নিজস্ব প্রতিবেদক: সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে সাতক্ষীরা পৌর সভার নির্বাচন। নির্বাচনে বিএনপি ও জামায়াতের যোগসাজসে পূনরায় পৌর মেয়র নির্বাচিত হয়েছে বিএনপি মনোনীত ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী তাজকিন আহমেদ চিশতি। রবিবার (১৪ ফেব্রয়ারী) সকাল ৮ টা থেকে বিরতিহীনভাবে বিকেল ৪ টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়।ভোটার উপস্থিতি ছিলো চোখে পড়ার মতো। পৌরসভার ৯ টি কেন্দ্রে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা কঠোরভাবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
মেয়র পদে মোট ৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। বেসরকারি ফলাফলে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী তাজকিন আহমেদ চিশতি ২৫ হাজার ৮৮ ভোট পেয়ে দ্বিতীয়বারের মতো পৌর মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম স্বতন্ত্র প্রার্থী নাসিম ফারুক খান মিঠু নারিকেল গাছ প্রতিকে ১৩ হাজার ২শ’ ২১ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে আছেন। আর আওয়ামীলীগ মনোনীত নৌকা প্রতিকের প্রার্থী শেখ নাসেরুল হক এর অবস্থান তৃতীয়। তিনি পেয়েছেন ১৩ হাজার ৫০ ভোট। এছাড়া জামায়াত মনোনীত স্বতন্ত্র প্রার্থী শেখ নুরুল হুদা জগ প্রতিকে পেয়েছেন ২ হাজার ৮শ’ ৮৮ ভোট এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত প্রার্থী মুসতাফিজ উর রউফ হাতপাখা প্রতীকে পেয়েছেন১ হাজার ৬ শ’ ৭৯ ভোট। এবারের নির্বাচনে মোট ভোটার ছিল ৮৯ হাজার ২শ’ ২৪। এর মধ্যে মোট পোল হয়েছে ৫৬ হাজার ৬৫ ভোট। বাতিলকৃত ভোটের সংখ্যা ১৩৯। বৈধ ভোট সংখ্যা ৫৫ হাজার ৯শ’ ২৬।
অন্যদিকে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১নং ওয়ার্ডে কায়সারুজ্জামান হিমেল,২নং ওয়ার্ডে সৈয়দ মাহমুদ পাপা, ৩নং ওয়ার্ডে আইনুল ইসলাম নান্টা, ৪নং ওয়ার্ডে কাজী ফিরোজ হাসান, ৫নং ওয়ার্ডে আনোয়ার হোসেন মিলন,৬ নং ওয়ার্ডে শেখ মারুফ হোসেন শাওন ৭ নং ওয়ার্ডে জাহাঙ্গীর হোসেন কালু, ৮নং ওয়ার্ডে শফিকুল আলম বাবু এবং ৯নং ওয়ার্ডে শেখ শফিক উদৌলা সাগর বিজয়ী হয়েছেন।
এছাড়া সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ১,২ ও ৩ নং ওয়ার্ডে নুরজাহান বেগম, ৪,৫ও ৬ নং ওয়ার্ডেঅনিমা রাণী মন্ডলএবং ৭,৮ ও৯ নং ওয়ার্ডেরাবেয়া পারভীন বিজয়ী হয়েছেন।
এদিকে মেয়র পদের নির্বাচন নিয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান, এবারের সাতক্ষীরা পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী থাকলেও বিএনপি জামায়াত জোটের ছিল দু’জন প্রার্থী। এছাড়া নারিকেল গাছ প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থীও একসময় বিএনপির অনুসারি ছিলেন। সে হিসেবে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ভালো করবে এমন প্রত্যাশাই ছিল নৌকা সমর্থকদের। তাছাড়া কিছু সংশয়বাদী ধরেই নিয়েছিলেন যে, ভোটে যদি কোন রকম বল প্রয়োগ করা হয় তাহলে নৌকাই বিজয়ী হবে।
