নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাজনৈতিক প্রতিহিংসা, সংবাদ প্রকাশের জের, পূর্বের শত্রুতা, বিশেষ সুবিধা নিয়ে সুশীলসমাজের মানুষদের নামে মিথ্যা মামলা করাই কাজ বিতর্কিত ব্যক্তি রঘুনাথ খাঁ’র। বিগত কয়েক বছর ধরে দেবহাটা সহ জেলার বিভিন্ন মানুষদের নামে একের পর এক মিথ্যা মামলা দায়ের করে চলেছেন তিনি। সাম্প্রতিক এমনই ঘটনার জন্ম দিয়েছেন এই কুখ্যাত রঘু নাথ খাঁ।
প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, বিগত কয়েক বছর ধরে দেবহাটা উপজেলার ব্যবসায়ী, সুধীজনদের নামে মিথ্যা ও হয়রানি মামলা করে আসছেন রঘু নাথের সহযোগীরা। কখনো রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বা পূর্ব শত্রুতা অথবা সংবাদ প্রকাশের জের ধরে এসব মামলা করে আসছেন তিনি। অভিযোগ আছে অপরাধী ও দাগি আসামিদের কাছ থেকে সুবিধা নিয়ে এসব কর্মকান্ড করে আসছেন তিনি। বিশেষ করে তার উসকানিতে উপজেলার খলিশাখালীতে ব্যক্তি মালিকানা জমি ভূমিহীন নামধারী দস্যুদের দিয়ে একের পর এক মৎস্যঘের লুট ও দখলে নিয়েছেন তিনি। এতে করে ওই এলাকার আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ব্যাপক অবনতি হওয়ার পাশাপাশি ওই এলাকায় সন্ত্রাসীদের নিরাপদ স্থলে পরিণত হয়েছে। গত ১ নভেম্বর দেবহাটার খলিশাখালীতে সেনা অভিযানকালে ডাকত দলের সদস্যদের গনপিটুনি দেয় জনসাধারণ।
এ ঘটনায় কয়েকজন ডাকাতকে আটক করে সেনা সদস্যরা। তাদের স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসা হলে কামরুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি হাসপাতালে মারা যান। তবে কামরুল ইসলাম ২০২২ সালের ৩ নভেম্বর রাইফেল,৭ রাউন্ড গুলি ও ধারালো রামদাসহ গ্রেফতার হয়। এদিকে, ১০ নভেম্বর নিহত কামরুল ইসলাম গাজির স্ত্রী মর্জিনা বেগম (৩৯) বাদী হয়ে দেবহাটা থানায় এ মামলা দায়ের করে। এ মামলায় যাদের আসামি করা হয়েছে তারা অনেকে ঘটনা সম্পর্কে কিছুই জানেন না।
মামলার আসামি অনেকে সুশীল সমাজের প্রতিনিধি। যার মধ্যে ইউপি চেয়ারম্যান, উপজেলা বিএনপি’র নেতা, পত্রিকার সম্পাদক রয়েছেন। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে বিতর্কিত ব্যক্তি রঘু নাথ খাঁর সাথে পূর্বের শত্রুতার জের ধরে এ মামলা করা হয়েছে। মামলার বিবরণে উল্লেখিত ঘটনার সাথে অনেক কিছুর অমিল পরিলক্ষিত হয়েছে। ঘটনার ১০ দিন পর মামলা করে কামরুলের স্ত্রী। মামলাটি নথিভুক্ত করতে বিতর্কিত ব্যক্তি রঘু নাথ কামরুলের পরিবারকে উসকানি দিয়ে বিভিন্ন মহলে তদবির করতে থাকে। এরপর ওই মামলায় বিভিন্ন ব্যক্তিদের নাম জড়িয়ে হয়রানিমূলক মিথ্যা করা হয়েছে। যার মধ্যে দৈনিক সাতনদী পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের জের ধরে সম্পাদককে আসামি করা হলেও তিনি ওইদিন ঘটনাস্থলে ছিলেন না। এমনকি তার বাসা থেকে ঘটনাস্থলের দুরত্ব প্রায় ৩০ কিলোমিটার।
এদিকে, গত ১ নভেম্বরের ঘটনায় পরের দিন রামনাথপুর মাঠপাড়া গ্রামের মৃত জব্বার গাইনের ছেলে আলিম গাইন বাদী হয়ে দেবহাটা থানায় ০২ নং মামলা দায়ের করেন। এই মামলায় ৭ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ৫/৭ জন আসামি করা হয়েছে। এ মামলায় ৬জনকে দেশীয় অস্ত্র, বোমা সহ আটক করে জেল হাজতে প্রেরণ করে পুলিশ।
মামলার বিবরণ ও বাদীর বরাত দিয়ে জানা যায়, কাজী গোলাম ওয়ারেশের ঘের লিজ নিয়ে মাছ উপাদান করে আসছেন। তার মৎসঘেরের বাসার সামনে অনধিকার প্রবেশ করে ঘেরের মাছ মারতে থাকে। তারা প্রায় দেড় লাখ টাকার মাছ ধরে নিয়ে যায়। এসময় আমি ঘেরের বাসা হতে বাইরে এসে তাদেরকে আমাদের ঘের থেকে মাছ মারতে নিষেধ করলে তারা তাদের সাথে থাকা অস্ত্র দেখিয়ে আমাকে জানে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। আমি ভয়ে চুপ থেকে গোপনে উক্ত বিষয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে খবর দিলে সেনাবাহিনীর একটি টহল টিম ঘটনাস্থলে আসা মাত্র ডাকাতরা অস্ত্র গোলাবারুদ দিয়ে বিষ্ফোরণ ঘটালে উক্ত স্থানে বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি হয়।
