আতিয়ার রহমান, মণিরামপুর থেকে: জাহিদা বেগম (৬৮) স্বামীকে হারিয়েছেন ১২ বছর আগে। সেই থেকে চার ছেলে এক মেয়েকে নিয়ে কষ্টের জীবন তার। জাহিদার সেই কষ্টকে আরো অসহনীয় করে দিয়েছে ভয়াল আম্পান। গত ২০ মে মণিরামপুরের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় আম্পান কেড়ে নিয়েছে স্বামীহারা এই নারীর মাথা গোঁজার একমাত্র অবলম্বনটি। সেই থেকে গোয়ালঘরে গরুরসাথে রাতদিন কাটছে তার। দীর্ঘ সাতমাস মানবেতর জীবনযাপন করলেও তার সাহায্যে এগিয়ে আসেননি সমাজপতিসহ দায়িত্বশীল কেউ।
মঙ্গলবার (৮ ডিসেম্বর) দুপুরে সরেজমিন যশোরের মণিরামপুর উপজেলার জয়পুর কাঁচারিবাড়ি এলাকায় জাহিদা বেগমের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় গোয়ালঘরে ছেলে শফিকুল ইসলামকে নিয়ে দুপুরের খাবারের প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি। পাশে দাঁড়িয়ে বিছালী খাচ্ছে তার একমাত্র গাভীটি।
জাহিদা ওই এলাকার মৃত কামাল মোল্যার স্ত্রী। ১২ বছর আগে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান কামাল মোল্যা।
জাহিদা বেগম বলেন, স্বামী মরার পর চার ছেলে এক মেয়েকে নিয়ে কষ্টে দিন কেঁটেছে। মেয়েটাকে বাড়ির পাশে বিয়ে দিয়েছি। তিন ছেলে বিয়ে করে আলাদা থাকে। সেঝ ছেলে শফিকুল শ^াস কষ্টের রোগী। অসুস্থ হওয়ায় ঠিকমত কাজ করতে পারে না। ও আমার সাথে থাকে। ছেলেটাকে নিয়ে মাটির ঘরে থাকতাম। কয়মাস আগের বড় ঝড়ে ঘরটা পড়ে গেছে। টাকার অভাবে আর দাঁড় করাতে পারিনি। সেই থেকে গোয়াল ঘরে থাকি।
বৃদ্ধা বলেন, গোয়াল ঘরে খাট পেতে নিয়েছি। রাতে ছেলে আর আমি তাতে ঘুমাই। পাশে গরুটা থাকে। ওই ঘরেই থাকা খাওয়া সব। সকাল হলে গরু বের করে ঘর পরিস্কার করে ফেলি। কিন্তু দুর্গন্ধে থাকা যায় না। এই অবস্থায় বাড়িঘরে কোন আত্মীয়স্বজন আসতে পারেনা। সম্বল বলতে এই গাভীটা আছে।
“ঘর পড়ে গেলে মেম্বর ছবি আর ভোটার কার্ডের ফটোকপি নিলো। অনেকবার তার পিছনে হাঁটিছি; কাজে আসিনি,” বলেন জাহিদা।
স্থানীয় ইউপি সদস্য হোসেন আলী বলেন, বৃদ্ধা জাহিদা অসুস্থ এক ছেলেকে নিয়ে গোয়াল ঘরে থাকে জানি। আম্পানের পরে খতিগ্রস্থদের তালিকা করে ইউএনও অফিসে দেওয়া হয়েছে। বৃদ্ধার নাম সেই তালিকায় আছে। কিন্তু আজও ক্ষতিগ্রস্থরা কিছু পাইনি।
মণিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ জাকির হাসান বলেন, আপাতত বৃদ্ধাকে কিছু দেওয়ার সুযোগ নাই। আম্পানে ক্ষতিগ্রস্থদের জন্য কোন বরাদ্দ আসেনি। বরাদ্দ আসলে তাকে সহযোগিতা করা হবে।
পূর্ববর্তী পোস্ট