আবার অনেকে ভেবেছিলেন বিএনপি, জামায়াত, আওয়ামী লীগ ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর দলীয় প্রার্থী ছিল। আর একমাত্র নির্দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন সাতক্ষীরা চেম্বার অফ কমার্সের সভাপতি নাছিম ফারুক খান মিঠু। সেক্ষেত্রে বিএনপি, জামায়াত, আওয়ামী লীগ দলীয়ভাবে প্রায় সমান ভোট পেলে স্বতন্ত্র প্রার্থী মিঠু খানের জয়ের সম্ভাবনাই ছিল বেশি। বিশ্লেষকরা বলছেন, উপরোক্ত বিষয়গুলো আঁচ করতে পেরেই বিএনপি-জামায়াতের কৌশলের কাছে পরাজিত হলো নৌকা ও নারিকেল গাছ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান, নির্বাচনী প্রচার প্রচারনার শেষ পর্যায়ে মাঠ জরিপ করে বিএনপি-জামায়াত যখন দেখেছে যে পৃথকভাবে প্রার্থী দেয়ায় তাদের ভরাডুবি হতে পারে তখন তারা দলীয় স্বার্থের উর্দ্ধে উঠে জোটের স্বার্থকে বড় করে দেখেছে এবং জামায়াতের ভোট ব্যাংক থেকে বড় অংশ ধানের শীষ প্রতীকে সমর্থন দিয়েছে। ফলে ধানের শীষ প্রতীক সহজেই বিজয় লাভ করেছে। তবে তারা এটাও বলেছেন, বিগত ২০১৫ সালের নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মিঠু খান তৃতীয় হয়েছিলেন। এবার তার অবস্থান দ্বিতীয়। এতে করে বোঝা যায় তার ভোটব্যাংক বেড়েছে।
সাধারণ কাউন্সিলর পদের ফলাফল:
০১ নং ওয়ার্ড: সাধারণ কাউন্সিলর পদে ০১ নং ওয়ার্ডে মোঃ কায়ছারুজ্জামান হিমেল স্ক্রু ড্রাইভার প্রতীকে ২০০৯ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী রাশিদ হাসান চৌধুরী টেবিল ল্যাম্প প্রতীকে ১৮২০ ভোট, আব্দুস সেলিম ডালিম প্রতীকে ৫৭২ ভোট, জুলফিকার রহমান পাঞ্জাবি প্রতীকে ৩৪৪ ভোট, রশিদুর রহমান ব্রিজ প্রতীকে ২৯, সেলিনা আক্তার পানির বোতল ১৩৭, আহসান আজীম ঢেঁড়শ প্রতীকে ৮০, নূরুল ইসলাম উট পাখি প্রতীকে ৩০, আছাদুল ইসলাম গাজর প্রতীকে ২৩০, আব্দুর রাজ্জাক ব্লাক বোর্ড প্রতীকে ৭৩ ভোট পেয়েছেন।
০২ নং ওয়ার্ড: সাধারণ কাউন্সিলর পদে ০২ নং ওয়ার্ডে সৈয়দ মাহমুদ পাপা ডালিম প্রতীকে ৪৭১২ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আহসানুল কাদির টেবিল ল্যাম্প প্রতীকে ১৫৭৯ ভোট এবং মোঃ তালিম হোসেন উঠ পাখি প্রতীকে ৪৭০ ভোট পেয়েছেন।
০৩ নং ওয়ার্ড: সাধারণ কাউন্সিলর পদে ০৩ নং ওয়ার্ডে মোঃ আইনুল ইসলাম নান্টা ব্ল্যাক বোর্ড প্রতীকে ২৫৮০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মোঃ ইব্রাহীম পানির বোতল প্রতীকে ১৫৬৪ ভোট, শেখ আব্দুস সেলিম টেবিল ল্যাম্প প্রতীকে ১২৭৯ ভোট, আনোয়ার হোসেন উঠ পাখি প্রতীকে ৮০৪ ভোট, শেখ মুজিবর রহমান ডালিম প্রতীকে ৪৩৪ ভোট, কামরুল কবির চৌধুরী ব্রিজ প্রতীকে ২৪০ ভোট এবং সুমন রহমান পাঞ্জাবি প্রতীকে ৮৬ ভোট পেয়েছেন।
০৪ নং ওয়ার্ড: সাধারণ কাউন্সিলর পদে ০৪ নং ওয়ার্ডে কাজী ফিরোজ হাসান পাঞ্জাবি প্রতীকে ২৮১১ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী শেখ আছাদ আহমদ উট পাখি প্রতীকে ১৪০৪ ভোট, শেখ আফজাল হোসেন টেবিল ল্যাম্প প্রতীকে ৫২ ভোট এবং শেখ মাহমুদ হাসান ব্রিজ প্রতীকে ৫২ ভোট পেয়েছেন।
০৫ নং ওয়ার্ড: সাধারণ কাউন্সিলর পদে ০৫ নং ওয়ার্ডে শেখ আনোয়ার হোসেন মিলন পানির বোতল প্রতীকে ১৭২৬ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মোঃ শাহিনুর রহমান গাজর প্রতীকে ১৬৯৪ ভোট, মোঃ আমিরুল ইসলাম টেবিল ল্যাম্প প্রতীকে ১৬৭৬ ভোট, মোঃ শহিদুল ইসলাম উট পাখি প্রতীকে ৮০০ ভোট, মোঃ মিজানুর রহমান ডালিম প্রতীকে ১৮০ ভোট, আব্দুর রাজ্জাক ফাইল কেবিনেট প্রতীকে ৭৪ ভোট, আব্দুল মালেক ব্ল্যাক বোর্ড প্রতীকে ৫৮ ভোট ফারুক হোসেন সরদার পাঞ্জাবি প্রতীকে ২৩০ ভোট পেয়েছেন।