এ সময় কয়েকজন আসামিকে ঘিরে ফেলে জনসাধারণ। যার মধ্যে কামরুল অসুস্থ হয়ে পড়লে স্থানীয় জনগণের সহায়তায় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা দেবহাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। কর্তৃব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করেন। এমনকি বিতর্কিত ব্যক্তি রঘু নাথ খাঁ’র মদদে সন্ত্রাসীরা বেপরোয়া হয়ে আমাদের লিজকৃত ঘেরে মাছ লুট করে কোটি কোটি টাকার ক্ষতিরমুখে ঠেলে দিয়েছে। খলিশাখালী এলাকার সন্ত্রাসীদের বাঁচাতে হয়রানি মূলক মামলা দায়ের করা হয়েছে। আমরা মিথ্যা মামলার প্রত্যাহার করতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
প্রাপ্ত তথ্যে আরো জানা গেছে, ২০২৩ সালের ২৪ জানুয়ারি ভয় দেখিয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগে দেবহাটা থানায় দায়েরকৃত মামলায় পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে প্রেরণ করে। যার নং-৯। এছাড়া কালিগঞ্জ থানায় ১৯/০৫/১৭ তারিখে মামলা নং-১৬/১৩৯ মামলা দায়ের করেন আমিনুর রহমান। ২০০৭ সালে ২২ মে কালিগঞ্জ থানায় ২৪/১৪৭ নং মামলা দায়ের করেন মাধব চন্দ্র সরদার।
২৪/০৫/২০০৭ তারিখে তার মা শ্রী মতি ঝর্ণা নারী খাঁ বাদি হয়ে এ মামলা করেন। ২০১৬ সালের ২০ জুলাই সিআরপি মামলা ৩৬৮/১৬ দায়ের করেন সাংবাদিক নজরুল ইসলাম, ২০১৬ সালের ২৮ আগস্ট ৩২৪/১৬ মামলা করেন আক্তারুজ্জামান বাচ্চু, সাতক্ষীরা জেলা যুগ্ম জজ ২য় আদালতে ২ এপ্রিল ২০১৮ তারিখে ব্যবসায়ী নুর আমিন বাদি হয়ে ১/১৮ মামলা করেন। এর আগে ওয়ান ইলেভেনের সময় তৎকালিন তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার ডাইভারের নিকট চাঁদা আদায় কালে তাকে যৌথবাহিনী গ্রেফতার করে।
সে মামলায় সাতক্ষীরা জেলা ও দায়রা জজ আশীষ রঞ্জন দাস তাকে চার বছরের সশ্রম কারাদন্ডে দন্ডিত করেন। সাতক্ষীরার এক সময়ে শীর্ষ চরম পন্থীদের সাথে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিলো। এমনকি ভারতের বসিরহাট এলাকায় বেড়ে ওঠা রঘুনাথ খাঁ এর সাথে সে খানকার সন্ত্রাসীদের সাথে সখ্যতা রয়েছে বলে তার মায়ের দায়েরকৃত মামলায় উল্লেখ করা হয়। সে ১৯৭৮ সালে দেশত্যাগ করে প্রতিবেশী দেশে চলে যায়। সেখানে ২০/২১ বছর যাবত বসবাস করে স্ত্রী, সন্তান রেখে দেশে ফিরে আসেন।
দেশে ফিরে নিজেকে আইনজীবী, কখনও সাংবাদিক, কখনও মানবাধিকার সদস্য, আবার কখনো ভূমিহীন নেতা পরিচয়ে সহজ-সরল মানুষকে বিপদে ফেলে অর্থ আদায় করে আসছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া বিগত ২০২২ সালে খলিশাখালীতে সন্ত্রাসীদের দিয়ে ব্যক্তি মালিকানা ঘের দখল নিয়ে সেখান থেকে বিশেষ সুবিধা ভোগ করে আসছিলেন। পরে মালিকপক্ষকে কাছে চাঁদা দাবি করায় পুলিশের হাতে আটক হয় সে। বিষয়টি নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করে দৈনিক সাতনদী সহ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম। এতে শত্রুতার জের ধরে সাজানো আসামি করা হয়েছে পত্রিকার সম্পাদক সহ সমাজের সম্মানীয় ব্যক্তিদের।
পারুলিয়া বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এক ব্যবসায়ী জানান, মিথ্যা তথ্য প্রকাশ করে একের পর এক মানহানী করায় বিতর্কিত রঘু নাথের নামে মানহানী মামলা দায়ের করি। যা আদালতে বিচারাধীন আছে। আমার মত অনেক মানুষ আছে তারা এই ব্যক্তির হয়রানির শিকার হয়েছে। আমি আদালতের ন্যায় বিচার প্রার্থনা করছি।
এদিকে গত বুধবার বিকালে পারুলিয়া বাসস্ট্যান্ড এলাকায় মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে ভূক্তভোগীদের পক্ষ থেকে মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়েছে।