নিজস্ব প্রতিবেদক: পেরিফেরির জায়গা ভূমি অফিসের মালিকানা ও দায়িত্বে থাকলেও প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে আগ বাড়িয়ে ইউনিয়ন পরিষদ কর্তৃক নোটিশ ইস্যু করে হিন্দু স্বর্ণকারের দোকান ভেঙেছে চেয়ারম্যান আব্দুল কাদের। স্বর্ণকারের দোকান ঘরটি ভাঙা ঠেকাতে সহকারি কমিশনার সহকারি ভূমি অফিসারকে ঘটনাস্থলে পাঠালেও তাকে মানেনি চেয়ারম্যান কাদেরের সন্ত্রাসী বাহিনী।
ঘটনার বিবরনে জানা যায়, সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ঘোনা বাজারের উত্তর পার্শ্বের পেরিফেরির জায়গায় স্বর্ণকার স্বপন চৌধুরীর একটি স্বর্ণের দোকান ছিলো। তিনি প্রায় ৩০ বছর ধরে এ দোকানে ব্যবসা করে আসছেন। গত আগস্টমাসের ১০ তারিখে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে উচ্ছেদের নোটিশ পানা তিনি। পেরিফেরির জায়গা ইউনিয়ন পরিষদের নয় এবং উচ্ছেদ বা তদসংক্রান্ত কাজ সাতক্ষীরা সদর উপজেলা ভূমি অফিসের দায়িত্বে। তা স্বত্ত্বেও ১৬ আগস্ট ঘোনার আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত নৌকা বিরোধী চেয়ারম্যান আব্দুল কাদেরর নেতৃত্বে মৃত হাজারি ছেলে স্বপন পরামানিক, মৃত অমূল্য কর্মকারের ছেলে বিনয় কর্মকার, মৃত কিশোরী বিশ্বাসের ছেলে রনজিত, গোবিন্দ পাল, বিষ্ণু পরামানিক, নিমাই পরামানিক স্বপন চৌধুরীর দোকানে হামলা করে দোকান ভেঙে দেয়। এসময় শুধু মাত্র দোকানের লোহার সিন্দুকটি বাদে প্রায় সব কিছুই লুটপাট হয়ে যায়। সিন্দুকটির চাবিও তারা নিয়ে যায়। এ নিয়ে পত্র পত্রিকায় একাধিকবার লেখালেখি হলেও চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি কোন পক্ষ। ফলে বর্তমানে মানবেতর জীবন যাপন করছে স্বপন চৌধুরী।
এসব বিষয় নিয়ে একাধিকবার ঘোনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল কাদেরর কাছে জানতে চাইলে তিনি প্রথমবার জানান যে নোটিশ দিয়ে তার দোকানসহ আরও কয়েকটি দোকান ভাঙা হয়েছে। অন্যদিকে সম্প্রতি তিনি এ বিষয়ে আবারও বলেন তিন দিন ধরে মাইকিং করে ৩০টি দোকান ভাঙা হয়েছে। কিন্তু এই ভাংচুরের বিষয়টি তিনি স্বীকার করলেও তার এ কাজ সম্পূর্ণ অবৈধ ও বে-আইনী।
এ নিয়ে ঘোনা ইউনিয়ন পরিষদের ভূমি সহকারি কর্মকর্তা জানান, ‘এ বিষয়ে আমি জানি। ঘটনার দিন এসিল্যান্ড স্যার আমাকে ঘটনাস্থলে ভাংচুর ঠেকাতে পাঠান। আমার অবস্থান দূরে থাকায় আমি বার বার চেয়ারম্যানকে ফোন দিয়ে বারন করি কিন্তু তিনি কানে নেননি। আমি ঘটনাস্থলে পৌছলে দেখি শুধু মাত্র হিন্দু স্বর্ণকারের দোকানটি ভাঙা হয়েছে।’ উচ্ছেদের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান ‘উচ্ছেদ ম্যাজিষ্ট্রেটের উপস্থিতিতে ভূমি অফিস কর্তৃক হতে পারে।’
এ নিয়ে স্বপন চৌধুরী জানান, নৌকায় ভোট দেয়ায় প্রায়ই আমাকে দেখে নেওয়ার হুমকি দিতো চেয়ারম্যান আব্দুল কাদের ও তার সমর্থকরা। আগস্ট মাসের ১৩ তারিখে আমার কাছে কাদের চেয়ারম্যান ও তার লোকজন এসে আমার দোকানটি সরিয়ে নিতে বলে। এসময় আমাকে হুমকি দিয়ে বলা হয় বহুদিন এই জায়গায় বসে খাইছিস। এবার উঠতে হবে। ১৬ তারিখ ব্যক্তিগত কাজে সাতক্ষীরা শহরে গেলে ১০টার দিকে আমি খবর পাই আমার দোকান ভাংচুর হচ্ছে। বাজারে পৌছে দেখি সব শেষ। দোকানটি মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়া হয়েছে। দোকানে সাজানো সোনা দানা সহ প্রায় ৫ লক্ষ টাকার মালামাল লুটপাট হয়ে যায়। শুধু মাত্র সিন্দুকটি ভাঙতে পারেনি বলে তাতে রক্ষিত জিনিপত্রগুলো আছে। এক প্রশ্নের জবাবে স্বপন চৌধুরী বলেন বিগত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকার পক্ষে কাজ করায় আমার বিরুদ্ধে এমন ধ্বংসাত্মক ব্যবস্থা নেওয়া হলো।
ডাঃ মুনছুর আহমেদ জানান, ইউপি নির্বাচনে কাদের চেয়ারম্যানকে ভোট না দেয়ায় শত্রুতামূলক ভাবে তিনি স্বপন চৌধুরীরর দোকান ভাংচুর করেছেন। এ নিয়ে আমরা সাতক্ষীরা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে একটি অভিযোগ দাখিল করেছি।
ঘোনা ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সভাপতি মোঃ কামাল হোসেন জানান, স্বপন স্বর্ণকার দীর্ঘ ৩২ বছর ধরে ঘোনা বাজারে স্বর্ণের দোকান পরিচালনা করছে। গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আব্দুর কাদের নৌকা প্রতীক না পেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসাবে নির্বাচন করে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ সমর্থক স্বপন স্বর্ণকার ঘোনা ইউনিয়নের ৯নং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তাই শেখ হাসিনার মনোনিত নৌকার প্রার্থীর পক্ষে ভোটের মাঠে কাজ করে ও ভোট দেয়। সে কারণে প্রতিহিংসা পরায়ন হয়ে প্রতিশোধ নিতে আব্দুল কাদের সম্পূর্ণ বে-আইনীভাবে স্বপন স্বর্ণকারের দোকানটি ভাংচুর করে লাখ লাখ টাকার মালামাল লুটপাট করে। আমরা আওয়ামী লীগ কর্মীরা এর সুষ্ঠ্য বিচার চাই।