এসএম আতিয়ার রহমান, মনিরামপুর যশোর থেকে: যশোরের মনিরামপুর উপজেলা মনিরামপুর রাজগঞ্জ নেংগুড়াহাটে অঞ্চলে প্রতিবছরের শীত মৌসুমে সারা দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি খেজুরের গুড় বেচাকেনা হয়। যশোর মনিরামপুর রাজগঞ্জ হাটে, মৌসুমের প্রায় পুরোটা সময় হাজারো ক্রেতা-বিক্রেতার ভিড়ে। জমজমাট ভাবে বেচাকেনা হয় খেজুরের গুড়, রাজগঞ্জ বাজার ও মনিরামপুর জমে উঠেছে। বৃহস্পতিবার ও সোমবার রাজগঞ্জে বেচাকেনা হয় এবং শনিবার ও মঙ্গলবার মনিরামপুরে বিশাল বেচাকেনা হয়। দেশের সবচেয়ে বড় খেজুরের গুড়ের হাট রাজগঞ্জ, গুড় কিনতে বিভিন্ন জেলা থেকে আসছেন ব্যাপারীরা। বেচাকেনার জন্য এই হাটের ঐতিহ্য কয়েক শত বছরের হাট। চালুয়াহাটি ইউনিয়নের তেরমোহনী, খোরদো-আঞ্চলিক সড়ক ঘেঁষে স্থানীয় রাজগঞ্জ পাল বাড়ির পাশে মাঠে এ হাট বসে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চলে বেচাকেনা। সপ্তাহে দুইদিন সোমবার ও বৃহস্পতিবার বসে বিশাল খেজুরের গুড়ের হাট প্রতি সপ্তাহে অনেক টাকার গুড় কেনাবেচা হয়। এখানে মাটির কলসি হাড়ি বা ভাড়ের আকার ও অজন ভেদে দাম ওঠানামা করে। এক ভাড় গুড় ৩০০০ হাজার থেকে ৩ হাজার ৫০০শত টাকা বিক্রি হয়,স্বাদে ও গন্ধে এখানকার গুড় অতুলনীয়। অন্যান্য বারের তুলনায় এখানকার মনিরামপুরের খেজুরের গুড়ের চাহিদা বেশি থাকায় দামও বাড়ছে। সম্প্রতি এ হাটে গিয়ে দেখা যায়, হাটজুড়ে সাজানো গুড়ভর্তি মাটির ভাড় ও কলসি ছোট বড় পাত্রে নলেন পাটালি। ক্রেতা-বিক্রেতারা তা দাঁড়িয়ে দেখছেন, দরদাম ঠিক হলে ওজন করে ভর্তি করে নিচ্ছে গাড়িতে করে। আবার কেউ কেউ নিজের বাড়ি বা আত্মীয়ের স্বজনের বাড়ি পাঠানোর জন্য কিনছেন এই গুড়। দুইধারে বসে গাছিরা বড় পাত্রে করে তাদের বাড়িতে তৈরি পাটালি বিক্রি করছেন। পাটালির দোকান পার হয়ে ভেতরে যত যাওয়া যায় বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে ততই চোখে পড়ে সারি সারি সাজানো গুড়ের ভাড়। হাটের একাধিক স্থানে দাঁড়িপাল্লায় গুড় মেপে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন ক্রেতারা। রাজগঞ্জের গুড়ের হাটে গুড় বিক্রি করতে আসা গৌরীপুর গ্রামের গাছি আতিয়ার রহমান, বজলুর রহমান বলেন, গত বিশ বছর ধরে রাজগঞ্জের এই হাটে গুড় বিক্রয় করতে আসি, আমাদের কাছ থেকে কিনে দেশের বিভিন্ন জাগায় থেকে ব্যাপারীরা। ভাড় প্রতি গুড় ৩০০০হাজার থেকে ৩৫০০শত টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। ভাড়ের দাম বেড়েছে। একারণে অনেক সময় কম লাভ হয়। স্থানীয়রা বলেন, প্রতি বছর শীত মৌসুমে সারা দেশের মধ্যে। সবচেয়ে বেশি খেজুরের গুড় বেচাকেনা হয় রাজগঞ্জের ও মনিরামপুর বাজারে। মৌসুমের প্রায় পুরোটা সময় হাজারো ক্রেতা-বিক্রেতার ভিড়ে জমজমাট থাকে এই হাটে রাজগঞ্জের বাজার থেকে। দেশের বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ হয়। খেজুরের গুড় প্রতি হাটের দিন গড়ে ৫০০ থেকে ৭০০ভাড় খেজুরগুড় বিক্রি হয়। যার মূল্য প্রায় ৫ থেকে ৬ লক্ষ টাকা। তিনি দাবি করেন, রাজগঞ্জ বাজারে বিক্রি হওয়া বেশির ভাগ গুড়। কৃষকেরা নিজবাড়িতে যত্নেরসহ কারে তৈরি করেন, এতে চিনি বা কোনো রাসায়নিক নেই। কিছুটা খয়েরি রঙের হলেও এসব গুড় পুরোটাই খাঁটি। স্থানীয় পাইকারি ব্যবসায়ী রিপন হোসেন, মনা জানান, আগের তুলনায় গুড়ের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। ১৮কেজি ওজনের এক ভাড় গুড়ের দাম২৫০০- থেকে ৩০০০ টাকা থেকে তিন হাজার টাকা বিক্রি হচ্ছে। রামনগর থেকে গুড় কিনতে আসা আরশাদ আলী, আব্দুল জলিল, হাসেম আলী আই বালি মিজানুর রহমান জানান, দেশের অন্যান্য হাটে এখানকার চেয়ে কমদামে গুড় পাওয়া যায়। তবে সে সব গুড়ে চিনি মেশানো থাকে বলে প্রকৃত ব্যবসায়ীরা কেউ তা কেনেন না। বেশি দাম জেনেও ব্যাপারীরা ভালো গুড় কিনতে আগ্রহী হয়। মনিরামপুর উপজেলার চালুয়াহাটি ইউনিয়নের কৃষি উপসহকারী তথ্য মতে জানাযায়, ২ লাখ ৫০ হাজারের মতো খেজুরগাছ রয়েছে এই উপর জেলায়। নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত চলে গুড়ের মৌসুম প্রতি মৌসুমে গড়ে আড়াই হাজার মেট্রিক টন গুড় উৎপাদিত হয়। কৃষি উপসহকারী ফারহানা ফেরদৌস জানান, চলতি মৌসুমে প্রতিটি গাছ থেকে অন্তত ১০কেজি গুড় পাওয়া যায়। সে হিসাবে প্রতিবছর গড়ে ২হাজার ৫০০মেট্রিক টন গুড় উৎপাদিত হয়ে থাকে।