এনবিআর এর চেয়ারম্যান ও খুলনা কাস্টমস’র কমিশনার বরাবর স্মারকলিপি প্রদানের সিদ্ধান্ত
নিজস্ব প্রতিবেদক: ভোমরা শুল্ক স্টেশনের ডেপুটি কমিশনার এনামুল হক অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রতিকারের লক্ষে যৌথ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। রোববার (২৯ অক্টোবর) বেলা ১২টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত ভোমরা সিএন্ডএফ এজেন্টস এসোসিয়েশনের ভবনে অনুষ্ঠিত সভায় ভোমরা সিএন্ডএফ এজেন্টস এসোসিয়েশনের সভাপতি কাজী নওশাদ দিলওয়ার রাজু, সাধারণ সম্পাদক এএসএম মাকসুদ খানসহ ভোমরা সংশ্লিষ্ট সকল সংগঠনের কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ অংশ নেন। সভায় ভোমরা শুল্ক স্টেশনের দায়িত্বরত ডেপুটি কমিশনার এনামুল হক বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগের প্রেক্ষিতে এনবিআর এর চেয়ারম্যান ও খুলনা কাস্টমস’র কমিশনার বরাবর স্মারকলিপি প্রদানের সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়।
ভোমরা সিএন্ডএফ এজেন্টস এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এএসএম মাকসুদ খান বলেন, ভোমরা স্থল বন্দরে শুল্ক স্টেশনের ডেপুটি কমিশনার এনামুল হক বিরুদ্ধে ঘুষসহ নানান অনিয়ম-দুর্নীতি আমাদের নজরে আসে। ব্যবসার সুষ্ঠু পরিবেশে ফিরিয়ে আনতে আমরা সকল সংগঠনের সমন্বয়ে যৌথ সভা করি এবং ব্যবসায়ীদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে দুর্নীতিবাজ ওই কর্মকর্তার বিস্তর অপকর্মসহ এনবিআর’র চেয়ারম্যান ও খুলনা কাস্টমস’র কমিশনার বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করবো।
ভোমরা সিএন্ডএফ এজেন্টস এসোসিয়েশনের সভাপতি কাজী নওশাদ দিলওয়ার রাজু বলেন, ভোমরা শুল্ক স্টেশনের ডেপুটি কমিশনার এনামুল হক যোগদানের পর থেকে তার ব্যক্তিগত কিছু অসাদু কর্মকর্তার যোগসাজশে অনিয়ম-দুর্নীতি অব্যাহত রেখেছে। ব্যবসায়ীদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে আমরা রোববার টানা তিনঘন্টার যৌথ সভা করি। সভায় তার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ ওঠে আমরা তা লিপিবদ্ধ করে এনবিআর’র চেয়ারম্যান ও খুলনা কাস্টমস’র কমিশনার বরাবর স্মারকলিপি প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
সভায় জানানো হয়, আমদানিকৃত ভারতীয় ট্রাক বাংলাদেশে প্রবেশ পর বি/ই এন্ট্রি করার জন্য কাস্টমসে অগ্রিম ২ হাজার টাকা না দেওয়া পর্যন্ত বি/ই নাম্বার ফেলতে দেওয়া হয়না। পণ্য ভেদে অতিরিক্ত হলুদের ক্ষেত্রে ২ হাজার টাকা (ট্রাক প্রতি), শুকনা মরিচের ক্ষেত্রে ৩ হাজার টাকা (বি/ই প্রতি), থৈল সাপটার ক্ষেত্রে ১৫ হাজার টাকা (প্রতি ১০০ মেট্রিক টনে), ভূষির ক্ষেত্রে ৫ হাজার টাকা (বি/ই প্রতি), ভুষি সাপটার ক্ষেত্রে ৩০ হাজার টাকা (প্রতি ১০০ মেট্রিক টনে), সিরামিক পণ্যের ক্ষেত্রে ১০ হাজার টাকা (বি/ই প্রতি পরিক্ষরে ভয় দেখিয়ে) এবং পিয়াজের ক্ষেত্রে ২শ টাকা (ট্রাক প্রতি) জোর পূর্বক আদায় করা হচ্ছে। ভারতীয় ট্রাক বন্দর থেকে বের করার জন্য প্রতিদিন প্রায় ৪০টির অধিক স্টাম্প করতে হয়। স্টাম্প প্রতি ডেপুটি কমিশনারকে নগদ ২ হাজার টাকা এবং পরিক্ষনে দায়িত্বরত কর্মকর্তাকে ৫শ টাকা প্রদান না করা পর্যন্ত স্টাম্পে সই করেন না। রপ্তানীকৃত পন্যের ক্ষেত্রেও বি/ই প্রতি অগ্রিম ১ হাজার টাকা প্রদান না করিলে বি/ই নাম্বার ফেলতে দেওয়া হয় না এবং পন্যের ডলার মূল্য বাড়ানোর ভয় দেখিয়ে বি/ই প্রতি ৮ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা অবৈধভাবে আদায় করছে। বক্তারা আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেখানে রপ্তানি জন্য উৎসাহীত করেছেন সেখানে তিনি ভোমরা দিয়ে কেন রপ্তানি বাড়াচ্ছে তা ক্ষতিয়ে দেখার নামে বিভিন্নভাবে হয়রানি এবং ভয়-ভীতি দেখাচ্ছে। বি/ই সংখ্যা বৃদ্ধি করে অতিরিক্ত টাকা হাতিয়ে নেওয়ার জন্য পাথরের ক্ষেত্রে ১০ ট্রাকে ১টি এবং অন্যান্য পন্যের ক্ষেত্রে ০৫ ট্রাকে ১টি বি/ই নির্ধারণ করে দিয়েছে, যাহা ১৯৯৬ সাল থেকে এপর্যন্ত কখনো পরিলক্ষিত হয়নি। এ সকল বিষয়ে ডেপুটি কমিশনারের নিকট জানতে চাওয়া হলে সবকিছু কমিশনার এর নির্দেশে হচ্ছে বলে তিনি আমাদেরকে অবহিত করেন এবং বেশি প্রশ্ন করলে সি এন্ড এফ লাইসেন্স খেয়ে দিবেন বলে হুমকি প্রদান করেন। অবৈধ টাকা আদায় এবং ডেপুটি কমিশনারের অনিয়ম বন্ধ করার জন্য পদক্ষেপ গ্রহন করার দাবী জানান বক্তারা।
সাতক্ষীরা চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি নাছিম ফারুক খান মিঠু বলেন, ভোমরা সিএন্ডএফ এজেন্টস এসোসিয়েশনের সভাপতি/ সাধারণ সম্পাদকসহ অন্যান্য ব্যবসায়ীরা ভোমরা শুল্ক স্টেশনের ডেপুটি কমিশনার এনামুল হক ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ করেন। আমিও বিষয়টি খোঁজ খবর নিয়ে সত্যতা পেয়ে খুলনা কাস্টমস’র কমিশনারকে অবহিত করেছি। অনতিবিলম্বে তাকে অব্যাহতি দিয়ে ব্যবসায়ীদের ব্যবসার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনার দাবী জানান তিনি।
ভোমরা শুল্ক স্টেশনের দায়িত্বরত ডেপুটি কমিশনার এনামুল হক দৈনিক সাতনদীকে জানান, পন্য আমদানী-রপ্তানীর ক্ষেত্রে ভোমরা স্থলবন্দরের স্কেলে এখন জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। আমি গত ৬ আগস্ট যোগদানের পর থেকে আগের তুলনায় রাজস্ব আদায় দ্বিগুণ হয়েছে। ব্যবসায়ীদের মধ্যে গ্রুপিং (উপদল) আছে। তারা গাড়ী প্রতি দুই থেকে তিন টন পর্যন্ত ছাড় চায়। এটা দেয়া মানে সরকারের রাজস্ব ক্ষতি। সরকারের রাজস্ব জলঞ্জলি দিয়ে কারও সুযোগ-সুবিধা দেয়া আমার কাজ না।