নিজস্ব প্রতিবেদক: ভাঙনের সাড়ে তিন মাস পেরিয়ে গেলেও সংস্কার করা হয়নি সাতক্ষীরার শ্যামনগরের বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের আড়পাঙাশিয়া খাল সংলগ্ন সাড়ে ৩ কিলোমিটার রাস্তা। গত ১৪ জুলাই খোলপেটুয়া নদীর ভাঙনে প্রবল জলোচ্ছ¡াসে প্লাবিত হয়ে এসব রাস্তা ভেঙে যায়। যোগাযোগের মাধ্যম তাই এখন বাঁশের সাকো। সাড়ে ৩ কিলোমিটারে সাকো রয়েছে মোট ১৪টি। প্রতিদিন যেকোন কাজে যেতে গেলে এই ১৪টি সাকো পার হয়ে তবেই যেতে হবে গন্তব্যে। মৎস্য ব্যবসায়ীরা পরিবহন করতে পারছেন না তাদের জীবিকার মূল উৎস্য চিংড়ী মাছ। নোনা পানির এলাকা হওয়ায় বিশুদ্ধ পানি পাওয়ার জন্য যেতে হয় কয়েক কিলোমিটার দূরে। এখানে ৪টি স্কুল, ১টি হাইস্কুল, ২টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ১টি গার্লস স্কুল রয়েছে। স্কুল শিক্ষার্থীরা সময় ও পরিশ্রমের বিনিময়ে কোনরকমে বিদ্যালয়মুখী হচ্ছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের ৫নং ও ৬নং ওয়ার্ডের দুর্গাবাটি, পশ্চিম দুর্গাবাটি, আড়পাঙাশিয়া, মাদিয়াসহ বেশ কয়েকটি এলাকার রাস্তার শোচনীয় অবস্থা। এর মধ্যে বিলআইট গ্রামের পরিমল জোয়ার্দ্দারের বাড়ির সামনে থেকে আড়পাঙাসিয়া মনসাতলা হয়ে মাদিয়া খোন্তাকাটা মোড় পর্যন্ত সাড়ে ৩ কিলোমিটার রাস্তার মধ্যবর্তী ১৪টি স্থানে বাঁশের সাকো দিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে। এলাকার প্রায় ১০ হাজার মানুষের যাতায়াতের এটাই একমাত্র মাধ্যম।
গত ১৪ জুলাই খোলপেটুয়া নদীর বাঁধ ভাঙার কারনে এসব এলাকায় প্রায় ৭দিন যাবত জোয়ার ভাটা খেলতে থাকে। অবশেষে পানি সরে গেলে স্থানীয়দের উদ্যোগে এই সাকো নির্মান করা হয়।
আড়পাঙাশিয়া প্রিয়নাথ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সৌমিত্র জোয়ার্দ্দার জানান, সিডর, আইলা ও ফনীর মত ঘুর্ণিঝড়ের আঘাতে লÐভÐ হয়ে গেছে এখানকার জনপদ। গত ১৪ জুলাই নদীভাঙনের কারনে ওই রাস্তাগুলো ভেঙে যায়। এতে স্কুলগামী ছাত্রছাত্রীদের ব্যাপক ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। অস্থায়ীভাবে ব্যবস্থা হিসেবে বাঁশের সাকো দিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। ছাত্রছাত্রীরা ঠিকমতো স্কুলে আসতে পারছে না।। কর্তৃপক্ষের উচিত হবে এই রাস্তাগুলো দ্রæত সংস্কার করা হয়।
একই দাবি করলেন তপোবন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রামরঞ্জন বিশ্বাস। তিনি বলেন, অনেক স্কুলগামী ছাত্রছাত্রী সাকো থেকে পড়ে গিয়ে আহত হয়েছে। পরীক্ষার সময় তাদের বেশী সমস্যা হয়। নির্ধারিত সময়ে অনেকেই পৌছাতে পারে না।
বুড়িগোয়ালিনী ৫নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মুকুন্দ পাইক জানান, দীর্ঘদিন রাস্তা পানিতে ডুবে থাকার ফলে রাস্তাগুলো সাইকেল চালানোরও অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। নষ্ট হয়ে গেছে সুপেয় পানির পুকুর। কাবিখার মাধ্যমে ২২ টন চালের কাজ সাড়ে পাঁচ টন চাল দিয়ে করতে বলা হয়েছে যা সম্ভব নয়।
