
⚫ চাঁদা না পেয়ে মারপিট
⚫ টেনেহিঁচড়ে থানায় সোপর্দ
⚫ যাচাই-বাছাই ছাড়াই আসামি ভুক্ত
⚫ আটক ও সময় নিয়ে বিভ্রান্তি
⚫ কোর্টে মিথ্যা প্রতিবেদন দাখিল
⚫ অজ্ঞাতনামা আসামি ফাঁদ
⚫ আইনের রক্ষক যখন ভক্ষক
⚫ নিরীহ,নিরাপরাধ মানুষকে হয়রানি
নিজস্ব প্রতিবেদক: সাতক্ষীরা শ্যামনগরে যুবদল নেতাদের দাবিকৃত চাঁদার টাকা না পেয়ে এক মৎস্য ঘের ব্যবসায়ীকে মারপিট ও টানাহেঁচড়া করে থানায় সোপর্দ করার অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার ২০ ফেব্রুয়ারি বিকাল আনুমানিক ৩.০০ টার সময় শ্যামনগর উপজেলাধীন ইসলামি ব্যাংকের সামনে বাবলাতলা মোড় সংলগ্ন স্থানে এ ঘটনা ঘটে। জানা গেছে, পরিকল্পিত এই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে অংশ নেয় অন্তত ১০ থেকে ১৫ জন যুবদল নেতা কর্মী। আর এই দলের নেতৃত্ব দেয় শ্যামনগর উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক শফিকুল ইসলাম (দুলু)। এর আগে, গত ১৪ ফেব্রুয়ারি মৎস্য ঘের ব্যবসায়ী আব্দুল হামিদ, এর নিকটতম আত্মীয়ের মাধ্যমে তার নিকট ৩ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করে শ্যামনগর উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক শফিকুল ইসলাম (দুলু)। চাঁদার বিপরীতে ব্যবসায়ী আব্দুল হামিদ গাজী রাজি না হওয়ায় পরবর্তীতে চাঁদার পরিমাণ কমিয়ে দেড় লক্ষ টাকা দাবি করা হয়। যুবদলের ওই নেতার দাবিকৃত চাঁদার টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করায় মৎস্য ঘের ব্যবসায়ী আব্দুল হামিদ গাজীর ৫ নং কৈখালী ইউনিয়নের আওতাধীন পরানপুর নিদয়া বিজিবি ক্যাম্প সংলগ্ন এলাকায় চিংড়ি চাষের নিমিত্তে সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড, ডিভিশন- ২ কর্তৃক অনুমোদিত বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ “মিনি ফ্লাসিং সুইস গেট” ভাংচুর করা সহ বিভিন্ন ক্ষয়ক্ষতির হুমকি প্রদান করে। একইভাবে শ্যামনগর উপজেলার ৫ নং কৈখালী ইউনিয়নের শিবচন্দ্রপুর গ্রামের প্রয়াত ফেরাজতুল্লাহ মোড়লের ছেলে মৎস্য ঘের ব্যবসায়ী আবু ইদ্রিস মোড়লের কাছে তার নিকটতম আত্মীয়ের মাধ্যমে প্রথমে ৩ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করে ওই চক্রটি। একপর্যায় রাজি না হওয়ায় পরবর্তীতে চাঁদার পরিমান কমিয়ে দেড় লক্ষ টাকা দাবি করে তিন যুবদল নেতা। এদের মধ্যে রয়েছে, শ্যামনগর উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক শফিকুল ইসলাম (দুলু), সদস্য সচিব আনোয়ারুল ইসলাম আঙ্গুর ও যুগ্ম আহ্বায়ক শামছুদ্দোহা টুটুল। ব্যবসায়ী আবু ইদ্রিস মোড়ল চাঁদার টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তার ৩০০ বিঘা মৎস্য ঘের জবর দখল সহ বিভিন্ন প্রকার ক্ষয়ক্ষতি ও মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর হুমকি প্রদান করে সন্ত্রাসী ওই চক্রটি। ইতিপূর্বে একাধিক গণমাধ্যমে শ্যামনগর উপজেলা যুবদলের ৩ নেতা কর্তৃক মৎস্য ঘের ব্যবসায়ীদের কাছে চাঁদা দাবির বিষয়টি নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হয়। এর প্রেক্ষিতে স্থানীয় বিএনপি নেতা সহ সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যপক আলোচনা ও সমালোচনার ঝড় ওঠে। যদিও বক্তব্য গ্রহণ কালে ওই সময় প্রতিবেদকের সঙ্গে চাঁদা চাওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন অভিযুক্ত শ্যামনগর উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক শফিকুল ইসলাম দুলু, সদস্য সচিব আনোয়ারুল ইসলাম আঙ্গুর সহ যুগ্ম আহ্বায়ক শামছুদ্দোহা টুটুল। আবু ইদ্রিস মোড়ল কে মারপিট ও টানাহেঁচড়া করে জোরপূর্বক থানায় সোপর্দ ও অজ্ঞাতনামা আসামির তালিকায় সন্দেহভাজন গ্রেফতার দেখিয়ে কোর্টে প্রেরণ করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ভুক্তভোগীর পরিবার। পরিবার সুত্রে জানা যায়, যুবদলের ৩ নেতাকে ১৪ ফেব্রুয়ারি চাঁদা না দেওয়ায় ক্ষোভের জের ধরে ২০ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ইসলামি ব্যাংক লিঃ শ্যামনগর শাখায় লেনদেন সংক্রান্ত কাজ শেষে বিকাল আনুমানিক ৩ টার সময় আবু ইদ্রিস মোড়ল বাড়িতে ফেরার উদ্দেশ্যে ব্যাংক থেকে নিচে নামার সাথে সাথে বাবলাতলা মোড় সংলগ্ন স্থানে আগে থেকে ওৎপেতে থাকা শ্যামনগর উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক শফিকুল ইসলাম (দুলু), যুগ্ম আহ্বায়ক শামছুদ্দোহা টুটুল, আনোয়ারুল ইসলাম আঙ্গুর সহ ১০ থেকে ১৫ জন দলবদ্ধ ভাবে এসে তাকে সন্ত্রাসী কায়দায় ঘিরে ধরে। এসময় অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করার একপর্যায় আবু ইদ্রিস মোড়ল কে মারপিট ও টানাহেঁচড়া করে জোরপূর্বক শ্যামনগর থানায় সোপর্দ করে। ভুক্তভোগীর পরিবার খোজ নিয়ে জানতে পারে, শ্যামনগর উপজেলাধীন গাবুরা ইউনিয়নের গাবুরা গ্রামে গত ২৩/১১/২৪ তারিখ পৃথক দুটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে শ্যামনগর থানায় মামলা নং ১৬/৩৩২ তারিখ ২৯/১১/২৪ ইং, ধারা- ১৪৩/৪৪৮/৪৪৭/৩২৩/ ৩০৭/৩৮৫/ ৩৭৯/৩৮০/৩৫৪/৪২৭/৫০৬/১১৪ পেনাল কোড তৎসহ ৩/৬ বিস্ফোরক দ্রব্য আইন ১৯০৮। দায়ের করা অজ্ঞাতনামা ৩০/৪০ জন আসামির মধ্যে আবু ইদ্রিস মোড়লের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এছাড়া তাকে ২০ ফেব্রুয়ারি রাত্র ১০.