নিজস্ব প্রতিবেদক: সাতক্ষীরা ২ আসনে নির্বাচনী মাঠ উৎসবমুখর হয়ে উঠেছে। শত বাধা-হুমকি মনোবল ভাঙতে পারছেনা স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মীদের। ঘটনাটি জেলা জুড়ে অনেকটা ওপেন সিক্রেট। হুমকির ঘটনাটি স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা রিটার্নিং অফিসার থেকে শুরু করে সরকার ও প্রশাসনের উপরি মহলে জানিয়েছেন।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, পর পর দু’বারের সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মীর মোস্তাক আহমেদ রবি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় নৌকা প্রতীক পাননি। প্রতীক পান বয়সে নবীন উদীয়মান জননন্দীত নেতা উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান বাবু। মনোনয়ন পেয়ে জেলায় প্রবেশের দিন পাটকেলঘাটার রাস্তা-ঘাট জনসমুদ্রে রূপ নেয়। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা ৭ই জানুয়ারি নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে ভোট দেওয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে। এরইমধ্যে গত ১৭ ডিসেম্বর আকাশ ভেঙে পড়ে আশায় বুক বাঁধা আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের মাথায়। শহরে-গ্রামে-গঞ্জে আসাদুজ্জামান বাবুর অনুসারী কর্মীদের মধ্যে কান্নার রোল পরে যায়। পেয়েও না পাওয়ার বেদনা নেতা-কর্মীদের হতভম্ভ করে দেয়। আসাদুজ্জামান বাবুর নৌকা প্রতীক প্রত্যাহার করে আসনটি ছেড়ে দেওয়া হয় জাতীয় পার্টির আশরাফুজ্জামান আশুকে। ১৮ই ডিসেম্বর জাতীয় পার্টির প্রার্থী প্রচার প্রচারণায় নেমে পড়েন। এদিকে নৌকা প্রতীক না পেয়ে দলীয় বাধা-নিষেধ না থাকায় এবং খোদ দলীয় সভাপতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে উৎসাহ প্রদান করায় বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর মোস্তাক আহমেদ রবি সাতক্ষীরা ২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে ঈগল প্রতীক নিয়ে নির্বাচনের মাঠে হাজির হন। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি। তিনি সাতক্ষীরা জেলা ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এবং সাতক্ষীরা কলেজের নির্বাচিত ভিপি ছিলেন। কর্মজীবনে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ব্যবসা বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়েন তিনি। তবে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা ৮১সালে দেশে ফেরার পর তিনি আন্দোলন সংগ্রামে দলীয় প্রধানের সাথে যোগাযোগ রেখে চলতেন। যার ফলশ্রুতিতে ২০১৪ সালে মীর মোস্তাক আহমেদ রবিকে দলীয় মনোনয়ন নৌকা প্রতীক প্রদান করা হয়। সময় জেলার শীর্ষ নেতারা তার বিরোধীতা করে এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে শ্রমীক নেতা সাইফুল করীম সাবুকে দাড় করিয়ে দেন। দলীয় শীর্ষ নেতাদের বিরোধীতার মুখে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েন মীর মোস্তাক আহমেদ রবি। তবে ওই চ্যালেঞ্জকে মোকাবেলা করে তিনি এমপি নির্বাচিত হন। এরপর পিছনে ফিরতে হয়নি তাকে। বঙ্গবন্ধুর সহচর্য পাওয়া দাপুটে এই নেতা অপশক্তির সাথে আপস করেননি। জেলা জুড়ে ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। জেলার দাপুটে আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরোধীতার মুখেও তিনি তার নির্বাচনী এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত