
চঞ্চল চৌধুরী:
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ঘাড়ে চেপে যখন অবাধে অসামাজিক কার্যকলাপ চলতে থাকে, তখন আমরা অধিকাংশ মানুষই শুধু নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করি। এটি এখন আমাদের ব্রেইনের ওপর বিষফোঁড়াসম সমস্যায় পরিনত হয়েছে।
আমরা বাক স্বাধীনতার কথা বলে মুখে ফেনা তুলে ফেলি, অথচ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অধিকাংশ মানুষ স্বেচ্ছাচারীর মত যা খুশী করছে,যা ইচ্ছে বলছে। প্রশ্নটা এখানেই..
আধুনিকতা আর সম অধিকারের ঝান্ডা তুলে,অধিকাংশ ক্ষেত্রে আপনি কি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে অপব্যবহার করছেন না?? আপনার অরক্ষিত এই কার্যকলাপে, সমাজ বা নতুন প্রজন্ম কতটুকু প্রভাবিত হচ্ছে,সেটুকু ভাবার অবকাশ কি আপনার আছে?? আপনি কি সত্যিই সমাজের জন্য মঙ্গলজনক কিছু করছেন???
ছোটবেলায় পড়তাম বিজ্ঞান “আশীর্বাদ নাকি অভিশাপ??” বিজ্ঞান বা প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহারই এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম্যের সঠিক ব্যবহারই হয়তো জাতির জন্য ভালো ভূমিকা রাখতে পারতো,কিছু কিছু ক্ষেত্রে হয়তো রাখেও। কঠিন সত্য এটাই, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বর্তমানে যতটা না সামাজিক কর্মক্ষেত্র, তার চেয়ে অনেক গুন বেশী ব্যক্তিগত বানিজ্য ক্ষেত্রে পরিনত হয়েছে।
ফেসবুকে “REEL” নামক একটি বিষয় আছে। এখানে অধিকাংশই যে কতটা অশ্লীল,ভাবতেও অবাক লাগে। আমি ব্যক্তিগতভাবে এসব অশ্লীলতার বিরুদ্ধচারন করি। সেন্সর বিহীন এসকল অশ্লীল কার্যকলাপ কে বন্ধ করবে?? এখানে রাষ্ট্রের যথাযথ কর্তৃপক্ষের বা আইন শৃংখলা বাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ এবং দায়িত্বশীল ভূমিকা কি আমরা আশা করতে পারিনা? সেই সাথে আপনার বা আমার অসচেতনতা অথবা সমর্থনের ভেতর দিয়ে তথাকথিত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জন্ম নিচ্ছে বিতর্কিত কিছু ভাইরাল ব্যক্তি। সে যখন আপনার কাছে পিতৃত্ব বা মাতৃত্ব দাবী করবেন, ,আপনি কি অস্বীকার করতে পারবেন???? পারবেন না। কারণ আপনার বালখিল্য আচরন, উদাসীনতা আর সস্তা বিনোদন প্রিয়তায় আপনি সেই সন্তানকে জন্ম দিয়েছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
আপনার অরক্ষিত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবহারই এর জন্য দায়ী। আপনি কি আপনার সন্তানের কথা ভাবেন,ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মঙ্গলের কথা চিন্তা করেন?? যদি করেন, তাহলে অবশ্যই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারেও আপনাকেও অনেক দায়িত্বশীল হতে হবে।
তথাকথিত কিছু অসৎ রাজনীতিবিদদের কারনে যেমন রাজনীতি কলুষিত, তেমনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপনার বা আমার সমর্থনে গজিয়ে ওঠা ভাইরাল ব্যক্তিদের কারনে সংস্কৃতি কলুষিত হচ্ছে। এর জন্য অন্য কেও দায়ী নয়, দায়ী আপনি বা আমি, দায়ী আমাদের নিম্ন মানসিকতা। আপনি কাকে অনুসরন করবেন বা সমর্থন দেবেন,বা কে হবে এই দেশে আপনার রাজনৈতিক বা সাংস্কৃতিক আদর্শ, চুড়ান্ত ভাবনার এই সময় টুকুও বোধ করি পেরিয়ে যাচ্ছে। আমাদের ক্ষেত্রে বিষয়গুলো অবজ্ঞা করার মত হলেও, আমাদের সন্তানেরা ভবিষ্যতে অনুসরন বা শ্রদ্ধা করার মত কাউকে পাবেনা।
পরিচিত হতে হবে আপনার রুচিতে জন্ম দেয়া কোন ভাইরাল বিনোদন ব্যক্তির উত্তরসুরী হিসেবে। কারন আপনি বা আমি ঠিক বেঠিক বা উচিত অনুচিতের পার্থক্য ভুলে সস্তা বিনোদন প্রিয় জাতিতে পরিনত হয়ে গেছি। বুঝতে পারছেন কি সামনে কতটা অন্ধকার???? চুপ করে থাকা রাজনীতিক, সংস্কৃতিবান এবং রুচিশীলদেরকে বলছি, প্রস্তুত থাকুন, আপনাকে যে কোন উপায়ে টেনে হিঁচরে নীচে নামানো হবে, তাই এখনো সময় আছে, মুখ খুলুন, প্রতিবাদ করুন।
এই ব্যর্থতা প্রথমত: রাষ্ট্রের, দ্বিতীয়ত: তথাকথিত সংস্কৃতি কর্মীদের.. যাদের নৈতিক দায়িত্ব ছিল জাতিকে সঠিক পথ দেখানো, সঠিক গন্তব্যে পৌঁছে দেয়া।
লেখক: অভিনেতা।