১৫ মিনিট সময় অত্র শ্যামনগর থানাধীন বাজার হইতে সন্দেহভাজন গ্রেফতার দেখিয়ে পরের দিন ২১/০২/২৫ তারিখ প্রতিবেদন দাখিলের মধ্য দিয়ে বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালত নং ০৫, সাতক্ষীরা কোর্ট পুলিশ পরিদর্শক এর মাধ্যমে তাকে প্রেরণ করা হয়। ভুক্তভোগীর পরিবারের দাবি, আবু ইদ্রিস মোড়ল উল্লেখিত ঘটনার সাথে কোনভাবেই জড়িত নন। এমনকি কোন রাজনৈতিক দলের সাথে তার কোন সম্পৃক্ততা নেই। শ্যামনগর উপজেলা যুবদলের ৩ নেতার দাবিকৃত চাঁদার টাকা না দেওয়ায় তারা ক্ষুব্ধ ও প্রতিহিংসা পরায়ণ হয়ে আবু ইদ্রিস মোড়ল কে মারপিট করে জোরপূর্বক থানায় সোপর্দ করে। পরবর্তীতে শ্যামনগর থানার অফিসার ইনচার্জ হুমায়ুন কবির কে তারা প্রভাবিত করে পেনডিং মামলার অজ্ঞাতনামা আসামিতে মিথ্যাভাবে আবু ইদ্রিস মোড়ল কে ফাঁসানো হয়। তারা বলেন, শ্যামনগর থানার ওসি হুমায়ুন কবির চলেন যুবদলের ইশারায়। সেকারণে যুবদল নেতারা মব জাস্টিসের মতো ইদ্রিস মোড়ল কে মারপিট ও টানাহেঁচড়া করে থানায় নিয়ে সোপর্দ করে। পরবর্তীতে ২০২৪ সালের দায়েরকৃত মামলায় পুলিশ অজ্ঞাতনামা আসামিতে নাম ঢুকিয়ে আদালতে একটি মিথ্যা প্রতিবেদন দাখিল করেছেন। শুধু তাই নয়? যুবদল নেতারা বিকাল ৩ টার সময় বাবলাতলা মোড় সংলগ্ন স্থান থেকে মারপিট ও টানাহেঁচড়া করে থানায় সোপর্দ করার বিষয়টি আড়াল করে পুলিশ কর্তৃক আটক এবং আটকের সময় নিয়েও মিথ্যা বিভ্রান্তি মূলক প্রতিবেদন দাখিল করে। অভিযোগ আছে, সঠিকভাবে যাচাই-বাছাই না করেই একজন নিরীহ, নিরাপরাধ মানুষকে হয়রানি করার নিমিত্তে মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামিতে নাম ঢুকিয়ে দিয়েছেন ওসি হুমায়ুন কবির। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শ্যামনগর উপজেলাধীন ইসলামী ব্যাংকের সামনে বাবলাতলা মোড়ে আনুমানিক বিকাল ৩.০০ টার সময় যুবদল নেতা শফিকুল ইসলাম (দুলু), শামছুদ্দোহা টুটুল সহ প্রায় ১০/১৫ জন দলবেঁধে এসে আবু ইদ্রিস মোড়ল কে মারপিট ও টানাহেঁচড়া করে জোরপূর্বক থানায় নিয়ে যায়। আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামি করাকে একটা ফাঁদ হিসেবে ধরা হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী চাইলে সন্দেহভাজন হিসেবে যে কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে অজ্ঞাতনামা মামলার ক্ষেত্রে আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে অভিযান চালানো হয়। এক্ষেত্রে অনেক নির্দোষ ব্যক্তি বা আসামি ভোগান্তির শিকার হয়। এ বিষয় শ্যামনগর থানার অফিসার ইনচার্জ হুমায়ুন কবির মুঠোফোনে আলাপকালে বলেন, সন্দেহাতীত ভাবে আবু ইদ্রিস মোড়ল কে আটক করা হয়েছে। যুবদল কর্তৃক মারপিট করে ধরে নিয়ে থানায় সোপর্দ করার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি অস্বীকার করে বলেন, আমার জানা নেই। এ বিষয় সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম এর সাথে মুঠোফোনে একাধিক বার আলাপের চেষ্টা কালে আলাপ কলটি গ্রহণ না করায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।