করেন। ফলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে নির্বাচনের মাঠে আসা মীর মোস্তাক আহমেদ রবির ঈগল প্রতীকের পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়। অবস্থা বে-গতিক দেখে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার সভাপতি আব্দুর রশিদ গত ২১ ডিসেম্বর তারিখে শহরের লেকভিউতে এক বধিত সভা ডেকে সেখানে বহুসংখ্যক নেতাকর্মীর গণজমায়েত করেন। ওই সভায় উপস্থিত নৌকা প্রতীক হারানো আসাদুজ্জামান বাবু দীর্ঘ ২৫ মিনিট যাবৎ বুক ফাটা কান্না করে হৃদয়গ্রাহী বক্তব্য দেন। তার বক্তব্য জুড়ে ছিলো এমপি মীর মোস্তাক আহমেদ রবির বিরুদ্ধে বিষোদগার করা। সেখানে উল্লেখ যোগ্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মোঃ নজরুল ইসলাম, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ আবু আহমেদ, শ্রমীক লীগের সভাপতি সাইফুল করীম সাবু, সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান গোলাম মোর্শেদ প্রমুখরা। ওই সভা থেকে সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মোঃ নজরুল ইসলাম সমাপনী বক্তব্যে লাঙ্গল প্রতীকের প্রতি সমর্থন জানিয়ে উপস্থিত নেতাকর্মীদের কাজ করার আহবান জানান। অধ্যক্ষ আবু আহমেদ অত্যন্ত নগ্নভাবে মীর মোস্তাক আহমেদ রবিকে বলেন তিনি মুক্তিযোদ্ধা নন। স্বাধীনভাবে বক্তব্য দিতে গিয়ে তোপের মুখে পড়েন শ্রমীক নেতা সাইফুল করীম সাবু। এরপর শুরু হয় দু’পক্ষের ভোটের মাঠে নির্বাচনী প্রচারণা। আচরণ বিধি ভঙ্গ করে লাঙ্গল প্রতীকের জনসভায় প্রতিপক্ষ ঈগল প্রতীকের প্রার্থী দলীয় সহকর্মী মীর মোস্তাক আহমেদ রবির দিকে তীর দিয়ে অশালীন ভাষায় বক্তব্য দেওয়া শুরু করেন আওয়ামী লীগ-যুবলীগের শীর্ষ নেতারা। তারা ৭তারিখের নির্বাচনের পর স্বতন্ত্র প্রার্থী মীর মোস্তাক আহমেদ রবিকে সাতক্ষীরা থেকে তাড়িয়ে দেওয়ারও হুমকি দেন, যা এখনো অব্যাহত আছে। ফলে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে সাতক্ষীর সদর ২ আসনের নির্বাচনের মাঠ। স্বতন্ত্র প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিষোদগার করে শীর্ষে আছেন আসাদুজ্জামান বাবু, অধ্যক্ষ আবু আহমেদ, যুবলীগের আহবায়ক মিজানুর রহমানসহ লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী আশরাফুজ্জামান আশু। তবে তাদের এ বিষোদগার বক্তব্য ভোটের মাঠে বুমেরাং হয়ে দাড়িয়েছে। সভ্য সমাজের ভোটররা এটাকে ভালভাবে না নিয়ে ঈগল প্রতীকের পক্ষে দাড়িয়েছে। কর্মীরা অপপ্রচারে কান না দিয়ে ব্যস্ত আছে শেষ মুহূর্তের ভোটের প্রচারণায়। এ ঘটনায় দিশেহারা হয়ে পড়েছে লাঙ্গল প্রতীকের পক্ষে ভোট করা সকল মহল।
মহলটি নতুন করে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। কীভাবে ঈগল প্রতীকের ভোটারদের নিরুৎসাহিত কিংবা আতংকের মধ্যে ফেলে দেওয়া যায় তার ছক কষতে থাকে। তাদের ছক অনুসারে ২৫ ডিসেম্বর ঝাউডাঙ্গায় আওয়ামী লীগ অফিসে বসা ওই অফিসের সাধারণ সম্পাদক সংখ্যালঘু নেতা অমরেন্দ্র নাথ ঘোষ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম বাবলু, সাংবাদিক ইয়ারব হোসেন সহ পাঁচজকে লাঞ্ছিত করে অফিস থেকে গলা ধাক্কাদিয়ে বের করে দেয়। এ ঘটনায় থানাপুলিশও হয়। তবে তাদের ছক অনুযায়ী তারা ভুক্তভোগীদের থানায় মামলা রেকর্ডে বাধা হয়ে দাড়ায়। এরপর শুরু হয় আরেক কৌশল স্বতন্ত্র প্রার্থী ঈগল প্রতীকের প্রচার প্রচারনায় অংশ নেওয়া ইমেজধারী