জাতীয় ডেস্ক: র্যাবের অভিযানে বিপুল অর্থসহ গ্রেপ্তারের পর গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়ে আলোচনায় উঠে এসেছেন মনির হোসেন, যাকে মেরুল বাড্ডার মানুষ ‘গোল্ডেন মনির’ নামেই চেনে। বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ১১০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে তিনি।
জানা গেছে, গত কয়েক বছরে দেশের বিভিন্ন ব্যাংকে থাকা ২৫ অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে ৯৩০ কোটি ২২ লাখ টাকার লেনদেন করেছেন গোল্ডেন মনির। এর মধ্যে ৪১২ কোটি ২ লাখ টাকা জমা রয়েছে এবং ৫১৮ কোটি ২০ লাখ টাকা বিভিন্ন সময় উত্তোলন করা হয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানায়, গত অর্থ বছরে (২০১৯-২০) আয়কর রির্টানে তার সম্পদের পরিমাণ দেখিয়েছেন মাত্র ২৫ কোটি ৮২ লাখ টাকা। এছাড়াও গত অর্থ বছরে গোল্ডেন মনিরের বাৎসরিক আয় ১ কোটি ৪ লাখ টাকা দেখানো হয়েছে।
সূত্রটি জানায়, ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত সময়কালে গোল্ডেন মনির বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের এবং তৎকালীন প্রভাবশালী মন্ত্রী, গণপূর্ত ও রাজউকের বিভিন্ন শ্রেণীর কর্মকর্তাদের সঙ্গে অন্তরঙ্গ সম্পর্ক গড়ে তোলেন। আর তাদের ব্যবহার করে বিপুল পরিমাণ সম্পদ গড়ে তোলেন। জাল-জালয়াতির মাধ্যমে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ২০২টি প্লট ও জমি দখল করে নেয় গোল্ডেন মনির। এছাড়াও হুন্ডির মাধ্যমে দেশের বাইরেও বিপুল পরিমানে অর্থ পাচার করেছে গোল্ডেন মনির।
র্যারের তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, মনির হোসেন একদিনে ‘গোল্ডেন মনির’ হয়ে ওঠেননি। সে মূলত একজন সুবিধাবাদী রাজনীতিবিদ ছিলেন। বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন নেতা, রাজউক ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন শ্রেণির কর্মকর্তাদের ব্যবহার করে প্রচুর সম্পদের মালিক হয়েছেন তিনি। মনিরের এই উত্থানের পেছনে যারা জড়িত ও সহায়তা করেছেন তাদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনতে চেষ্টা চলছে।
র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ গণমাধ্যমকে বলেন, র্যাব শুধুমাত্র ফৌজদারি কার্যবিধি নিয়ে কাজ করে। গোল্ডেন মনিরের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ পেয়েছি, সেগুলো র্যাবের কার্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত নয় বিধায় আমরা সরকারের চার সংস্থাকে তদন্ত করতে অনুরোধ জানিয়েছি।
তিনি বলেন, গোল্ডেন মনির দেশের বাইরে কি পরিমাণ অর্থ পাচার করেছেন বা কি পরিমাণ সম্পদ তার রয়েছে, সে বিষয়ে তদন্তের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) অনুরোধ করবো। তিনি শুল্ক ফাঁকি দিয়ে অবৈধ পথে কসমেটিকস পণ্য ও চোরাচালানির মাধ্যমে কি পরিমাণ স্বর্ণ দেশে এনেছিলেন, সে বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) অনুসন্ধান করতে অনুরোধ করবো।
এদিকে অনুমোদনহীন বিলাসবহুল গাড়ি (প্রত্যেকটি তিন কোটি টাকা মূল্যের) আমদানির বিষয়ে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটিকে (বিআরটিএ) অনুসন্ধানের জন্য আমরা বলবো। এছাড়া গোল্ডেন মনির জাল-জালিয়াতি করে ভুমি দখল করেছে সেসব বিষয়ে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (রাজউক) অনুসন্ধানের জন্য আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে জানাবো।
প্রসঙ্গত, ২১ নভেম্বর (শনিবার) সকালে রাজধানীর মেরুল বাড্ডা এলাকায় ডিআইট প্রজেক্টের ১৩ নম্বর রোডের নিজ বাসা থেকে মো. মনির হোসেন ওরফে গোল্ডেন মনিরকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
অভিযানে ৬০০ ভরি (আট কেজি) স্বর্ণ, ১টি বিদেশি পিস্তল-গুলি, মদ, ১০টি দেশর বিপুল পরিমান বৈদেশিক মুদ্রা ও নগদ ১ কোটি ৯ লাখ টাকা জব্দ করা হয়। এছাড়া, তার বাড়ি থেকে অনুমোদনহীন দুইটি বিলাশবহুল গাড়ি এবং ‘অটো কার সিলেকশান’ নামের তার গাড়ির শোরুম থেকে তিনটি অনুমোদনহীন বিলাশবহুল গাড়ি জব্দ করা হয়।