নিজস্ব প্রতিবেদক: সকল নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে বছরের পর বছর ধরে চলে আসছে সাতক্ষীরা মৎসজীবী সমবায় সমিতির কার্যক্রম। সমিতির সভাপতি ঠিকাদার, সাধারণ সম্পাদক সাবেক স্কুল শিক্ষক সহ প্রত্যেক সদস্যই ভিন্ন ভিন্ন পেশায় যুক্ত থাকলেও এ সমিতির নাম করেই নেয়া হয়েছে সরকারি জলমহাল ইজারা।
১৯৯৫ সালে সমবায় অধিদপ্তর থেকে যাত্রা শুরু করে সাতক্ষীরা মৎসজীবী সমবায় সমিতি লিঃ। সাতক্ষীরা সদর উপজেলা সমবায় অফিসারের দেয়া তথ্যে জানা যায়, ‘বর্তমানে সমিতির সদস্য সংখ্য ৪১জন। এর মধ্যে যারা এভিডেবিটের মাধ্যমে সদস্য হয়েছিলেন তাদের মধ্যে মাত্র ৯জন সদস্য এখনো সমিতিতে বিদ্যমান আছে। বাকি সদস্যবৃন্দ কারো মৎসজীবী প্রত্যয়নপত্র নেই।’ সভাপতির উদ্বৃতি দিয়ে উপজেলা সমবায় অফিসার আরও জানান ‘যে সকল সদস্য এভিডেভিটের মাধ্যমে প্রত্যয়নপত্র দাখিলপূর্বক সমিতির নিবন্ধন হয়েছিল তাদের অনেকেই মৃত্যুবরণ করেছে। বর্তমানে বিদ্যমান সদস্যবৃন্দ তাদের আত্মীয়স্বজনদের মধ্য থেকে নেয়া। কারো ছেলে, কারো ভাই বর্তমান সমিতির সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত আছে।’
অনুসন্ধানে জানা যায়, সাতক্ষীরা মৎসজীবী সমবায় সমিতি লিঃ পূর্বের ও বর্তমানের সভাপতি ও সেক্রেটারি ব্যতীত সমিতির অন্য কোন সদস্যের কোনরুপ অংশগ্রহন নেই। যা ২০১০ সালে একবার সদর উপজেলা ইউএনও কর্তৃক অভিযোগের ভিত্তিতে জলমহাল একালাকার জন সাধারণনের উপস্থিতিতে ও সাক্ষ্যে সরজমিনে প্রমানিত হয়। সমিতির সমবায় নীতিমালা অনুযায়ী যে সব কার্যক্রম করার কথা সেগুলো কোন সময় হয়নি। যা হয়েছে তা শুধুই খাতা কলমে। সমিতির সদস্যদের উপস্থিতিতে মাসিক মিটিং, ভোটদান কার্যক্রম ইত্যাদি কোন সদস্য সমিতির কার্যক্রম সম্বন্ধে অবহিত নন। সভাপতি নূরে আলম সিদ্দিক ও সাধারন সম্পাদক আবুল কাশেম মাস্টার ঘুরে ফিরে বারবার সভাপতি ও সেক্রেটারি হন। সমিতির যাবতীয় কাগজীয় কার্যক্রম ও রক্ষনাবেক্ষন কাশেম মাস্টার করে থাকে। কাশেম মাস্টার নবারুন স্কুলের গণিতের শিক্ষক ছিলেন। অন্যদিকে নূরে আলম সিদ্দিক একজন ঠিকাদার। ১৯৯৫ সালের সদস্যরা এভিডেভিটের মাধ্যমে মৎসজীবী হন। কিন্তু এরপর ২০১৪ সালে যেসব সদস্য সমিতিতে অন্তর্ভুক্ত হয় তাদের কেউ মৎসজীবী নয় বা কোন এফিডেভিট করেনি। এ বিষয়টি খোদ উপজেলা সমবায় অফিসার ও সিনিয়র উপজেলা মৎস কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে স্বীকার করা হয়েছে। তবে সমবায় অফিসার এক পত্রে বলেন, প্রতিবছর যথানিয়মে অডিট সম্পাদন হয় সমিতির, বার্ষিক সাধারণ সভা ও নির্বাচন যথা নিয়মে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। কিন্তু সরজমিন তথ্য সম্পূর্ণ উল্টো। সমিতির সদস্যরাও এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। স্থানীয়দের মধ্যে সমিতিটি নিয়ে আছে মতবিরোধ।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা করিমুল হক এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে লিখিত ভাবে জানান, ‘সাতক্ষীরা মৎসজীবী সমবায় সমিতি লিঃ ৪১জন সদস্যের মধ্যে এখন ৯জন এফিডেবিটের মাধ্যমে মৎসজীবী হিসেবে সদস্য আছেন। বাকি সদস্যবৃন্দ কারো মৎস্যজীবী প্রত্যয়নপত্র নেই। বর্তমান সমবায় আইন ও বিধিমালা এবং জলমহাল নীতিমালা অনুযায়ী সমিতির সদস্যবৃন্দের মধ্যে ত্রæটি পরিলক্ষিত হয়।'
সাতক্ষীরা মৎসজীবী সমবায় সমিতি লিঃ সভাপতি নূরে আলম সিদ্দিক বলেন, ‘আমরা মৎসজীবী প্রত্যয়নপত্র সংগ্রহের জন্য আবেদন করেছি। আগে এতো কিছুর প্রয়োজন ছিলনা তাই সংগ্রহ করিনি।
এ বিষয়ে সিনিয়র উপজেলা মৎস কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম জানান, ‘সাতক্ষীরা মৎসজীবী সমবায় সমিতি লিঃ এর কোন সদস্য প্রত্যয়নপত্র গ্রহণের জন্য আবেদন করেনি।’