জনপ্রতিনিধি, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, সংখ্যালঘু নেতা ও তৃণমূল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হুমকি দেওয়া শুরু করে লাঙ্গল প্রতীকের পক্ষে অবস্থান নেওয়া মহলটি। এর পেছনে ইন্ধনদাতা হিসাবে কাজ করছেন জেলা-উপজেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা। তারা স্বতন্ত্র প্রার্থীকে যে কোন মূল্যে হারাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। লাঙ্গল প্রতীকের সভা মঞ্চে জেলা আওয়ামী লীগের বার বার বিনা প্রতিদ্ব›দ্বীতায় নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক নন্দীত জননেতা আলহাজ্ব মোঃ নজরুল ইসলামের উপস্থিতিতেই স্বতন্ত্র প্রার্থী মীর মোস্তাক আহমেদ রবির বিরুদ্ধে অশালীন বক্তব্য দিয়ে চলেছে। নজরুল ইসলাম এ ধরণের বক্তব্য না দিলেও কোনরূপ বিরক্তিবোধ ছাড়াই তিনি স্বাভাবিকভাবে নির্বাচনী জনসভায় অংশ নিয়ে চলেছেন।
সাতনদীর সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে স্বতন্ত্র প্রার্থী মীর মোস্তাক আহমেদ রবি দীর্ঘ সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। সেখানে তিনি স্পর্শকাতর কিছু বিষয়ে শেয়ার করলেও সব কিছু সংবাদে না আনার জন্য অনুরোধ করেছেন। তবে তিনি দাবি করেছেন স্পর্শকাতর বিষয়গুলো তিনি জেলা রিটার্নিং অফিসার, বিভিন্ন সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনির উচ্চ পর্যায়ে মৌখিকভাবে জানিয়েছেন। বিষয়টি তিনি প্রধান নির্বাচন কমিশনারকেও জানানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তিনি অভিযোগ করে বলেছেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনী জনসভায় সাতক্ষীরা বালক বিদ্যালয় মাঠে যুক্ত হয়ে স্পষ্ট বলেছিলেন নির্বাচন উন্মুক্ত করে দিয়েছি। সবাই ভোটারদের কাছে যান। তিনি অসংখ্যবার মিডিয়ার সাথে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ভোটে অংশগ্রহণের জন্য উৎসাহিত করেছেন। দলের সাধারন সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সংবাদ সম্মেলন করে বলেছেন জাতীয় পার্টির সাথে জোট কিম্বা মহাজোট নয়। তাদের সাথে সমন্বয় হয়েছে। কিন্তু হুমকি দাতা মহলটি জাতীয় পার্টির সাথে আওয়ামী লীগের মহাজোট হওয়ার মিথ্যা দাবী করছে। মহলটির উদ্যোগ সফল হলে দেশীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে চ্যালেঞ্জিং ৭ই জানুয়ারির নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে তাকে কোন সন্দেহ নেই। মীর মোস্তাক আহমেদ রবি যুক্ত করে বলেন, জাতীয় পার্টির সাথে আওয়ামী লীগের যদি জোট কিম্বা মহাজোট হয়ে থাকে তবে সংসদে বিরোধীদল হবে কারা। নির্বাচনের মাঠে যদি জাতীয় পার্টি বিরোধী দল না থাকে তবে চলমান নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ টিম কারা? আওয়ামী লীগ কাদের সাথে নির্বাচনে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করবে? তিনি বলেন, ৭১ সালে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি। কাপুরুষের মতো ঘরে বসে থাকবো না। আমার নির্বাচনী এলাকার জনগনকে সাথে নিয়ে যে কোন ষড়যন্ত মোকাবেলা করবো ইনশাল্লাহ।
মীর মোস্তাক আহমেদ রবি আরও বলেন, ‘মহল বিশেষের হুমকির বিষয়টি জেলা রিটার্নিং অফিসার, বিভিন্ন সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উচ্চ পর্যায়ে বলেছি। প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে লিখিতভাবে জানানোর প্রস্তুতি নিচ্ছি। ’