আড়পাঙাসিয়া গ্রামের সুলেখা বিশ্বাস ও তুলসী রানী মÐল বলেন, সুপেয় পানির পুকুর নষ্ট হয়ে যাওয়ায় ১৪টি সাকো ডিঙিয়ে দুই কিলোমিটার দূরে মিষ্টি পানির পুকুর থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে পানি আনতে হয়। এতে দিনের প্রায় অর্ধেক সময় পার হয়ে যায়। বাড়ির পুরুষেরা সকালে বাজারে গেলে ফিরে আসে বিকেলে। রাস্তায় বাঁশের সাঁকোর কারণে অসুস্থ ও গর্ভবতী মায়েদের দোলনায় করে বা আড়পাঙাসিয়া খাল দিয়ে নৌকায় শ্যামনগর হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়। এতে অবর্ননীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
প্রায় ১০ হাজার মানুষ বিপাকে পড়েছেন উল্লেখ করে শ্যামনগরের ৯নং বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাজী নজরুল ইসলাম জানান, রাস্তাগুলোর সত্যিই অনেক বেহাল দশা। ওই স্থানে শক্ত মাটি না পাওয়ায় রাস্তার কাজ থমকে আছে। রাস্তার দুইপাশের ঘের শুকিয়ে গেলে মাটি সংগ্রহ করে ডিসেম্বর থেকে সংস্কার কাজ শুরু হবে। তিনি চেয়ারম্যান হবার পর আড়পাঙাসিয়াসহ কয়েকটি রাস্তায় সাত টন চাল বরাদ্দ দিয়ে মাটি দিয়ে রাস্তা সংস্কারের কাজ করেছিলেন। দুর্গাবাটিতে স¤প্রতি ভাঙনের পর রাস্তায় মাটি দিতে সাড়ে ৫ টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
রাস্তাগুলো সংস্কার না হলে স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে যাবে উল্লেখ করে বীরসিংহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণীর ছাত্র সৃজন বিশ্বাস ও মানবেন্দ্র বিশ্বাস জানায়, প্রতিদিন স্কুলে যেতে দেরী হয়। পরীক্ষার সময় কয়েক ঘন্টা আগে বাড়ি থেকে বের হতে হয়। এতে তাদের লেখাপড়া বাঁধাগ্রস্থ হচ্ছে।
শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আক্তার হোসেন জানান, গত ১৪ জুলাই দুর্গাবাটির বেড়িবাঁধ ভেঙে বুড়িগোয়ালিনি ইউনিয়েনের তিন/চারটি ওয়ার্ড প্লাবিত হয়েছিল। এতে অনেকগুলো রাস্তা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। রাস্তা সংস্কারে আপাতত কিছু অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে। সেই অর্থ দিয়ে চলতি নভেম্বর মাসের শেষদিকে মেরামত কাজ শুরু হবে। মাটি ভরাট করে প্রাথমিক কাজ শেষ হলে তারপর ইট বিছিয়ে দেওয়া হবে। পরবর্তীতে হয়তো সেখানে পিচ ঢালাইয়ের ব্যবস্থা করা হবে।
বুড়িগোয়ালিনী এলাকার মানুষের জীবিকার প্রধান উৎস্য মৎস্য চাষ। বেশ কয়েকজন চিংড়ী চাষী জানান, এখানকার চিংড়ী সহ অন্যান্য মাছ পরিবহনে সমস্যা হবার কারনে বাজারে বেশী দামে বিক্রয় করতে হচ্ছে। অনেক সময় ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় ব্যবসার ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে। খুব দ্রæত রাস্তা মেরামত করা দরকার।