প্রিন্ট এর তারিখঃ এপ্রিল ২৩, ২০২৫, ৪:৫৬ পি.এম || প্রকাশের তারিখঃ অক্টোবর ৪, ২০২০, ৮:৪৩ অপরাহ্ণ
ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মনোনয়নে জাল-জালিয়াতি করা হয়েছে
দলে সক্রিয় স্বাধীনতা বিরোধী চক্র;
সাতনদীর সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে বর্নাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী শহিদুল ইসলাম;
সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের দলীয় কোন্দল প্রকাশ্যে পর্ব ২
হাবিবুর রহমান: শেখ আব্দুর রশিদকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি করা হয়েছে জাল জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে। দলে ত্যাগী নেতা কর্মীদের মূল্যায়ন নেই। মুখচেনা কিছু নেতারা তাদের অনুসারীদের নিয়ে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি গঠন করেছেন। উপজেলা তৃণমূলের নেতারা সময় মত এর দাতভাঙ্গা জবাব দিবেন। দৈনিক সাতনদীর সাথে একান্ত সাক্ষাতকারে কেন্দ্র ঘোষিত সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা শহিদুল ইসলাম এসব কথা বলেন।
সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মনোনয়ন নিয়ে কেন্দ্রে অভিযোগ করার বিষয়ে শহিদুল ইসলাম সাতনদীকে বলেন, শেখ আব্দুর রশিদকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মনোনয়ন দেয়ার প্রক্রিয়ায় জালিয়াতির আশ্রয় নেয়া হয়েছে। প্রথমত আমি পদত্যাগপত্র প্রত্যাহারের জন্য আবেদন করলেও তা গ্রহণ করা হয়নি। কিন্তু পদত্যাগ পত্রটি জেলা কমিটির সভায় না নিয়ে তা প্রয়াত আবুল খায়ের এর কাছে প্রেরনের কথা বলা হচ্ছে যা বিধি সম্মত নয়।
৭ ডিসেম্বরের সম্মেলনে আমাকে সিনিয়র সহ-সভাপতি করে ১৫ সদস্য বিশিষ্ট সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। ওই দিন প্রয়াত আবুল খায়ের হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। একইদিনে আবুল খায়ের ৭১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করে তা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সম্পাদকের কাছে দাখিল করেছেন এবং ওই কমিটিতে আমাকে ৩ নং সদস্য করার কথা বলা হচ্ছে যা অবাস্তব।
একই ভাবে ২৯শে জুলাই সিনিয়র সহ-সভাপতি মেনে ১৫ই অগাস্ট শোক দিবস পালনের জন্য জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক আমাকে পত্র দেন। কিন্তু রাতারাতি পরিস্থিতি পাল্টে যায় এবং ৫ই সেপ্টেম্বর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এক পত্রে শেখ আব্দুর রশিদকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ঘোষণা করেন যা দলের গঠনতন্ত্র লংঘন। তিনি যোগ করে বলেন, ৬ই সেপ্টেম্বর শেখ আব্দুর রশিদ আমাকে অসংখ্যবার ফোন দেন। আমার সাড়া না পেয়ে তিনি জেলা আওয়ামী লীগ নেতা ফিরোজ কামাল শুভ্রকে ফোন দিয়ে আমাকে ৫ লক্ষ টাকা দেয়ার প্রস্তাব রাখেন। বিনিময়ে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দাবীর জায়গা থেকে আমাকে সরে আসতে হবে। ঘৃণাভরে আমি তা প্রত্যাখান করি এবং প্রতিকার চেয়ে কেন্দ্র আবেদন করি।
শহিদুল ইসলামের রাজনীতির শুরুর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেতো ১৯৬৭ সালের কথা। প্রয়াত আবু নাছিম ময়না ভাই, মহিদ ভাইসহ ৪/৫ জনের একটি গ্রুপ পিএন স্কুলে গিয়ে আমদের ছাত্র রাজনীতিতে আমার প্রস্তাব দেন। সেই দিন থেকে বঙ্গবন্ধুর ছাত্রলীগে যোগ দেই। সেই যে শুরু আজও থামেনি। চলতেই আছি।
বাঁকে বাঁকে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে পদ পদবির বিষয়ে শহিদুল ইসলাম সাতনদীকে জানান, ৭০ সালে পিএন স্কুল থেকে এসএসসি পাশ করি। ১৯৭১ সালে সংগ্রাম পরিষদ গঠন হলে আমি সেখানে সদস্য হই। ১৯৭৩ সালে সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ ছাত্র সংসদ নির্বাচনে আমি কমন রুম সেক্রেটারি নির্বাচিত হই।
মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণের বিষয়ে কথা বলতেই বীর এই মুক্তিযোদ্ধার চোখ দিয়ে দরদর করে পানি ঝরে। কিছুটা সামলে নিয়ে বলেন একজন মুক্তিযোদ্ধাকে পদদলিত করে বাড়ীর এক সময়ের কর্মচারীকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বানানো হয়েছে। যা সাতক্ষীরার সব মুক্তিযোদ্ধাকে অসম্মান করার সামিল।
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি হাতড়ে তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে মুজিব বাহিনী গঠন হলে ভারতে যাই ট্রেনিং নিতে। সঙ্গী ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুনসুর আহম্মেদ। আসামের হাফলং এ ট্রেনিং নিয়ে দেশে ফিরে আসি। প্রথমে আমাকে পাঠানো হয় বীর মুক্তিযোদ্ধা কামরুজ্জামান টুকুর ক্যাম্পে পাইকগাছায়। পরে সেখান থেকে পাঠানো হয় দেবহাটা ক্যাম্পে। এই ক্যাম্পে মুনসুর আহম্মেদের সঙ্গেই ছিলাম। সেই যুদ্ধকালীন সহকর্মী যখন ছুড়ে ফেলে দেয় তখন বড় কষ্ট পাই।
বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কোন স্মৃতি আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যরা শহীদ হন। এরপর প্রয়াত নেতা মোহাম্মদ নাছিম ১৮বস্তা লিফলেট দেন আমার হাতে। নির্দেশ দেন তা ঢাকা পৌছানোর। বড় ভাই প্রয়াত এফ এম এন্তাজ আলীর নির্দেশে আমি তা পাইকগাছা পর্যন্ত পৌছে দেই। পরে তা ঢাকা পৌছানো ও প্রচারও করা হয়। লিফলেট কোথা থেকে আসলো তা নিয়ে তদন্ত শুরু হয়। খুলনা এনএসআই অফিসে আমার সহ আবু নাছিম ময়না, কাজী কামাল ছট্টু ও মহিদভাইকে ডাকা হয়। সেখানে আমাদের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
প্রয়াত সৈয়দ কামাল বখত সাকীর স্মৃতি চারণ করেন শহিদুল ইসলাম। ১৯৮২ সালে রাজনীতি ওপেন হলে সৈয়দ কামাল বখত সাকী তাকে বলেন, দলের সভাপতি জোহরা তাজউদ্দীন আসবেন লোকজন আনতে হবে। আমরা ওই সময় হাজির হলে প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা রুহুল আমিন ভাইয়ের বাসায়। সেখানে ঘরোয়া সভা হলো। নতুন উদ্যোমে কাজ শুরু করি। ৮২ সাল থেকে অদ্যবধি জেলা আওয়ামী লীগের সম্পাদক মন্ডলীতে আমি থেকেছি। সেই থেকে অদ্যবধি দল করে কিছু পাওয়ার প্রত্যাশা করিনি। এখনও শহরে ভাড়া বাড়িতে থাকি।
Copyright © 2025 দৈনিক সাতনদী. All rights reserved.