
সচ্চিদানন্দদেসদয়: আশাশুনি উপজেলায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়াতে এবং খাদ্যে ভেজাল রোধ ও পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নেই কোন কার্যক্রম। ক্রেতা সাধারনের জন্য ভোক্তা অধিকার আইন নামে দেশে একটি আইন আছে এবং আইনটি ২০০৯ সাল থেকে বাংলাদেশে চালু রয়েছে। আশাশুনি উপজেলার সাধারন মানুষের অনেকেই এই ব্যাপারে সঠিক তথ্য জানেন না। এই আইন অনুযায়ী কোনো অসাধু ব্যবসায়ী ভোক্তাকে ঠকালে শুধু শাস্তি পাবেন না, বরং ভোক্তাও অভিযোগ করে আর্থিকভাবে লাভবান হবেন। এই আইনটির মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে-ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ ও উন্নয়ন, ভোক্তা অধিকারবিরোধী কার্য প্রতিরোধ, ভোক্তা অধিকার লঙ্ঘনজনিত অভিযোগ নিষ্পত্তি, নিরাপদ পণ্য বা সেবা পাওয়ার ব্যবস্থা, কোনো পণ্য বা সেবা ব্যবহারে ক্ষতিগ্রস্ত ভোক্তাকে ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা, পণ্য বা সেবা ক্রয়ে প্রতারণা রোধ, ভোক্তা অধিকার ও দায়িত্ব সম্পর্কে গণসচেতনতা সৃষ্টি। উপজেলার বিভিন্ন হাটে বাজারে মিষ্টির দোকান,মাছ মাংসের দোকান,মুদিখানা দোকান,পাইকারি ও খুচরা খাদ্যসামগ্রী বিক্রয়ের দোকানে দেখা যায় ওজন দেয়ার সময় মোটা কাগজে প্রস্তত মিষ্টির বাক্স অথবা মোটা কাগজে প্রস্তত ঠোঙাসহ ওজন দেয়া হয়। বাক্স বা ঠোঙার ওজনের কারণে ক্রেতা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও এর প্রতিবাদ করতে গেলে ভোক্তাকে অপমানিত হতে হয়। আজকাল প্রায়ই দেখা যায় প্রতিশ্রুতি পণ্য বা সেবা প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সঠিকভাবে সেবা প্রদানে অবহেলা, দায়িত্বহীনতা বা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সঠিক সেবা না দেয়ার কারণে উপজেলার কোথাও কোথাও বিভিন্ন সময় দন্ধ, সংঘাত, মারামারি ঘটছে। যারা টাকা দিয়ে কোনো জিনিস বা সেবা কিনে থাকে তারাই হচ্ছে ভোক্তা। ক্রেতা যদি কোনো পন্য বাকিতে, বা কিস্তিতে কিনে থাকেন তবুও তিনি ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনের আওতাভুক্ত হবেন। আশাশুনির প্রত্যান্ত অঞ্চলেল ব্যাপক জনগোষ্ঠী ভোক্তা অধিকার সম্পর্কে জানেই না। আশাশুনিতে ভোক্তা অধিকার কোন সভা বা সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে কিনা তা জানা নেই বলে অনেকে মন্তব্য করেন। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনে পণ্যে ভেজাল বা নকল পণ্য উৎপাদন বা বিক্রি করলে কিংবা বিক্রির সময় ওজন বা মাপে কারচুপি করলে এক থেকে তিন বছর কারাদন্ড এবং অর্থদন্ডের জরিমানার বিধান করা রয়েছে। এ ছাড়া মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ বা অন্য যে কোনো পণ্য বিক্রি বা বিক্রির প্রস্তাব করলে অনূর্ধ্ব এক বছর কারাদন্ড কিংবা উভয় দন্ড হওয়ারও বিধান রয়েছে। তা ছাড়া মানুষের জীবন ও স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হয় এমন কোনো পণ্য উৎপাদন বা প্রক্রিয়াকরণ করলে দুই বছর কারাদন্ড এবং জরিমানা, মিথ্যা বিজ্ঞাপন দিয়ে ক্রেতাদের প্রতারিত করলে এক বছর কারাদন্ড এবং জরিমানা, পণ্য বিক্রয়কারীর পরিমাপক যন্ত্র বা বাটখারা প্রকৃত ওজনের চেয়ে কম হলে এক বছরের কারাদন্ড কিংবা জরিমানা, পণ্যের মোড়কের গায়ে ওজন, পরিমাণ, উৎপাদন এবং মেয়াদ উর্ত্তীনের তারিখ উল্লেখ করা বাধ্যতামূলক। এ নিয়ম মানা না হলে এক বছর কারাদন্ড ও অর্থদন্ডের জরিমানা, দোকানে কোনো দৃশ্যমান স্থানে পণ্যের মূল্যের তালিকা ঝুলিয়ে রাখতে হবে, এ নিয়ম না মানলে এক বছর কারাদন্ড এবং অর্থদন্ডের জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনে। উপজেলার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা প্রশাসনিক ব্যবস্থায় জরিমানা আরোপ, ব্যবসার লাইসেন্স বাতিল বা ব্যবসায়িক কার্যক্রম সাময়িক বা স্থানীয়ভাবে স্থগিত করতে পারবেন।উপজেলার সাধারণ জনগণ প্রতিনিয়তই এবং পদে পদে ভোক্তা অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ব্যবসায়ী কর্তৃক ভোক্তাদের ঠকানোর প্রবণতা পূর্বাপর একই আছে। অত্র উপজেলায় সচেতনতার অভাবে ভোক্তাদের অধিকার খর্ব হচ্ছে সবসময়। এ ব্যাপারে যথাযথ কতৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন সচেতন মহল।