আহাদুর রহমান (জনি): নিজের ও ১২ বছরের মেয়ে মেধাবী মুমতারিনের ভরণপোষন নিয়ে কষ্টে আছেন হাসিনা খাতুন। মাদকসেবী স্বামী তাদের ভরণপোষন না দেয়ায় নিজেই নামেন জীবিকার যুদ্ধে। কিন্তু তাতেও বাধ সাধে পৌরসভা।
প্রায় ১৪ বছর পূর্বে সাতক্ষীরা সদরের কাটিয়া লষ্কর পাড়ার এনামুল হকের সাথে বিয়ে হয় মুনজিতপুরের হাসিনা খাতুনের। বিয়ের পর হাসিনা খাতুন জানতে পারেন তার স্বামী মাদকসেবী। আস্তে আস্তে টানাটানির সংসারে অশান্তি বাড়তে থাকে। শত প্রতিকুলতার মাঝে বছর দুই পরে তাদের কোলে আসে মেয়ে মুমতারিন। মুমতারিনের বয়স এখন ১২ বছর। সে সাতক্ষীরা বালিকা বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ে। খুবই মেধাবী। এক আধপেটা খেয়ে কষ্টে মানুষের মত মানুষ করতে চান হাসিনা তার মেয়েকে। স্বামী সহযোগীতা তো করেনই না উল্টো মাদক সেবনের জন্য ভাগ বসান অভাবের সংসারেও। তারপরও কষ্টে চলত। তাই চাকরি নেন একটি ইলেকট্রনিক্স শো-রুমে। ৫/৬ হাজার টাকায় দিব্যি চলে যেত মা-মেয়ের কিন্তু বিধি-বাম। বিশ্ব ব্যাপী শুরু হল মহামারি করোনা। শো-রুম চালাতে পারছেনা মালিক। তাই চাকরি গেল হাসিনার। কিন্তু যখন স্বামীর অত্যাচার মাত্রাতিরিক্ত পর্যায়ে পৌছে তখন হাসিনা খাতুন আলাদা থাকার সিদ্ধান্ত নেন। লক্ষ্য মেয়েটাকে মানুষের মত মানুষ করতে হবে। শুরু হলো সংগ্রাম। বিভিন্ন মোড়ে শরবত বিক্রি করতে শুরু করেন হাসিনা খাতুন। কিন্তু আবহাওয়া জনিত কারণে সে ব্যবসাটিও গরমের মৌসুম ছাড়া চলে না। তাই সিদ্ধান্ত নিলেন চা বিক্রি করবেন। এলাকার বিভিন্ন ব্যাক্তির হাতে পায়ে ধরে ১০ হাজার টাকা কর্জ করে চা বিক্রির জন্য উপকরন যোগাড় করতে শুরু করেন। ভ্রাম্যমান ভাবে বিক্রির জন্য একটি ভ্যান, একটি গ্যাসের চুলা ও সিলেন্ডার, কেটলি, গøাস সহ অনেক কিছুই কিনেছেন তিনি। দুই দিন বসেছিলেন সাতক্ষীরা শহরের আব্দুর রাজ্জাক পার্কেও। কিন্তু দুই দিন বসার পর পৌরসভার লোক পরিচয়ে দুই ব্যক্তি এসে তাকে উঠিয়ে দেয়। তিনি গিয়েছিলেন পৌর মেয়রের কাছে পার্কে বসে চা বিক্রি করে যেন নিজে ও মেয়ের ভরণপোষন করতে পরেন। কিন্তু মানা করে দিয়েছেন পৌর মেয়র। তিনি হাসিনাকে বলেন তুমি ওখানে চা বিক্রি করতে বসলে আরও মানুষও পার্কে বেচা কিনি করতে বসবে। তাই পার্কে বসা যাবে না। এখন অভাবের সংসারে এত টাকা ধার করে দোকান নিয়ে বসতে না পারায় হতাশায় ভুগছেন তিনি। মেয়েটি বড় হচ্ছে। তার পড়াশুনার খরচও বাড়ছে। সব ভেবে তিনি খেই হারিয়ে ফেলেছেন।
হাসিনা খাতুন জানান, ‘আমিতো কার কাছে হাত পাততে চাই না। নিজের উপার্জন বৈধ পন্থায় নিজেই করতে চাই। কিন্তু সে জন্য আমাকে সুযোগ করে দেয়া হোক। আমার মেয়েটাকে মানুষের মত মানুষ করতে চাই।’
শুধুমাত্র চা বিক্রির জন্য বসার জায়গার অভাবে মেধাবী মেয়ে সহ নিজের খরচ মেটাতে পারছেন না হাসিনা। সমাজের নারীর ক্ষমতায়নের নামে মুখে ধোয়া তোলা ব্যক্তিরা চোখে পর্দা লাগিয়ে না চলে হাসিনা খাতুনের দিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিলে তিনি যেমন সন্তানসহ নিজের ভরণপোষনের ব্যবস্থা করতে পারবেন। তেমনই মেধাবী ছাত্রী মুমতারিনও মানুষের মত মানুষ হলে উপকৃত হবে বাংলাদেশ।
মুমতারিন ও তার মাকে সহায়তা করতে চাইলে যোগাযোগ করতে পারেন ০১৭৫২৯৮৫২৭০।