মাদক (পর্ব—১)
নিজস্ব প্রতিবেদক: ভোমরায় মাদক ও চোরাচালানের একক অধিপতি ইসলাম সিন্ডিকেট বেপরোয়া। মহামারী করোনার মধ্যেও ভোমরা স্থলবন্দর এলাকায় মাদকের জাল ছড়িয়ে রেখেছে আবু সাইদ ইসলাম ও তার সহযোগী রাশেদুজ্জামান রাশেদ। ভোমরার চোরাই পথ ব্যবহার করে পাশ্ববর্তী ভারত থেকে মাদক নিয়ে আসে ইসলাম। অন্যদিকে ঘোণা বর্ডার দিয়ে মাদকের বড় চালান তোলে ইসলামের আরেক সহযোগী রাশেদুজ্জামান রাশেদ।
সীমান্তবর্তী এলাকা হওয়ায় ভোমরায় মাদক ব্যবসায়ীদের আধিপত্য অনেক দিনের। মাদকবিরোধী অভিযান চলাকালে নিকট অতীতে জেলার চিহ্নিত কয়েকজন মাদকব্যবসায়ী পুলিশের সাথে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে। পুলিশ ও বিজিবির যৌথ প্রচেষ্টায় ভোমরার অনেক মাদক ব্যবসায়ীরা এখন বৈধ উপর্জানের পথ বেছে নিয়েছে। তবে একেবারেই বন্ধ হয়ে যায়নি মাদক ব্যবসা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভোমরা সিএন্ডএফ এ্যসোসিয়েশন এর একজন ব্যবসায়ী বলেন, আমদানী রফতানি ব্যবসায়ের সাথে যুক্ত থাকায় দিনের বেশিরভাগ সময়ই বন্দর এলাকায় থাকি। প্রতিদিন শতাধিক মাদকাসক্তের আনাগোনা চোখে পড়ে। তিনি বলেন, ইসলাম নামের এক মাদক ব্যবসায়ী বর্তমানে ভোমরা স্থলবন্দর এলাকায় মাদক কেনাবেঁচা করে। প্রতিদিন মোটরসাইযোগে শহর থেকে আসা মাদকাসক্তদের মাদকের যোগানদাতা ইসলাম। ইসলামের শ্বশুর শহিদুল ভোমরা এলাকার একজন চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। বর্তমানে জামাই শ্বশুর মিলে ভোমরা এলাকায় বড় একটি সিন্ডিকেট পরিচালনা করছে। পুলিশের সোর্স পরিচয় দিয়ে অন্যান্য মাদক ব্যবসায়ীদের দমিয়ে রেখে এখন এ জগতে ইসলামের একক আধিপত্য।
জানাগেছে, সাতক্ষীরা সদরের পলাশপোল এলাকার আবু সাইদ ইসলাম ভোমরার চিহ্নিত মাদক (ফেনসিডিল ও ইয়াবা) ব্যবসায়ী শহিদুলের মেয়েকে বিয়ে করে সেখানেই ঘর জামাই হিসেবে রয়েছে। প্রথমে ফল ব্যবসায়ী ছিল ইসলাম। ভোমরা থেকে ক্রয় করে শহরের ফলের দোকানগুলোতে সে ফল বিক্রি করত। তবে শ্বশুর মাদক ও ভারতীয় পণ্য চোরাকারবারী হওয়ার সুবাদে কালো জগতে নাম লেখাতে বেগ পেতে হয়নি ইসলামের। শহর থেকে আসা মাদকসেবীরা আগে থেকেই মোবাইলে ইসলামের সাথে যোগাযোগ করে। এরপর কখনও মোটরসাইকেলে আবার কখনও পায়ে হেটে আগে থেকে ঠিক করা স্পটে আসক্তদের মাদক পৌছে দেয় ইসলাম ও তার সিন্ডিকেটের সদস্যরা। লেনদেন হয় বিকাশের মাধ্যমে। ভোমরার জাহাঙ্গীর মার্কেট, ঘোষ পাড়া, শ্রীরামপুর, পদ্ম শাখরা, গাঙনী ব্রিজ এসব পয়েন্ট মাদক সরবরাহের জন্য হটস্পট। দুপুর থেকে শুরু করে গভীর রাত পর্যন্ত রমরমা ব্যবসা চলে। ইসলাম সিন্ডিকেটের উঠতি বয়সী কয়েকজন যুবক এসব স্পটে মটরসাইকেলে করে প্রশাসনের আনাগোনা লক্ষ রাখে। প্রশাসনিক চাপ এড়াতে পুলিশের সোর্স হিসেবে নিজেকে পরিচয় দেয় মাদক ও ভারতীয় পণ্য চোরাকারবারী আবু সাইদ ইসলাম।
অপরদিকে ইসলামের আরেক সহযোগী রাশেদুজ্জামান রাশেদ জেলা পুলিশসুপারের কার্যালয়ের অপরদিকে প্রাণশাহ্ এর খালের পশ্চিম পাশের একটি বাড়িতে ভাড়া থাকে। ইসলামের সাথে তার সখ্যতা অনেক দিনের। রাশেদ ঘোনা বর্ডার দিয়ে চোরাই পথে ভারতীয় ফেনসিডিল নিয়ে এসে বিক্রি করে। শহরে এবং ভোমরা বন্দর এলাকায় ইসলামের সাথে যৌথভাবে রাশেদ ব্যবসা পরিচালনা করে।
যুব সমাজকে খাদের কিনার থেকে টেনে তুলতে মাদকের গহফাদারদের শেকড় উপড়ে ফেলতে হবে। সাতক্ষীরার ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুশৃঙ্খলভাবে গড়ে তুলতে ভোমরা স্থলবন্দরে মাদকের বিরুদ্ধে প্রশাসনের জিরো টলারেন্স ঘোষণার প্রয়োজন। ইসলাম, রাশেদসহ ছোটবড় সকল সিন্ডিকেট সদস্যদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবী জানিয়েছে ভোমরা সিএন্ডএফ এ্যসোসিয়েশনের একাধিক নেতাকর্মী।