বাণিজ্য ডেস্ক:
রেকর্ড আমদানির পরও দেশের বাজারে ভোজ্যতেলের দাম নিয়ন্ত্রণে আসছে না। অভিযোগ উঠেছে সিন্ডিকেট কারসাজির কারণে এখনও প্রতি মণ সয়াবিন তেল সাড়ে ছয় হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। অথচ বুকিং রেট কমার সুযোগে গত দেড় মাসে ২ লাখ ৩৩ হাজার মেট্রিক টন ভোজ্যতেল আমদানি হয়েছে।
সম্প্রতি চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় ডলফিন জেটিতে সরেজমিনে দেখা যায়, বিদেশি অয়েল ট্যাংকার থেকে ভোজ্যতেল খালাস করা হচ্ছে। এরপরে সেটি রিফাইন হয়ে চলে যাচ্ছে বাজারে।
গত ১৩ মার্চ পর্যন্ত ৪১ দিনে এ ধরনের ২০টি অয়েল ট্যাংকারে করে ২ লাখ ৩৩ হাজার মেট্রিক টন ভোজ্যতেল আমদানি হয়েছে। এর মধ্যে ১ লাখ ৫৮ হাজার মেট্রিক টন পাম তেল এবং ৭৪ হাজার ৯৫০ মেট্রিক টন সয়াবিন তেল রয়েছে।
আর এসব পণ্য সরবরাহের কার্যক্রম অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের তথ্য অনুযায়ী, ডলার সংকটের কারণে অর্থ বছরের শুরুতে ভোজ্যতেল আমদানি কিছুটা কম হলেও, রোজা শুরুর ঠিক আগ মুহূর্তে আমদানি বেড়েছে। গত আট মাসে বাংলাদেশে ১২ লাখ ৯৭ হাজার মেট্রিক টন ভোজ্যতেল আমদানি হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় ২০ শতাংশ বেশি। গত বছরের একই সময়ে ১০ লাখ ৮৪ হাজার মেট্রিক টন ভোজ্যতেল আমদানি হয়েছিল।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের উপকমিশনার ব্যারিস্টার বদরুজ্জামান বলেন, ‘গত বছরের তুলনায় আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম অনেকটা কমেছে। সেহেতু আশা করছি, ভোক্তারা আগের তুলনায় কম দামে তেল কিনতে পারবেন।’
এদিকে বিশ্ববাজারে বর্তমানে সব ধরনের ভোজ্যতেলের বুকিং রেট সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে। প্রতি মেট্রিক টন সয়াবিন তেল ১ হাজার ১৮০ মার্কিন ডলার এবং পাম তেল ১ হাজার ৩০ মার্কিন ডলারে বিক্রি হচ্ছে। আর দেশের বাজারে এখনও প্রতি মণ সয়াবিন ৬ হাজার ৪৫০ টাকা এবং পাম অয়েল ৪ হাজার ৮০০ টাকা। অথচ তেমন কোনো রিফাইন ছাড়াই পাম তেল বাজারজাত করা সম্ভব। কিন্তু নানা কারসাজি ও কৃত্রিম সংকটের কারণে ভোজ্যতেলের দাম এখনও নিয়ন্ত্রণের বাইরে।
চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের মেসার্স সবুজ কমার্শিয়ালের মালিক শাহেদ উল আলম বলেন, রমজান মাস উপলক্ষে বাজারে পাম তেলের সরবরাহ বেড়েছে। গত সপ্তাহের তুলনায় এ সপ্তাহে প্রতি কেজিতে দাম ৩ থেকে ৪ টাকা কমেছে।
এদিকে চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, ‘দাম তো সরকার নির্ধারণ করে দিয়েছে। কাজেই এখন যদি সরবরাহ ব্যবস্থা ঠিক থাকে, তাহলে কোনো সমস্যা হবে না।’
এ অবস্থায় তেলের দাম কমাতে মিল পর্যায়ে তদারকি প্রয়োজন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রাকিব হাসান বলেন, ‘এ বছর রমজান মাসকে উপলক্ষ করে তেলসহ অন্যান্য কোনো পণ্যের দাম যেন অতিরিক্ত না বাড়ে, কোনো কারসাজি যেন না হয়, সেজন্য কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।’
তবে সহসাই বাজারে ভোজ্য তেলের দাম কমছে না বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমেছে এই তথ্যটি সঠিক। তবে একইসঙ্গে ডলারেরও দাম বেড়েছে। যে কারণে তেলের দাম কমার সুফল এখনই পাওয়া যাচ্ছে না।’
রোববার (১৯ মার্চ) সচিবালয়ে মন্ত্রণালযয়ের সভাকক্ষে দ্রব্যমূল্য ও বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত টাস্কফোর্সের ষষ্ঠ সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এতথ্য জানান।
উল্লেখ্য, দেশে মাত্র ৮ থেকে ১০টি প্রতিষ্ঠান বিদেশ থেকে তেল আমদানি করছে। ফলে তেলের বাজার পুরোটা তাদেরই নিয়ন্ত্রণে। এদিকে দেশে বছরে ১৮ থেকে ২০ লাখ মেট্রিক টন ভোজ্য তেলের চাহিদা রয়েছে আর শুধু রমজান মাসেই প্রয়োজন হয় সাড়ে ৩ লাখ মেট্রিক টন তেল।