ইয়ারব হোসেন: সদর উপজেলার তুজুলপুর গ্রামের বর্গা চাষী ইয়াছিন আলী, আখড়াখোলা গ্রামের আমজেদ আলী, সহরাব হোসেনসহ কথা হয় স্থানীয় আমন চাষীদের সাথে। সম্প্রতি ঝড় বৃষ্টিতে কৃষি ফসলের ক্ষয় ক্ষতি নিয়ে কথা উঠতেই এসব বর্গা চাষীরা জানান, ক্ষতি যা হওয়ার তা তো দেখতেই পাচ্ছেন। এখন সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে অন্যের জমিতে ধান চাষ করেছি। ঝড় বৃষ্টিতে সব ধান মাঠেই নষ্ট হয়ে গেছে। এখন ঋণ পরিশোধ করব কি দিয়ে সে চিন্তায় পাগল হয়ে যাচ্ছি। তাছাড়া যে সব চাষীরা এক ফসলী জমি বর্গা বা লীজ নিয়ে ধানের আবাদ করেছিলেন তাদের সারা বছরের খাবার মাঠে নষ্ট হয়ে যাওয়ায় এবস গরীব বর্গা চাষীদের মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়েছে। ঝড়ের সাথে ভারী বর্ষনে থৈ থৈ পানিতে আমন ধানের গাছ/গোড়া পচতে শুরু করেছে। জেলার প্রান্তিক এসব আমন চাষীদের অনেকের বাড়িতে গো খাদ্যের জন্য খড়ও উঠবে না এই ভেবে তারা দিশে হারা।
বুলবুল ঝড়ের কবলে পড়ে সাতক্ষীরা জেলার ৭৮ টি ইউনিয়নে কাঁচা ঘর বাড়ি, গাছপালা, মাছের ঘের, সরিষা, পানের বরজসহ সবজির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে উপজেলার সব অঞ্চলে আমন ধানের আবাদ হওয়ায় এর ক্ষতির পরিমান অন্য ফসলের চেয়ে অনেকটাই বেশী। জেলার প্রতিটি ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা কৃষির ক্ষয় ক্ষতির তালিকা করে জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরে জামাও দিয়েছেন।
তালা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্যা আল মামুন জানান, ঘুর্ষি ঝড় বুলবুলের আক্রমনে ১২ টি ইউনিয়নে ১৫শ’ হেক্টর জমির রোপা আমন ধানের ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া সেখানে সবজি ১৬০ হেক্টর সরিষা ৫০ হেক্টর ও ১০০ হেক্টর জমির পান ক্ষতি হয়েছে।
কলারোয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মহসীন আলী জানান, পৌর সদরসহ ১২ টি ইউনিয়নে ঝড় বৃষ্টিতে ১ হাজার হেক্টর রোপা আমন, ১৫০ হেক্টর সবজি ৩০০ হেক্টর সরিষা ও ১৫ হেক্টর জমির পান নষ্ট হয়েছে।
সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আমজাদ হোসেন জানান, ঝড় বৃষ্টিতে সদরে ১ হাজার হেক্টর জমির রোপা আমন, ২০০ হেক্টর জমির সবজি, ১৩০ হেক্টর জমির সরিষা ও ০৫ হেক্টর জমির পান নষ্ট হয়েছে।
কালিগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকতা রুহুল আমীন জানান, তাঁর এলাকায় ৬ হাজার ৫০০ হেক্টর জমির রোপা আমন ধান, ৭০ হেক্টর জমির সবজি ও ৩৫ হেক্টর জমির সরিষা ঝড় বৃষ্টিতে নষ্ট হয়ে গেছে।
শ্যামনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবুল হোসেন মিয়া জানান, উপজেলায় বুলবুলের আক্রমনে ৯ হাজার ৫০০ হেক্টর জমির রোপা আমন ধান, ১০০ হেক্টর জমির সবজি ও ০৫ হেক্টর জমির সরিষা সম্পূর্ন নষ্ট হয়ে গেছে।
দেবহাটা উপজেলায় ৫০০ হেক্টর জমির রোপা আমন ধান ৪০ হেক্টর জমির সবজি ও ০৫ হেক্টর জমির পান নষ্ট হয়েছে।
আশাশুনি উপজেলয় ৫ হাজার হেক্টর জমির রোপা আমন ধান ৮০ হেক্টর জমির সবজি ও ০৫ হেক্টর জমির সরিষা নষ্ট হয়েছে।
সম্প্রতি উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরার উপর দিয়ে প্রবল বেগে বয়ে যাওয়া বুলবুলের আঘাতে জেলার ২ হাজার ৫০০ হেক্টর জমির উঠতি বয়সী রোপা আমন ধান নষ্ট হয়েছে। এসব এলাকার ক্ষতি গ্রস্ত কৃষকরা জানান, জেলার শ্যামনগর আশাশুনি ও কালিগঞ্জের আংশিক এলাকায় লবনাক্ত পানি। শুষ্ক মৌসুমে খাল বিল পুকুর ও নদী নালায় মাত্রাতিরিক্ত লবন পানি থাকায় কৃষি ফলস হয় না বলেই চলে। ফলে এসব এলাকার জমি গুলো এক ফসলী হয়ে পড়েছে। পরিবারের সারা বছরের খাদ্য সংগ্রহের জন্য বর্ষা মৌসুমে মিষ্টি পানি কাজে লাগিয়ে রোপা আমন ও সবজি চাষ করে থাকেন। এবার বুলবুল ঝড়ে এসব কৃষকের স্বপ্নসাধ যেন বাতাসে উড়ে গেছে।
সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক অরবিন্দু বিশ্বাস জানান, এবার জেলায় ৮৯ হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে আমন ধানের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে ঘুর্ণঝড় বুলবুলে আক্রমনে ২৫০০০ হেক্টর জমির রোপা আমনের ক্ষতি হয়েছে। আমনের ক্ষতির শতকরা হার ১০ ভাগ। উৎপাদন আকারে আমনে ক্ষতির পরিমান ৭ হাজার ৯২৫ মেট্রিক টন। যার মূল্য ২৮,৫৩,০০০০০ টাকা। জেলার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঝড়ে রোপা আমনসহ মোট কৃষির ক্ষতি হয়েছে (টাকার অংকে) ৩৩ কোটি ১০ লাখ ৯০ হাজার টাকা।