
আইয়ুব হোসেন রানা: বিশে^র মধ্যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত বাংলাদেশ। আর তাই সকল ধর্মের মানুষের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ জাগরণে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের ‘সম্প্রীতির সেতুবন্ধন’ নামক এই আয়োজন অবশ্যই প্রশংসার দাবীদার।
বৃহস্পতিবার দুপুরে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের আব্দুল মোতালেব মিলনায়তনে শারদীয়া দুর্গোৎসব উপলক্ষ্যে আয়োজিত ‘সম্প্রীতির সেতুবন্ধন’ অনুষ্ঠানে এক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
প্রেসক্লাব সভাপতি মমতাজ আহমেদ বাপীর সভাপতিত্বে এবং সাধারন সম্পাদক মোহাম্মদ আলী সুজন এর পরিচালনায় আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসাবে বক্তব্যে সাতক্ষীরা-২ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর মোস্তাক আহমেদ রবি বলেন, বাংলাদেশ ভারত ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র, অন্যদিকে নেপাল বিশ্বের একমাত্র সাম্প্রদায়িক হিন্দু রাষ্ট্র। অথচ সেখানে সব ধর্মের মানুষের মধ্যে রয়েছে সম্মান, রয়েছে শ্রদ্ধাবোধ। সেখানে কোন সাম্প্রদায়িক সহিংসতা নেই। বিশ্বে সাম্প্রদায়িক স¤প্রীতির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত বাংলাদেশ উল্লেখ করে এমপি রবি বলেন, সাতক্ষীরায় সবসময় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় ছিলো। তিনি বলেন, সাতক্ষীরা প্রেসক্লাব প্রতিবছর শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে সব ধর্ম বর্ণ মত পথের মানুষকে একত্রিত করে সম্প্রীতির সেতুবন্ধন অনুষ্ঠান আয়োজন করে এটি প্রমান করেছে সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সাতক্ষীরা-১ (তালা-কলারোয়া) আসনের সংসদ সদস্য এড. মোস্তফা লুৎফুল্লাহ বলেন, আমি বলতে পারি বাংলাদেশে মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষের দ্বারা অন্য সম্প্রদায়ের মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন খুবই কম। বরং যে ঘটনাগুলো ঘটে সেগুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় হিন্দু সম্প্রদায়ের কেউ একজন তার প্রতিবেশীর কাছে জমি বিক্রি করে ভারতে চলে গেছে, পরে তার ভাইদের সাথে জমি কেন্দ্রীক বিরোধে জড়িয়ে অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটে থাকে। দেশে এখনো ষড়যন্ত্র চলছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সকল ষড়যন্ত্রের জাল ভেদ করে জননেত্রী শেখ হাসিনা দেশে গণতান্ত্রিক চর্চার যে ধারা সৃষ্টি করেছেন দল মত নির্বিশেষে আমাদের সকলকে সম্মিলিতভাবে সেটি অব্যাহত রাখতে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ন কবির বলেন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অন্যতম নিদর্শন শারদীয় দুর্গোৎসব। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, জাতি, ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকলে একাত্ম থেকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রেখে আমরা এগিয়ে যাবো।
সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ শেখ মফিজুর রহমান হিন্দু ধর্মে যে সম্প্রীতির কথা বলা হয়েছে সংস্কৃত ভাষায় তার ব্যাখ্যা করে বলেন, রাষ্ট্রের যেমন উদ্দেশ্য/ দায়িত্ব দুষ্টের দমন শিষ্টের লালন, ঠিক তেমনি ধর্মেও একই কথা বলা আছে। উগ্রপন্থা ধর্মের মুল চালিকাশক্তি নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ধর্মে ধর্মে বন্ধন সৃষ্টি করতে হবে, বর্ণে বর্ণে বন্ধন সৃষ্টি করতে হবে। তবেই সাম্প্রদায়িক বন্ধন মজবুত হবে।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান পিপিএম বার দুর্গোৎসব উপলক্ষে সম্প্রীতির সেতুবন্ধন অনুষ্ঠান আয়োজন করায় প্রেসক্লাব নেতৃবৃন্দকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, জাতির বিবেক হিসাবে আপনারা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির গুরুত্ব অনুধাবন করেছেন বলে প্রতি বছর এমন আয়োজন করে চলেছেন। তিনি বলেন, একটি গøাসে অর্ধেক পানি আছে। এটাকে এক এক জন এক এক ভাবে নিতে পারে । কেউ এটাকে নেতিবাচক অর্থে অর্ধেক খালি বলতে পারে,আবার কেউ ইতিবাচক ভাবে এটাকে অর্ধেক ভরা বলতে পারে। আমাদেরকে নেতিবাচক মনোভাব পরিহার করে মানুষ হিসাবে পরিচিতি লাভ করতে হবে উল্লেখ করে পুলশ সুপার বলেন, আমরা অনেকে মুক্তিযুদ্ধ করার সুযোগ পাইনি কিন্তু দেশ গড়ার সুযোগ পেয়েছি। সেটাকে কাজে লাগিয়ে আমাদেরকে এগিয়ে যেতে হবে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসাবে আরো বক্তব্য রাখেন সাতক্ষীরা ৩৩ বিজিবির অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল আল মাহমুদ, জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি একে ফজলুল হক, সাধারন সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ্ব নজরুল ইসলাম, জেলা বিএনপির আহবায়ক এড. সৈয়দ ইফতেখার আলী, জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি শেখ আজহার হোসেন, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান বাবু, জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা সাতক্ষীরার উপ-পরিচালক আজিজুর রহমান, জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খৃষ্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি বিশ^জিত সাধু, জেলা মন্দির কমিটির সভাপতি বিশ্বনাথ ঘোষ, পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি সুভাষ ঘোষ, জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক জোছনা আরা প্রমুখ। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন পত্রিকার সম্পাদকবৃন্দ, সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের কর্মকর্তা ও সদস্য ছাড়াও সাংবাদিক সুধীজন উপস্থিত ছিলেন।
সম্প্রীতির এই সেতুবন্ধন অনুষ্ঠান এ সময় মিলন মেলায় পরিণত হয়। আলোচনা সভা শেষে অতিথিরা সেখানে আয়োজিত মধ্যাহ্ন ভোজে অংশ নেন। ।