স্পোর্টস ডেস্ক:
কেমন হবে তার ‘দ্বিতীয় ইনিংস’। চেনা চন্ডিকা হাথুরুসিংহে কি এবার অচেনা হবেন। ‘কড়া হেডমাস্টার’ কি এবার কৌশলী হবেন। যাকে নিয়ে প্রশ্নের পর প্রশ্ন, তিনি কী বলেন।
দ্বিতীয় দফা বাংলাদেশ দলের প্রধান কোচ হওয়ার পর বুধবার প্রিয় প্রাঙ্গণ মিরপুরের শেরেবাংলায় যেন নিজের হৃদয়টা খুলে দেখালেন হাথুরু। অ্যাওয়ে সিরিজে সাফল্যের সূত্রটাও জানিয়ে দিলেন, ‘মিসাইল না থাকলে গেরিলাযুদ্ধ করতে হবে’।
২০১৭-তে বিদায় নেওয়ার পর তিনি কখনো মন থেকে মুছে ফেলেননি বাংলাদেশের ক্রিকেটকে। ‘একদিন ফিরে আসতে চেয়েছিলাম।’ ফিরেছেন তিনি। রাসেল ডমিঙ্গোর কেদারায় বসেছেনও। স্বপ্ন সত্যি হলো। আবারও তিনি সাকিব আল হাসানদের কোচ।
‘চলে যাওয়ার পরও অনুসরণ করেছি বাংলাদেশের ক্রিকেটকে। বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশের অনেক খেলোয়াড় ও কর্মকর্তা আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য আমার হৃদয়ে একটি স্থান ছিল। কারণ, সেটি ছিল আমার প্রথম আন্তর্জাতিক অ্যাসাইনমেন্ট। তাই সবসময় ভেবেছি, একদিন ঠিকই ফিরব। কিন্তু ভাবিনি যে, সেই ফেরাটা এত তাড়াতাড়ি হবে।’
হাথুরু যোগ করেন, ‘টি ২০ বিশ্বকাপে বিসিবি সভাপতি ও কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা হলে অনেক বিষয় নিয়ে কথা হয়। ওয়ানডে বিশ্বকাপ সামনে। এটাই উপযুক্ত সময়। নিউ সাউথ ওয়েলসের মৌসুম শেষ হওয়ার অপেক্ষায় থাকলে হয়তো দেরি হয়ে যেত। বিগ ব্যাশ শেষ হতেই আসার সিদ্ধান্ত নিই। আগামী ২-৩ বছর পালাবদলের সময়। বাংলাদেশ দলের কয়েকজন সিনিয়র খেলোয়াড় দারুণ করছে। ভালো তরুণ ক্রিকেটারও এখন উঠে আসছে। এই ধরনের চ্যালেঞ্জের অংশ হওয়াও আমাকে ফেরার জন্য অনুপ্রাণিত করেছে।’
কেন আবার ফেরা: এরআগে যখন আমি এখানে আসি, নিজেকে প্রমাণ করতে হয়েছে যে, আমি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কাজটা করতে পারি। জানতামই না কিসের মধ্যে এসেছি। এখন আমি অনেক অভিজ্ঞ। জানি, বাংলাদেশ ক্রিকেট কিভাবে চলে। স্থানীয় কোচদের ওপর আস্থা রাখতে চাই। ম্যাচ জেতার চেষ্টাই শুধু করতে চাই না, আমি কিছু ফিরিয়ে দিতে চাই এবং কিছু রেখে যেতে চাই।
বিশ্বকাপে প্রত্যাশার চাপ: দল ভালো করবে, এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কোচ সবসময় চাপে থাকেন। সবারই প্রত্যাশা থাকে ভালো করার। ভারতে বিশ্বকাপ। আমরা এই ফরম্যাটে ভালো করি। মূল খেলোয়াড়দের ফিট ও সুস্থ রাখতে হবে। বিশ্বকাপে ভালো ধাক্কা দিতে পারব।
