নিজস্ব প্রতিবেদক: সাতক্ষীরা পৌরসভার ৫ কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ না করে ভুয়া বিল ভাউচার জমা দিয়ে টাকা উত্তোলনের অভিযোগের তদন্ত আজ। গত দশ মাসেও তদন্ত সম্পন্ন না হওয়ায় জনমনে ক্ষোভের সঞ্চার লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তদন্ত সম্পন্ন না হওয়ার পেছনে প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্তা ব্যক্তির হস্তক্ষেপের অভিযোগ আছে। সীমাহীন এই দুর্নীতির অকাট্য দালিলিক প্রমাণ থাকলেও অভিযুক্তরা পার পেয়ে যাওয়ায় জনমনে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। অভিযুক্ত ৫ কাউন্সিলর হলেন সাতক্ষীরা পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ডের কাজী ফিরোজ হাসান, ২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সৈয়দ মাহমুদ পাপা, ৮নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. শফিকুল আলম বাবু, ৯নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শেখ শফিক-উদ-দৌলা সাগর এবং ৪, ৫ ও ৬ নং সংরক্ষিত ওয়ার্ডের অনিমা রানী মন্ডল।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, সাতক্ষীরা পৌরসভার সাবেক মেয়র পৌর মেয়র তাজকিন আহমেদ চিশতি বাদি হয়ে গত ২০ ফেব্রæয়ারি স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর অভিযোগ করেন। অভিযোগে উল্লেখ ছিল, সাতক্ষীরা পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর কাজী ফিরোজ হাসান পৌরসভার নানা প্রকল্পের দুর্নীতি ও অনিয়ম উল্লেখ্য করে গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণা-বেক্ষণ কর্মসূচি প্রকল্পে কোন কাজ না করেই ভুয়া টি.আর বিল-ভাউচার দাখিল করে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় থেকে নিজ নামে দীর্ঘ ৬ বছর ধরে লক্ষ লক্ষ টাকা উত্তোলণ করে আত্মসাৎ করেছেন। এছাড়া, সুলতানপুর শাহী মসজিদ সংস্কার ও সোলার প্যানেল স্থাপন, দক্ষিণ সুলতানপুর বাইতুল্লাহ জামে মসজিদ সংস্কার ও সোলার প্যানেল স্থাপন, সুলতানপুর আব্দুর রশিদের বাড়ির সামনে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তার সংস্কার এবং পার্শ্ববর্তী দরিদ্রদের মধ্যে সোলার প্যানেল স্থাপন, সুলতানপুর কাজীপাড়া জামে মসজিদ সংস্কার ও সোলার প্যানেল স্থাপন, সুলতানপুর বড় জামে মসজিদের সোলার প্যানেল স্থাপন, সুলতানপুর জামে মসজিদের সোলার হোম সিস্টেম প্রকল্প, সুলতানপুর সাহাপাড়া শাহীন ও আহেদার মিস্ত্রীর বাড়ির সামনে ৩ রাস্তার মুখে সোলার সোলার হোম সিস্টেম প্রকল্প, সুলতানপুর ক্লাবের রাস্তার ধারে সোলার সোলার হোম সিস্টেম প্রকল্প, সুলতানপুর ক্লাব মাঠ সংলগ্ন স্থানে সোলার সোলার হোম সিস্টেম প্রকল্পসহ বিভিন্ন প্রকল্পের নগদ টাকা নিজ নামে উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেছেন। ঠিকাদারদের জিম্মি করে সমস্যার সৃষ্টি করে বহির্ভূতভাবে টাকা আদায় করে পৌরসভার সুনাম ক্ষুন্ন করার অভিযোগসহ রাস্তা সংস্কার কাজে প্রভাব বিস্তার, টেন্ডার ও ইজারা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা, মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অনুমোদন ছাড়াই মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র পরিচালনা এবং গ্রাম্য শালিসে সাধারণ নাগরিকদের হয়রানী ও নগদ অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। সাতক্ষীরা পৌরসভার ২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সৈয়দ মাহমুদ পাপার বিরুদ্ধেও রয়েছে একই অভিযোগ। তারমধ্যে প্রধান ডাকঘরের সামনে ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তার সংস্কার, মুন্সিপাড়ায় বজলুর রহমানের বাড়ির সামনে সোলার হোম সিস্টেম প্রকল্প, মুন্সিপাড়ায় মেহেরুন্নেছার বাড়ির সামনে সোলার হোম সিস্টেম প্রকল্পসহ বিভিন্ন প্রকল্পের নগদ টাকা নিজ নামে