশলী মনোহর বিশ্বাস বলেন, শুধু রাতে নয়,এখন দিনের বেলায়ও লোডশেডিং শুরু হয়েছে। যা নিয়ে আমরা খুব বিব্রতকর অবস্থায় পড়ছি।
মনোহর বিশ্বাস বলেন,মণিরামপুর – কেশোবপুর অঞ্চলে রাতের বেলায় বিদ্যুতের প্রযোজন হয় ২৫ মেগাওয়াট। সোমবার সন্ধ্যায় পেয়েছি তার অর্ধেক। মোট মিলে মণিরামপুরে মানুষ দিনরাতে ১৭-২০ ঘন্টা বিদ্যুৎ সেবা পাচ্ছে।
যশোর পল্লী বিদ্যুতের জ্যেষ্ট ব্যাবস্থপক বলেন,,পায়রা বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র থেকে আনার জন্য সার্কিট চালু করার চেষ্টা চলছে। সেখানে নতুন লাইনের কাজ চলছে। যা দু- একদিনের মধ্যে চালু হবে।তখন এ অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহের উন্নতি হবে। মনোহর বিশ্বাস আরও বলেন, আমরা খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি, গ্যাস পেশার বাড়িয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। দ্রæত সময়ের মধ্যে বিদ্যুৎ সংকট কেটে যাবে।