এসএম আতিয়ার রহমান, মণিরামপুর (যশোর): যশোরের মনিরামপুর উপজেলার ফসলের মাঠ সরিষা ফুলের গন্ধে মুখরিত ঘন কুয়াশার চাঁদরে মোড়ানো প্রতিটি মাঠজুড়ে কেবল চোখে পড়েছে সরিষার হলুদ ফুলের সমারোহ। ফসলের মাঠ এখন রং বেরং এর প্রজাপতি ও মৌমাছির গুনগুন শব্দে আকৃষ্ট করছে সবাইকে। বিকাল হলে গ্রাম এবং শহরের ছেলে মেয়েরা সরিষা ক্ষেতে জমির আইল এর উপর দিয়ে পায়ে হেটে ঘুরে ঘুরে এ সৌন্দার্য উপভোগ করছেন এবং প্রিয়জনকে সাথে নিয়ে মোবাইলে ছবি তুলছেন এবং ফেসবুকে আনন্দের সাথে ছাড়ছেন। শীতের শীতল বাতাসে মণিরামপুরের উপজেলার মাঠগুলো ছেয়ে গেছে সরিষার হলুদ ফুলে। কৃষকের স্বপ্ন দুলছে সরিষার মৌ মৌ গন্ধে। বিভিন্ন মাঠে সরিষা ফুলের মৌ মৌ গন্ধ আর বিস্তৃর্ণ মাঠজুড়ে চোখে পড়বে হলুদ আর হলুদ রঙের সমারোহ। মৌমাছির আনাগোনা আর সরিষা ফুলের দৃষ্টিনন্দন দৃশ্য যেন প্রাণ জুড়ে যায়। ভোজ্য তেলের মূল্য ও চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় কৃষকরা সরিষা চাষে ঝুঁকে পড়েছেন। এ ফসলে সেচ ও সার কম লাগে ফলে সরিষা চাষে খরচ কম এবং লাভ বেশি হয়। এছাড়াও ফুল ও পাতা ঝরে জৈব সার তৈরি করে জমির উর্বরতা বৃদ্ধি পায়। তাই অনেক কৃষক সরিষা চাষে ঝুকে পড়েছেন। এবার আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। উপজেলা কৃষি বিভাগ জানায়,জমিতে দু একটি চাষ দিয়েই বা বিনা চাষেই জমিতে ছিটিয়ে সরিষা বীজ বপণ করা যায়। সরিষা আবাদে সেচ,সার ও কীটনাশক কম লাগে এবং কম খরচে সরিষা উৎপাদন হয়ে থাকে। বর্তমানে মাঠগুলোতে সরিষার ফুল ফুটেছে। সরিষা কেটে অনেক কৃষক বোরো ধান চাষ করবেন আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে সরিষার ভালো ফলন হবে। সরেজমিন উপজেলার স্বরূপদাদ, খানপুর, রোহিতা, বিজয়রামপুর, রাজগঞ্জ, মাছনা, জয়পুর, ভান্ডারখোলা বিস্তীর্ণ মাঠগুলো ঘুরে দেখা গেছে প্রতিটা মাঠে কৃষকেরা সরিষার চাষাবাদ করেছেন। ফুলে ফুলে ভরে গেছে মাঠ কৃষকের মনে বইছে আনন্দের জোয়ার। উপজেলার স্বরূপদাহ গ্রামের হান্নান সরকার, কবির ও রবিউল সরিষা লাগিয়েছেন এবং তারা সাফল্য অর্জনের আশা করছেন। তারা জানান, ইউনিয়ন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা রুবিনা ও হাসিনা এর পরামর্শে এবং কৃষি বিভাগের প্রানোদনায় গত বছর থেকে এবার আবাদযোগ্য জমিতে সরিষা চাষ করে প্রতি মৌসুমে অন্যান্য ফসল আবাদের তুলনায় অতিরিক্ত লাভ হবে আশা করছেন। জমিতে প্রণোদনার বীজ পেয়ে সরিষা চাষ করেছেন তারা। সরিষা চাষি রোহিতা গ্রামের ইউনুছ আলী বলেন, কৃষি বিভাগের সরকারি প্রণোদনার ভালো বীজ পেয়ে সঠিক সময় বীজ রোপণ, সঠিকভাবে রোগ নির্ণয়, রোগ নিরাময়ের জন্য সঠিক মাত্রায় কীটনাশকসহ ফুলফল বৃদ্ধির জন্য ভিটামিন ও বিভিন্ন প্রকার সার প্রয়োগ করতে হবে তাহলে ভালো ফলন পাওয়া যাবে, তারা আরও বলেন ১ বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করতে বর্তমানে খরচ হয় অন্তত দেড় হাজার টাকা। ভালো ফলন হলে বিঘা প্রতি ৬-৮ মণ সরিষা পাওয়া যায়। প্রতিমন সরিষার বর্তমান বাজারমূল্য ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা। অন্যান্য ফসল চাষ করে প্রতি বিঘায় যে পরিমাণ লাভ হয় তার চেয়ে ওই পরিমাণ জমিতে সরিষা চাষ করে দ্বিগুণ লাভ পাওয়া যায়। এছাড়াও সরিষা চাষ করলে ফুল ও পাতা ঝড়ে জৈব সার তৈরি হয়ে জমির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি করে। সে কারণে জমিতে পরবর্তীতে রাসায়নিক সারের প্রয়োজন কম হয় এবং ধানের ফলনও ভালো হয়। সরিষা চাষে একদিকে যেমন বেশি লাভ হয় অন্যদিকে জমির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি পায়। সেদিক বিবেচনা করে সাধারণ কৃষকরাও সরিষা চাষের দিকে ঝুঁকে পড়েছেন। কৃষকরা আরো জানান, কৃষি প্রণোদনার অংশ হিসেবে উপজেলা কৃষি বিভাগ থেকে অনেকে সরিষা চাষের জন্য সার ও বীজ বিনামূল্যে সহায়তা পেয়েছেন। জমিতে বীজ বপন করে সরিষা ভালো হয়েছে। অন্যান্য ফসলের চেয়ে সরিষা চাষাবাদে খরচ কম। উৎপাদন ভালো হবে বলে তারা আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। উপজেলা কৃষি অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের পরামর্শ ও সরকারি সার্বিক সহযোগিতায় এবার সাফল্য অর্জন করা সম্ভব হবে বলে তারা আশা করছেন। উপজেলা কৃষি অফিসার ঋতুরাজ সরকার বলেন, মনিরামপুর উপজেলা একটি কৃষি সমৃদ্ধ উপজেলা, এই উপজেলায় বিভিন্ন ফসল চাষ হয়ে থাকে। এখানকার মাটি ও আবহাওয়া অনুকূল হওয়ায় এবার সরিষার আবাদ অনেক ভালো হয়েছে।চলতি মৌসুমে উপজেলায় সরিষার আবাদের লক্ষ্যমাত্রা মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩হাজার ৪শত ৫০ হেক্টর জমি। সরিষা চাষে কৃষকদের এ বছর ৫৫০০জনকে বারী সরিষা-১৪,১৭,১৮,বিনা-৯ জাতের সরিষা বীজ এবং সার প্রাণোদনা দেওয়াতে বিগত বছরের চেয়ে এবারে অনেক বেশি জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে।এ জাতের সরিষার ফলন বেশি এবং জীবনকাল কম। সরিষা কেটে কৃষকরা বোরোধানও উৎপাদন করতে পারবেন বলে আমি মনে করছি।