উত্তোলন পূর্বক আত্মসাৎ করার অভিযোগ করা হয়েছে। এছাড়া, আইন বহির্ভূতভাবে নিজ নামে ৬টি এবং আত্মীয় স্বজনদের নামে বেনামে একাধিক দোকান বরাদ্দ। নিজ ভাগ্নে তুহিনকে দিয়ে জিলানী এন্টারপ্রাইজ নামে ঠিকাদারদের সহিত যুক্ত হয়ে পৌরসভার ঠিকাদারের কাজ নিয়ন্ত্রণ। পৌরসভার ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট স্থাপনের কাজটি ওই প্রতিষ্ঠানে দেয়া হয়। এতে অনিয়ম দুর্নীতির প্রামাণ পাওয়া গেছে এবং গ্রাম্য শালিসে সাধারণ নাগরিকদের হয়রানী ও নগদ অর্থ আত্মসাতেরর অভিযোগ রয়েছে। সাতক্ষীরা পৌর সভার ৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শফিকুল আলম বাবুর বিরুদ্ধেও একই ধরনের অভিযোগ উল্লেখ করা হয়েছে। তারমধ্যে রাধানগর খাল সংলগ্ন বর্ষায় ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা সংস্কার, কামালনগর দারুসসালাম জামে মসজিদের সোলার হোম সিস্টে প্রকল্প, কামালনগর দক্ষিণ পাড়ার সোলার হোম সিস্টেম প্রকল্প, কামালনগর আহলে হাদিস মসজিদের পিছনের রাস্তার সামনে সোলার হোম সিস্টেম প্রকল্প, কামালনগর গোরস্থানের সামনে হতে বৌ বাজার পর্যন্ত বর্ষায় ক্ষতিগ্রস্থ ড্রেন সংস্কার প্রকল্প এবং কামালনগর হাফিজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানা সংস্কারসহ গ্রাম্য শালিসে সাধারণ নাগরিকদের হয়রানী ও নগদ অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। সাতক্ষীরা পৌরসভার ৪, ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত কাউন্সিলর অনিমা রানী মন্ডলের বিরুদ্ধেও রয়েছে একই অভিযোগ। তারমধ্যে সুলতানপুর বড় বাজার জামিয়া কোরআনিয়া মাদরাসার সংস্কার ও সোলার প্যানেল স্থাপন, টাবরারডাঙ্গী টি.কে বাইতুল্লা জামে মসজিদের সোলার স্থাপন, ইসলামপুর-৩ এ রাস্তায় সোলার হোম সিস্টেম প্রকল্প, টাবরাডাঙ্গী কালি মন্দিরে সোলার হোম সিস্টেম প্রকল্প, সুলতানপুর পোলস্টার স্কুলের সোলার হোম সিস্টেম প্রকল্পসহ গ্রাম্য শালিসে সাধারণ নাগরিকদের হয়রানী ও নগদ অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। গুরুতর এ অভিযোগ ধামাচাপা দিতে আত্মশাতকৃত মোটা অংকের অর্থ এক আমলার থলেতে ঢালা হয়েছে। ঐ আমলাই দুর্নীতি ধামা চাপা দেবার দায়িত্ব নিয়েছে। সাতক্ষীরা পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শেখ শফিক-উদ-দৌলা সাগরের বিরুদ্ধেও একই অভিযোগ করা হয়েছে। তারমধ্যে পৌরসভার প্রাণসায়ের খালের পশ্চিম পার্শ্বের বর্ষায় ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা সংস্কার, চৌরঙ্গী মোড়ে উত্তর পার্শ্বে বর্ষায় ক্ষতিগ্রস্ত ড্রেন সংস্কার ও রাস্তা সংস্কার প্রকল্প, খুলনা রোডের পশ্চিম এলাকায় মাস্টারের বাড়ির সামনে ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা সংস্কার প্রকল্প, রসুলপুর হায়দারের বাড়ির সামনে রাস্তায় সোলার হোম সিস্টেম প্রকল্প, মেহেদীবাগ মসজিদের সামনে সোলার হোম সিস্টেম প্রকল্পসহ গ্রাম্য শালিসে সাধারণ নাগরিকদের হয়রানী ও নগদ অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে সাতক্ষীরা পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র কাজী ফিরোজ হাসান বলেন, ৫ কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে অভিযোগটি ভিত্তিহীন। তাজকিন আহমেদ চিশতির বিরুদ্ধে অভিযোগ করায় তিনিও কাউন্সিলরদের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ করেন। এ বিষয়ে তাজকিন আহমেদ চিশতি বলেন, সাতক্ষীরা পৌরসভার কাউন্সিলর সৈয়দ মাহমুদ পাপা বিভিন্ন প্রভাবশালী ব্যক্তিদ্বয়ের দ্বারা প্রভাব খাটিয়ে যাচ্ছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় সরকারের উপপরিচালক মাশরুবা ফেরদৌসের মোবাইলে একাধীকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ না করায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।