উন্নতি প্রসঙ্গে: এখন আপনাদের বলতে পারব না। এই মুহূর্তে আমরা র্যাংকিংয়ে শীর্ষ চারে নেই। আমাদের নির্দিষ্ট কিছু জায়গায় আরও ভালো করতে হবে। খেলোয়াড়দের আরও ফিট হয়ে দক্ষতা বাড়াতে হবে। সমন্বয় ঠিক করতে হবে। বিশ্বকাপ কাছে আসার আগেই খেলোয়াড়দের সেরা ফর্মে আনতে হবে।
সিনিয়র খেলোয়াড়দের দায়িত্ব... : তারা এই দায়িত্ব পালন করছে ১০-১৫ বছর ধরে। ওরা যতদিন খেলবে, দায়িত্ব পালন করে যেতে হবে। ওদের এই দায়িত্বে খুব বেশি পরিবর্তন আসবে না। ওরা বিশ্বমানের খেলোয়াড়।
সিনিয়র খেলোয়াড়দের সঙ্গে মনোমালিন্য : সিনিয়র খেলোয়াড়দের সঙ্গে কথা বলেছি। সবাই চায় দল যেন ভালো করে। প্রশ্নটা যাচ্ছেতাই। কারণ, কোনো খেলোয়াড়ের সঙ্গে আমার মনোমালিন্য ছিল না। বরং উপভোগ করেছি।
টেস্ট ও টি ২০-তে উন্নতি : নিউজিল্যান্ডে টেস্ট জিতেছে বাংলাদেশ। ঘরের মাঠে টেস্টে ভালো করেছে। টি ২০ খেলার নিজস্ব উপায় খুঁজে বের করতে হবে। আমরা অন্য দলগুলোর অনুসরণ করতে পারি না। তাদের মতো আমরা নই। আমাদের নিজস্ব শক্তি প্রয়োজন, নিজস্ব গেম পরিকল্পনা দরকার। দলের সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে এটাই আমার অন্যতম চ্যালেঞ্জ, যার জন্য আমি মুখিয়ে আছি। নব্বইয়ের দশক থেকে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে ৫০ ওভারের ক্রিকেট হয়। চারদিনের ম্যাচ হয় না। আমরা জানি, কিভাবে ৫০ ওভারের ক্রিকেট খেলতে হয়। এখন অনেক ফাস্ট বোলার বেরিয়েছে। আমি যখন এসেছিলাম তখন স্পিনারদের দাপট ছিল। এরপর অনেক ফাস্ট বোলার বেরিয়েছে। সেই মেধাগুলো দেখার জন্য উন্মুখ হয়ে আছি।
মাশরাফির ফেরা... : দলে নির্বাচনের জন্য? না, মাশরাফি আর খেলবে না। সাকিবের নিবেদন নিয়ে কখনোই এমন কথা শুনিনি, এভাবে ভাবিনি।
স্পিন বনাম পেস আক্রমণ : আমি জিজ্ঞেস করি, ঘরের মাঠে খেলার সুবিধা কী? আমরা যখন নিউজিল্যান্ডে যাই তখন কেমন উইকেট পাই? আমরা যখন খেলতে যাই, তখন অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড কী করে? ভারত ঘরের মাঠে কী করে? বিদেশে আমাদের যদি মিসাইল না থাকে, আমরা কীভাবে লড়াই করব? আমাদের গেরিলাযুদ্ধ করতে হবে, তাই না? হালকা অস্ত্র দিয়ে আমরা তাদের সঙ্গে ঘরের মাঠে লড়ব না। আমাদের যদি বারুদ না থাকে, আমরা কিছুই করতে পারব না।
আমরা এই খেলোয়াড়দের শানিত করব, যেন আমাদের যথেষ্ট রসদ থাকে। তারা দক্ষিণ আফ্রিকা ও নিউজিল্যান্ডে ভালো করেছে। আমি থাকতেই ইবাদত ও শান্ত ডেভেলপমেন্ট প্লেয়ার হিসাবে নিউজিল্যান্ডে গেছে। এখন তারা ভালো করছে। এজন্য সময় লাগে। আমাদের ঘরের সুবিধা নিতে হবে। সব দেশই এটা করছে।