পৃথিবীর ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য খুবই প্রয়োজন বা গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক পরিবেশ। প্রাকৃতিক পরিবেশ বলতে আমরা বুঝি আমরা যে গ্রহে বাস করি তার চারপাশে যা কিছু আছে তা সব সুতরাং বনভূমি জীবজন্ত এবং মানুষ নিয়েই আমাদের প্রকৃতি। বন ভূমি ছাড়া বন্য প্রাণী আবার বন্য প্রাণী ছাড়া মানুষ এবং মানুষ বন ভূমি ওজীবজন্ত ছাড়া বাঁচতে পারে না। সমস্ত পৃথিবীতে এই জন্যে প্রাকৃতিক নিয়মে প্রকৃতি তার ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ধরনের বনাঞ্চল ও অদ্ভুত জীব জন্তুর সৃষ্টি হয়েছে। যেমন ভারতে, অস্ট্রোলিয়াতে এবং বিশেষ করে আফ্রিকান দেশ গুলিতে অনেক ধরণের অরন্য ও ভয়ংকর জীব জন্তু আছে। মোর্দ্দা কথা হচ্ছে আমি আমাদের সোনার বাংলাদেশ এর একেবারে দক্ষিণ অঞ্চলে সাগর সংলগ্ন সুন্দরবনের কথায় আসছি যাহা পৃথিবীতে একমাত্র বনাঞ্চল। সৃষ্টিকর্তার এক অপূর্ব সৃষ্টি চারদিকে বড় বড় নদী এবং ফাঁকে ফাঁকে বনাঞ্চল যাহা স্বয়ংক্রিয় ভাবে সৃষ্টি হয়েছে। এই সুন্দরবন সম্পর্কে কিছু বলার দরকার। সুন্দরবন সম্পর্কে অনেক গবেষক অনেক লেখক অনেক প্রাণি বিজ্ঞানীরা অনেক কিছুই লিখেছেন বা বলেছেন। সুন্দরবন এখন অনেকটা ধ্বংসের দার প্রান্তে কিন্তু রক্ষনাবেক্ষণের জন্যে কোন কোন ধরণের পদক্ষেপ প্রয়োজন বা বাঙ্গালী জণগনের কোন দায়িত্ব আছে কি না তেমন কথা লেখার ভিতরে পাওয়া যায় না। কেউ ভাবে না সুন্দরবন আমাদের জন্য কি করছে? আমরা সবাই জানি বাংলাদেশ প্রাকৃতিক দুর্যোগের দেশ। সারা বছর কোন না কোন দুর্যোগের মোকাবেলা করতে হচ্ছে। কখনও ঘূর্ণিঝড় যাহা ভয়ংকর রূপ নেয়, আবার কখনও জলোচ্ছাস যাহা বাংলাদেশের দক্ষিণ অঞ্চলকে ধ্বংসের দার প্রান্তে নিয়ে যায় আবার প্রাকৃতিক দুর্যোগ যাহা দক্ষিণ অঞ্চলের ষোল জেলার জনগণকে এক ধরনের মহাবিপদের মধ্যে ফেলে দেয় কিন্তু এই সুন্দরবনের কারনে আমরা অনেকটা রক্ষা পাই। সিডর, আইলা, নারগীস, আম্ফান তাদের মধ্যে উল্লেখ যোগ্য। একবার ভাবুন তো সুন্দরবন না থাকলে দক্ষিণ অঞ্চলের জনগণ এর ভাগ্যে কি ঘটতো। হাজার হাজার একর জমি ধ্বংস হয়ে সাগর গর্ভে বিলীন হয়ে যেত এবং বহু মানুষ মারা যেত, সরকার এবং তার বিভিন্ন প্রশাসন মহাবিপর্যের সংকেত পাওয়া মাত্রই যেভাবে জনগণ এবং তাদের মালামালের নিরাপত্তার জন্য সকল ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করে তারপর ও অনেক বিপর্যয় ঘটে। এখন সকলের দায়িত্ব এই প্রাকৃতিক এই মহাবিপদের হাত থেকে বাঁচানো, তা না হলে আমাদেরকে অনেক খেসারত দিতে হবে। এক দিকে নদীভাঙ্গন সমূদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, বৈশ্বিক উচ্চতা, জলবায়ুর পরিবর্তন এবং প্রচন্ড ঘূর্ণিঝড়ের কারণে সুন্দর বন প্রতি নিয়ত ধ্বংসের দার প্রান্তে দাড়িয়ে, আমাদেরকে রক্ষা করার জন্যে এখনো উজ্জীবিত থাকার চেষ্টা করছে কিন্তু আমরা অতি নিষ্ঠুরভাবে সুন্দরবনকে ধ্বংস করতে চলেছি, সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগার যাহা পৃথিবীতে বিরল, সেটাও আজ ধ্বংস হতে চলেছে। আমাদের সুন্দরবনে হাজার হাজার হরিণসহ অন্যান্য প্রজাতির জীবজন্তুর গুলোও