জিয়াউর রহমান, শ্যামনগর প্রতিবেদক: সাতক্ষীরা রেঞ্জের পশ্চিম সুন্দরবন বুড়িগোয়ালিনী বন অফিসের স্টেশন কর্মকর্তা সুলতান আহম্মেদের বিরুদ্ধে অনিয়ম দূর্নীতি ও সেচ্চারিতাসহ মৌয়ালদের মধু কাটার পাস না দেয়ার অভিযোগ উঠেছে।
অভিযোগে জানা যায়, সাতক্ষীরা রেঞ্জের চারটি ষ্টেশন -অফিস থেকে প্রতিবারের ন্যায় পহেলা এপ্রিল আনুষ্ঠানিক ভাবে মৌয়ালদের মধু কাটার অনুমতি দেন বন-বিভাগ। গত বৃহস্পতিবার বুড়িগোয়ালিনী বন অফিস থেকে মধু আহরনের জন্য ১০৫ টি অনুমতি পত্র (পাস) দেয়া হলেও অনেকের আবার পাস দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেন ভূক্ত ভোগিরা। গাবুরা ইউনিয়নের ৯ নং সোরা গ্রামের সোহারাব খার ছেলে রুস্তোম খা জানায়, বৃহস্পতিবার অন্যান্য মৌয়ালদের সাথে বন অফিস থেকে পাস নিতে গেলে তার সহ অনেকের পাস দেওয়া হয়নি। কারণ জানতে চাইলে স্টেশন অফিসার সুলতান বলেন, বন বিভাগের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করায় মধুর পাস দেওয়া হবেনা।
রুস্তোম খা,প্রতিবেদককে জানায়, মধুর পাস দেওয়ার আগেই ষ্টেশন কর্মকর্তা সুলতান আহম্মেদ গাবুরা, বুড়িগোয়ালিনী, মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের পেশাদার মাছ ও কাঁকড়া জেলেদের দিয়ে মোটা অংকের ঘুষের টাকা নিয়ে সুন্দরবেন থেকে মনকে মন মধু কেটে নিয়ে আসছে চোরা জেলেরা। আমি এসব দৃশ্য দেখে গত মঙ্গলবার বুড়িগোয়ালিনী বন অফিসের স্টেশন কর্মকর্তাকে জানাই, স্যার আপনি চোরা জেলেদের দিয়ে এভাবে সুন্দরবন থেকে মধু কাটাচ্ছেন কেন? আমরা মাহাজনের কাছ থেকে দাদন নিয়ে মধুর পাস করে বনে যেয়ে মধু থেকে বঞ্চিত হবো। আপনি এটা বন্ধ করুন, তখন ষ্টেশন অফিসার বলে তুমি কাউকে বলো না বন-বিভাগের সম্মান নষ্ট হবে। বিষয়টি আমি দেখছি। আমার কোন ষ্ট্যাফ এমন কাজে জড়িত থাকার প্রমান পেলে তার বিরুদ্ধে ব্যব¯্’্া নেওয়া হবে বলে সুলতান আহম্মেদ জানান।
খোঁজ খবর নিয়ে জানা যায়, ষ্টেশন কর্মকর্তা সুলতান বুড়িগোয়ালিনী বন অফিসে যোগদানের পর থেকে পশ্চিম সুন্দরবনে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে আর কায়েম করেছে রাম রাজত্ব ও গড়ে তুলছে অবৈধ টাকার পাহাড়। তার একটি উদ্দেশ্য কি ভাবে কালো টাকার পাহাড় গড়া যায়। শ্যামনগর উপজেলা, কয়রা উপজেলার সহ বিভিন্ন জায়গার মাছ, কাঁকড়া ধরা জেলেদের সাথে আতায়াতের মাধ্যমে সুন্দরবনের মধ্যে নিষিদ্ধ (অভয়ারন্য) ১৯ টি এলাকায় জেলেদের প্রবেশ করিয়ে সুন্দরবনের বন্য প্রাণী নিধন, মূল্যবান কাঠ, মধু, কাঁকড়া ও মাছ ধরার সহায়তা করছে বন বিভাগের এই কর্মকর্তা। এসব জেলেদের কাছ থেকে সাপ্তাহিক ও মাসিক চুক্তিতে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েক জন জেলে জানান, বুড়িগোয়ালিনী বন অফিসের স্টেশন কর্মকর্তা যোগদানের পর থেকে জেলেরা বন্ধবাদায় মাছ ও কাঁকড়া ধরার সুযোগ পাচ্ছে। আবার চুক্তির টাকা দিতে দেরী হলে অমানুষিক ভাবে জেলেদের আটক করে মামলার ভয় দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা নিয়ে জেলেদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
বুড়িগোয়ালিনী বন অফিসের স্টেশর অফিসার সুলতান আহম্মেদ এর সাথে মুঠো ফোনে মধুর পাস না দেওয়া এবং টাকা নিয়ে জেলেদের দিয়ে অভয়ারন্য এলাকায় মাছ,কাঁকড়া ধরার বিষয়ে কথা হলে তিনি প্রতিবেদককে বলেন, আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তোলা হয়েছে তা সম্পূর্ন মিথ্যা। বনের মধ্যে কিছু বন টহল অফিস আছে তারা মাঝে মধ্যে টাকা নিয়ে অভায়ারন্য এলাকায় জেলেদের দিয়ে মাছ ও কাঁকড়া ধরার কথা স্বীকার করেন। তবে রুস্তুম খার মধুর পাস দেয়া হয়নি তার বিরুদ্ধে চোরাই ভাবে সুন্দরবন থেকে মধু কাটার অভিযোগ আছে।
সাতক্ষীরা সহকারী বনসংরক্ষক (এসিএফ) এম.এম হাসান এর সাথে মুঠো ফোনে কয়েক জনের মধুর পাস না দেয়া এবং সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হওয়ার বিষয়ে কথা হলে তিনি বলে, রুস্তোম খার নামে মধু কাটার অভিযোগ আছে। তাই তার শিক্ষা দেওয়ার জন্য দুই দিন পরে মধুর পাশ দেওয়া হবে। নিষিদ্ধ এলাকায় মোটা অংকের টাকা নিয়ে জেলেদের দিয়ে মাছ,মধু,কাঁকড়া ও মুল্যবান কাঠ কাটার বিষয় তিনি স্বীকার করে বলেন, এটা আহমানকাল থেকে হয়ে আসছে এখন হচ্ছে আগামীতেও হবে। তবে সুনিদৃষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলে জানান তিনি।
বুড়িগোয়ালিনী ফরেস্ট অফিসের স্টেশন কর্মকর্তা সুলতান আহমেদ চাকুরী পাওয়ার পূর্বে তার পারিবারিক অবস্থা কেমন ছিল আর চাকুরী এপর্যন্ত তার পারিবারিক অবস্থা তদন্ত পূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য বন ও পরিবেশ মন্ত্রীর আশু হস্তক্ষে কামনা করেছেন শ্যামনগরের সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ।