মুহাম্মদ যারিফ: কলারোয়া পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীকে ঠেকাতে দলীয় ও প্রশাসনিক ক্ষমতা প্রয়োগের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। আওয়ামী লীগ নেতা ও উপজেলা চেয়ারম্যানকে আটক করা সহ বিদ্রোহ প্রার্থী ও তার পরিবারকে সীমাহীন লাঞ্ছনার কথা এখন ওপেন সিক্রেট।
কলারোয়া পৌরসভায় আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক পায় মনিরুজ্জামান বুলবুল। ধানের শীষ প্রতীক পান শরিফুজ্জামান তুহিন। দলীয় মনোনয়নে বিভক্ত হয়ে পড়ে স্থানীয় বড় দুটি দলের নেতৃত্ব। বিগত নির্বাচনে ধানের শীষ পেয়ে নির্বাচিত হওয়া আক্তারুল ইসলাম নিজে এবং স্ত্রী নার্গিস সুলতানাকে দিয়ে মেয়র পদে মনোনয়নপত্র জমা দেন। পরে সংবাদ সম্মেলণ করে নির্বাচন থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন এবং স্ত্রী নার্গিস সুলতানাকে সমর্থন দেন। মেয়র পদে নার্গিস সুলতানা জগ প্রতীক নিয়ে মাঠ চষে বেড়ান এবং প্রতিদ্বন্দিতায় চলে আসেন। মেয়র আক্তারুল ইসলাম তৎকালিন বিরোধীদলীয় নেত্রী এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলা মামলার আসামী এবং বর্তমানে জেলে আছেন। নিজের মামলা জটিলতায় পড়ে স্ত্রীকে মাঠে নামান আক্তারুল ইসলাম। জগ প্রতীকে প্রচার চালিয়ে নিজের অবস্থান বেশ ভাল জায়গায় নিয়ে যান নার্গিস সুলতানা।
অপরদিকে নৌকা প্রতীক পাওয়া স্কুল শিক্ষক মনিরুজ্জামান বুলবুলকে মেনে নিতে পারেনি মনোনয়ন চাওয়া অপর আওয়ামী লীগ নেতা সাজেদুর রহমান খান মজনু চৌধুরী। তিনি বিদ্রোহী প্রাথী হিসাবে মাঠে নামেন এবং মোবাইল প্রতীক পান। প্রচার-প্রচারনা চালিয়ে সাজেদুর রহমান খান মজনু চৌধুরী নিজের অবস্থান শক্ত করার চেষ্টা করেন।
বিদ্রোহী প্রার্থী মজনু চৌধুরী সাতনদীকে জানান, তাকে বসাতে ব্যার্থ হয়ে বাঁকা পথ বেছে নেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা। তাদের প্রভাবে ২৭ জানুয়ারী গভীর রাতে কলারোয়া থানার গেটের বিপরীত পার্শ্বে অবস্থিত তার আবাসিক ভবন ঘিরে ফেলে সাদা পোশাক ধারী একটি বিশেষ বাহিনীর অন্তত ৩০ জনের একটি দল। অবস্থা বেগতিক দেখে পেছন দরজা দিয়ে তিনি সটকে পড়েন। তখন ঘেরাওকারীরা তার পুত্র আরিফকে আটকিয়ে চাপ প্রয়োগ শুরু করে। বলেন তোমার বাবাকে হাজির করো। এসময় তাকে ভয়ভীতি দেখানোসহ গালাগালও করা হয়। পুত্রের দুরাবস্থা দেখে রাত সাড়ে তিনটার সময় সাজেদুর রহমান খান চৌধুরী বিশেষ ওই বাহিনীর দেয়া শর্ত মোতাবেক প্রার্থীতা প্রত্যাহার সহ নৌকা প্রতীকের প্রার্থীকে সমর্থন করার অঙ্গীকার করেন। এসময়ে তিনি বলেন, আটক উপজেলা চেয়ারম্যান লাল্টুকে ছেড়ে দেওয়া হোক। তার উপস্থিতিতেই আমি ঘোষণা দিতে চাই। কিন্তু সে সুযোগও দেয়া হয়নি। তারপর রাত চারটার দিকে বিশেষ বাহিনীর সদস্যরা তাদের অবস্থান সরিয়ে নেয়। পরে ২৯ জানুয়ারি সকাল এগারটায় নির্বাচনী কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে নিজের প্রার্থীতা প্রত্যাহার সহ নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মনিরুজ্জামান বুলবুলকে সমর্থন করার ঘোষণা করেন। এসময়ে সেখানে জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক শেখ হারুনুর রশিদ, আওয়ামী লীগ নেতা শওকত হোসেনসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন। বিদ্রোহী প্রার্থীকে সরিয়ের ক্ষান্ত হয়নি বিশেষ মহলটি। তারা এবার টার্গেট করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম লাল্টুকে কলারোয়া ছাড়া করার।
আমিনুল ইসলামের স্ত্রী রাফিউননেছা সাতনদীকে জানান, আমিনুল ইসলাম লাল্টু ২৮ জানুয়ারি সকাল দশটায় বাড়ী থেকে চলে আসেন। এসময় তিনি সকালে বাড়া খাবার রেখেই রওনা দেন। কারন হিসাবে বলেন, পুলিশের বড় অফিসার এসেছেন। আমাকে জরুরী কলারোয়া যেতে হবে। এরপর সন্ধ্যায় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সহ একটি নির্বাচনী সভায় তাকে বক্তব্য দিতে দেখা যায়। এরপর তার আর দেখা মেলেনি।
তিনি আরও জানান, রাত সাড়ে এগারোটার দিকে বিশেষ একটি জায়গা থেকে লাল্টুর কাছে ফোন আসে কথা বলার জন্য। কথা বলার জন্য ডাকা হলে তিনি ঝাউডাঙ্গা পৌছান। ঝাউডাঙ্গা থেকেই লাল্টুকে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর তার ব্যবহৃত দুটি মোবাইল ফোন বন্ধ হয়ে যায়। পরে ২৯ জানুয়ারি সামান্য সময়ের জন্য ফোন অন করে লাল্টু আমাকে ফোন করে খোঁজখবর নেন। এরপর আর কোন খবর নেই। তিনি এও বলেন, বিষয়টি নিয়ে তিনি খুলনা বিভাগের ডিআইজিকে ফোন দিয়েছিলেন। তিনি সাতক্ষীরা পুলিশ সুপারের সাথে কথা বলতে বলেছিলেন। ফোনও দিয়েছিলেন তিনি কিন্তু যোগাযোগ হয়নি পুলিশ সুপারের সাথে।
ইত্তেফাকের কলারোয়া প্রতিনিধি ও বিদ্রোহী প্রার্থীর ছোট ভাই পলাশ চৌধুরী সাতনদীকে জানান, বিদ্রোহী প্রার্থী মজনু চৌধুরী প্রার্থীতা প্রত্যাহার করার আগেই উপজেলা চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম লাল্টুকে বিশেষ একটি বাহিনীর দায়িত্বশীল এক ব্যাক্তি ফোন করে ঝাউডাঙ্গায় ডেকে নেয়। পরে সেখান থেকে তাকে তুলে নিয়ে যায়। তিনি অভিযোগের সুরে বলেন, জেলা আওয়ামী লীগের একাধীক নেতা এ কান্ডের নেপথ্য নায়ক।
এ ব্যাপারে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মোঃ নজরুল ইসলাম সাতনদীকে জানান, ২৮ জানুয়ারি কলারোয়ার নৌকা প্রতীকের এক পথ সভায় আমার সাথে উপজেলা চেয়ারম্যান লাল্টু বক্তব্য দেন। বিষয়টি নিয়ে পুলিশের সাথেও কথা বলেছি। তারা বলেছেন মিসিং এর খবর শুনেছি। বিষয়টি আমরা দেখছি। তাকে খুঁজে বের করে ফেরৎ দেয়া হবে।
এরিপোর্ট লেখা (রাত ৯টা) পর্যন্ত উপজেলা চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম লাল্টুর কোন খবর দিতে পারেনি তার স্ত্রী রাফিউন্নেছা।