প্রায় বিলুপ্তির পথে। অনেক কারণই তো বলা হলো। সুন্দরবন ধ্বংসের পিছনে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ আছে। এক ধরণের স্বার্থন্বেষী মহল প্রতি নিয়ত অতি গোপনে সুন্দরবন থেকে বড় বড় গাছ গুলি রাতের আধারে বিভিন্ন যোগসাজশে কেটে নিয়ে যাচ্ছে। বন ভূমিকে একবারে ধ্বংসের দ্বারাপ্রান্তে নিয়ে যাচ্ছে। এইটাকে যদি প্রতিরোধ না করা যায় আমরা একদিন কোথায় যেয়ে দাড়াবো, ভেবেছেন কি? একমাত্র সুন্দরবনই শুধু বাংলাদেশের দক্ষিণ অঞ্চলকে নয় যারা বাংলাদেশকে মহা বিপর্যায়ের হাত থেকে রক্ষা করছে। সুন্দরবনের কারণে আমরা প্রচুর পরিমান অক্সিজেন পাই এবং গাছ আমাদের প্রাকৃতিক পরিবেশকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য বাতাস থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাস শোষন করে। সুন্দরবনের কারণেই বিভিন্ন প্রজাতির হরিণ ও রয়েল বেঙ্গল টাইগার সুরক্ষিত থাকে। প্রাণী জগৎ ও রক্ষার দায়িত্ব আমাদের বনভূমি উজাড় করার কারণে আজ এই অদ্ভুত ও দূর্লভ প্রাণী গুলি ধ্বংসের দ্বারা প্রান্তে পৌঁছে গেছে। প্রায় একই চিত্র আমরা দেখি হরিণ শিকার করে আর্থিক ভাবে লাভবান হচ্ছে দেশের কিছু অবৈধ শিকারি কি পরিমান ক্ষতি হচ্ছে তাহা কি আমরা একবার ও ভেবেছি? আজকের ভাবনার সময় এসেছে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। অন্যদিকে জলদস্যু, ভূমিদস্যু, বনদস্যু সুন্দরবনকে ধ্বংস করছে, তাদেরকে চিহ্নিত করতে হবে, তাদের আস্তানা বনের ভিতর কোথায় আছে খুঁজে বের করতে হরে। সুন্দরবনের ভিতরে এবং দক্ষিণ বঙ্গোপস্গরে যে সমস্ত সরকারী কর্মকর্তা কর্মচারীরা দায়িত্ব পালন করছেন তাদের কাছে আমাদের আকুল আবেদন শুধুমাত্র সুন্দরবনকে রক্ষার জন্য যে দায়িত্ব পালন করা উচিত সেইটাই করুন। আপনারা জানেন, সুন্দরবন যদি না থাকে বাংলাদেশর দক্ষিণ অঞ্চলও একদিন ধ্বংস হয়ে যাবে। বিশেষ করে কোস্টগার্ড এবং নৌবাহিনীর যে সমস্ত সদস্যরা বঙ্গোপসাগর ও সুন্দরবনকে রক্ষার জন্য যে দায়িত্ব পালন করছেন তাহা যদি আরও বেগবান হয়, আমার মনে হয় বনদস্যুদের কে ধ্বংস করা খুব কঠিন হবে না। সুন্দরবন আবারো স্বরূপে ফিরে আসতে পারবে তাতে কোন সন্দেহ নাই। এই সুন্দরবন রক্ষার দায়িত্ব শুধু সরকারের নয়, কোস্টগার্ড বা নৌ বাহিনীর নয়। সকল সংস্থা, সুন্দরবণ অঞ্চলে বসবাসকারী জনগনের এবং সমগ্র বাংলাদেশের মানুষের শুধুমাত্র আমাদের নিজেদের প্রাকৃতির দুর্যোগের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য, সুন্দরবনের দূর্লভ বন্য প্রাণীর নিরাপত্তার জন্য সকল শ্রেণির সচেতন জনগনের নৈতিক দায়িত্ব। এখর সময় এসেছে সবাইকে সরকারের সহযোগিতায় ঐক্যবদ্ধভাবে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করে আমাদের একমাত্র সুন্দরবনকে বাঁচিয়ে রাখা। যে সমস্ত বনদস্যুরা সুন্দরবনকে ধ্বংস করছেন তাদের কাছে ও আমাদের একমাত্র আরজি, আপনার নিজের জীবনের নিরাপত্তার জন্য, নিজের পরিবারের জন্য এবং দেশ ও দশের কল্যানের জন্য নিজের হীনস্বার্থ চরিতার্থ করে সুন্দরবনকে বাঁচান, সকলেই মিলে দেশকে বাঁচাই এবং আমরাও বাঁচি।
লেখক:
সহকারী অধ্যাপক
বঙ্গবন্ধু মহিলা কলেজ
কলারোয়া, সাতক্ষীরা।