০৬ নং ওয়ার্ড: সাধারণ কাউন্সিলর পদে ০৬ নং ওয়ার্ডে শেখ মারুফ আহম্মেদ ডালিম প্রতীকে ২৬৪৮ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মোঃ শহিদুল ইসলাম টেবিল ল্যাম্প প্রতীকে ২৬৩৯ ভোট, মোঃ রফিকুল ইসলাম উট পাখি প্রতীকে ৫০৩ ভোট, মোঃ কামরুজ্জামান পানির বোতল প্রতীকে ৪৫৮ ভোট এবং শেখ মাহমুদ হোসেন ব্রিজ প্রতীকে ৮৯ ভোট পেয়েছেন।
০৭ নং ওয়ার্ড: সাধারণ কাউন্সিলর পদে ০৭ নং ওয়ার্ডেশেখ জাহাঙ্গীর হোসেন কালু পানির বোতল প্রতীকে ৩২৩৮ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী এস এম জাহানুর হুসাইন পাঞ্জাবি প্রতীকে ১৮২১ ভোট, মোঃ জাহিদুল ইসলাম টেবিল ল্যাম্প প্রতীকে ৮৫৯ ভোট, মোঃ আব্দুল্লাহ আল মামুন ডালিম প্রতীকে ৩৮৫ ভোট, মোঃ শাহাবউদ্দীন ঢেঁড়শ প্রতীকে ৫৬ ভোট এবং মোঃ রেজাউল করিম উট পাখি প্রতীকে ২৭ ভোট পেয়েছেন।
০৮ নং ওয়ার্ড: সাধারণ কাউন্সিলর পদে ০৮ নং ওয়ার্ডে মোঃ শফিকুল আলম বাবু পাঞ্জাবি প্রতীকে ৪৫৪৯ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মোঃ আনারুল ইসলাম উট পাখি প্রতীকে ৯৭৫ ভোট, মোঃ মনিরুজ্জামান মনির পানির বোতল প্রতীকে ২৪০ ভোট এবং মোঃ শওকত আলী ডালিম প্রতীকে ১৯৮ ভোট পেয়েছেন।
০৯ নং ওয়ার্ড: সাধারণ কাউন্সিলর পদে ০৯ নং ওয়ার্ডে শেখ শফিক-উদ দৌলা সাগর উট পাখি প্রতীকে ৩৭৪৬ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মোঃ জিল্লুর রহমান টেবিল ল্যাম্প প্রতীকে ৩২২৮ ভোট, এম এ রাজ্জাক ডালিম প্রতীকে ২৮৬ ভোট এবং মোঃ আবিদুল হক মুন্না পাঞ্জাবি প্রতীকে ১৭২ ভোট পেয়েছেন।
সংরক্ষিত মহিলা আসনের ফলাফল:
সংরক্ষিত মহিলা আসন-০১ (১,২,৩ নং ওয়ার্ড)ঃ নুরজাহান বেগম জবা ফুল প্রতীকে ১১,৮৮৫ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জোৎস্না আরা চশমা প্রতীকে ৫৮৬৮ ভোট এবং তাজিনা আক্তার আনারস প্রতীকে ১২৭০ ভোট পেয়েছেন।
সংরক্ষিত মহিলা আসন-০২ (৪,৫,৬ নং ওয়ার্ড)ঃ অনিমা রাণী মন্ডল আনারস প্রতীকে ৫৪২৮ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ফরিদা আক্তার বানু জবা ফুল প্রতীকে ৪১৮৯ ভোট, মরিয়ম পারভীন টেলিফোন প্রতীকে ৩৭০৭ ভোট এবং রওশন আরা চশমা প্রতীকে ৩৬৯৮ ভোট পেয়েছেন।
সংরক্ষিত মহিলা আসন-০৩ (৭,৮,৯ নং ওয়ার্ড)ঃ মোছাঃ রাবেয়া পারভীন জবা ফুল প্রতীকে ৭০২৯ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ফারহাদীবা খান সাথী বলপেন প্রতীকে ৬৯৫৪ ভোট, রুবিনা জামান খান চৌধুরী আনারস প্রতীকে ৩৯৬০ ভোট, গুলশান আরা চশমা প্রতীকে ১২১৯ ভোট এবং সাহিদা আক্তার অটোরিক্সা প্রতীকে ৪৯৫ ভোট পেয়েছেন।
উল্লেখ্য, এবারের নির্বাচনে সাতক্ষীরা পৌরসভায় মোট ভোটারের সংখ্যা ছিল ৮৯ হাজার ২শ’ ২৪ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার ৪৫ হাজার ৮শ’৬ জন আর পুরুষ ভোটার ছিল ৪৩ হাজার ৪শ’ ১৮ জন।এবারের পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন মোট ৫জন। এছাড়া সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে ১২ জন ও সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৭২ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে।