
আকরামুল ইসলাম: সাতক্ষীরার হাট বাজারসহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠাণে ব্যবহৃত হচ্ছে নিষিদ্ধ পলিথিন। পলিথিন ব্যবহার নিষিদ্ধ থাকলেও আইনের প্রয়োগ না থাকায় ব্যবহার বেড়েছে। আর ভারত থেকে চোরাইপথে আমদানিকৃত পলিথিনের দখলে এখন সাতক্ষীরার বাজার। ব্যবসায়ীরা চোরাই পথে ভারত থেকে আমদানি করেন এসব নিষিদ্ধ পলিথিন। ব্যবসায়ীদের অভিমত, ভারতীয় পলিথিন টেকসই যার কারণেই এটার ব্যবহার বেশী।
সাতক্ষীরার সুলতানপুর বড় বজারে অধিকাংশ দোকানে প্রতিকেজি ভারতীয় পলিথিন বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকায় আর দেশী পলিথিন ২২০-২৫০ টাকায়। এ বাজার থেকেই নিষিদ্ধ এসব পলিথিন চলে যায় উপজেলা সদরসহ বিভিন্ন হাট বাজারে।
সাধারণ মানুষদের অভিযোগ, একদিকে চোরাইপথে আমদানি আর অন্যদিকে যন্ত্রতন্ত্র পলিথিনের ব্যবহার হুমকির মুখে পড়ছে পরিবেশ। নজরদারি নেই প্রশাসনের। তবে প্রশাসন বলছে, নজরদারি রয়েছে। পলিথিন ব্যবহার দেখলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
২০০২ সালে পরিবেশ সংরক্ষণ আইনে সংশোধনী এনে পলিথিনের উৎপাদন ও বাজারজাত নিষিদ্ধ করা হয়। আইন বলছে, সরকার নির্ধারিত পলিথিন সামগ্রী উৎপাদন, আমদানি ও বাজারজাতকরণে প্রথম অপরাধের দায়ে অনধিক ২ বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক ২ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। পরবর্তী প্রতিটি অপরাধের ক্ষেত্রে ২ বছর, অনধিক ১০ বছরের কারাদণ্ড বা ২-১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন অপরাধীরা। বিক্রি, বিক্রির জন্য প্রদর্শন, মজুদ, বিতরণ, বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে পরিবহন বা বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্যবহারের দায়ে অনধিক ১ বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে।
সাতক্ষীরা শহরের সুন্দরবন কলেজ অব টেকনোলজির কম্পিউটার বিভাগের পঞ্চম সেমিষ্টারের শিক্ষার্থী ফেরদৌস আহম্মেদ জানান, বাজারে কোন কিছু ক্রয় করতে গেলে নিষিদ্ধ পলিথিনের মধ্যে সেগুলো ঢুকিয়ে হাতে ধরিয়ে দেয়। বাধ্য হয়েই ক্রেতাদের সেগুলো নিতে হয়। এরপর প্রয়োজন শেষ হলেই ফেলে দেওয়া হয় এ পলিথিন। পলিথিন পচনশীল দ্রব্য নয়, এটা থেকে যায়। পলিথিনের ব্যবহার নিষিদ্ধ থাকলেও আইনের প্রয়োগ না থাকায় ব্যবহার দিন দিন বেড়েছে।
পলিথিনের ব্যবহারের বিষয়ে জেলার দেবহাটা ইছামতি টেকনিক্যাল এন্ড বিএম কলেজের অধ্যক্ষ মনিরুজ্জামান বলেন, যে কোন দোকানে ছোট আকারের পলিথিনের ব্যবহার এখন বেশী হয়। ছোট আকারের গুলোর ব্যবহার না থাকলেও মানুষ ভোগান্তিতে পড়বে। তবে সাতক্ষীরার বড় বাজারে রয়েছে বড় আকারের পলিথিনের ব্যবহার। এসব পলিথিন ভারতীয়। যা চোরাই পথে আমদানি করা। সাধারণ মানুষ পলিথিনের ব্যবহার করে সেখানে সেখানে ফেলে দেয় এতে পরিবেশের ভারসম্য নয় হয়ে দিন দিন হুমকির মুখে পড়ছে পরিবেশ। একটি নিদৃষ্টস্থানে পলিথিন ফেলা উচিত ও যথা সময়ে সেগুলো ধ্বংস করা উচিত। এছাড়া আইনের যথাযথ ব্যবহারের বিকল্প নেই।
সাতক্ষীরার সুলতানপুর বড় বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী আমির হোসেন। তিনি বলেন, বাজারে বড় এবং ছোট দুই সাইজের পলিথিনই পাওয়া যায়। প্রত্যেকটি দোকানে রয়েছে পলিথিনের ব্যবহার। তবে পলিথিন দেশে এখন উৎপাদন হয় না। সেজন্য বাজারের পাইকারি বড় ব্যবসায়ীরা ভারত থেকে চোরাইপথে (ব্লাকের মাধ্যমে) পলিথিন আমদানি করে। বর্তমানে বাজারে যেসব পলিথিনের ব্যবহার হচ্ছে এসব পলিথিন সবটাই ভারতীয়। ১শ গ্রাম পলিথিন আমরা ক্রয় করি ২৫-৩০ টাকায়।
সুলতান বড় বাজারের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে আলোচনাকালে তিনি বলেন, এখনও দেশীয় পলিথিন পাওয়া যায় তবে সেগুলো ভালো না, ছিড়ে যায়। মালপত্র বহন করা যায় না। আর ভারতীয় পলিথিন মজবুত ও টেকসই, ছিড়ে যায় না। ৫শ গ্রাম, এক কেজি, দুই ও পাঁচ কেজি মালামাল বহন করার মত পলিথিন বিক্রি করি প্রতি কেজি ৩০০ টাকায়। এসব পলিথিন ভারত থেকে (ব্লাকের মাধ্যমে) আমদানি করা। সেজন্য দাম একটু বেশী। আর দেশীয় পলিথিন কম দামে পাওয়া যায়। প্রতি কেজির মূল্য ২২০-২৫০ টাকায়। আপনার যতগুলো প্রয়োজন দিতে পারবো।
পলিথিনের ব্যবহার ও ক্রয় বিক্রয় নিষিদ্ধ জানিয়ে সাতক্ষীরা জেলা মার্কেটিং কর্মকর্তা সালেহ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ্ বলেন, আমরা পলিথিনের ব্যবহার যেখানেই দেখবো সেখানেই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পলিথিন ক্রয় বিক্রয় হচ্ছে এমন ঘটনা সামনে পড়লেই মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়। রাজধানী ঢাকাতে কিছু কারখানা রয়েছে। সেগুলো থেকে উৎপাদিত পলিথিন বিভিন্নভাবে আমাদের বাজারে চলে আসে। আমাদের তদারকির পরও সমূলে পলিথিনের ব্যবহার বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছে না। কেন্দ্রীয়ভাবে মনিটরিং জোরদার করাটাও জরুরী।
ভারত থেকে চোরাইপথে আমদানি করা নিষিদ্ধ পলিথিন বিক্রি হওয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে নিষিদ্ধ পলিথিন আমদানি, মজুদ বা ক্রয়-বিক্রয় দেখলেই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নিষিদ্ধ পলিথিন ব্যবহার রোধে সাতক্ষীরা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার দেবাশীষ চৌধুরী বলেন, পলিথিন ব্যবহার রোধে নিয়মিত অভিযান চলছে। এটা অব্যাহত থাকবে। সম্প্রতি কয়েকদিন আগে অভিযান চালিয়ে বড় বাজারের একটি দোকান থেকে আধা মন পলিথিন মজুদ অবস্থায় পাওয়া যায়। সেগুলো ধ্বংস ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়েছে।
তিনি জানান, জেলা আইনশৃঙ্খলা সভাতেও নিষিদ্ধ পলিথিনের ব্যবহার রোধকল্পে কার্যকরি পদক্ষেপ গ্রহনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট এস.এম মোস্তফা কামালের নির্দেশনায় জেলাব্যাপী পলিথিন ব্যবহার রোধকল্পে অভিযান শুরু হয়েছে।