নিজস্ব প্রতিবেদক : সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার চম্পাফুল ইউনিয়ন বিএনপির এক সময়কার দাপুটে সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান মোজাজম্মেল হক গাইন এখন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি। আগামী আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে আবারো সভাপতি হলে আওয়ামী লীগের চরম ক্ষতি হবে বলে আশঙ্কা স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের।
কালিগঞ্জ থানাধীন চম্পাফুল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহ সভাপতি রেজাউল বিশ্বাস, আওয়ামী লীগ নেতা আবু বক্কর, সাহেব আলীসহ কয়েকজন জানান, ২০০৩ সালের ২০ জুলাই চম্পাফুল ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি হিসেবে চাঁদখালি গ্রামের শওকত আলী গাইনের ছেলে মোজম্মেল হক গাইনের নেতৃত্বে ১৫ সদস্য বিশিষ্ঠ ইউনিয়ন বিএনপির কমিটি গঠিত হয়। এরপর থেকে তার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের স্ব-পক্ষের শক্তি তথা আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠণের লোকজন নির্যাতন শুরু হয়। নিজের প্রভাব খাটাতে ২০০৩ সালে তিনি বিএনপি সমর্থিত চার দলীয় জোট সরকারের মন্ত্রী তরিকুল ইসলামকে বিএনপির মিটিং এ ফুলের তোড়া দেন। আবার মান্নান ভুঁইয়া, মোশাররফ হোসেনসহ বিএনপি মন্ত্রীদের পিছনে দাঁড়িয়ে ছবি তুলেছেন। হয়েছেন কালিগঞ্জ উপজেলা কৃষকদলের যুগ্ম আহবায়কও। ভূমিহীনদের প্রতিহত করতে এক লাখ টাকার কথিত চাঁদার দাবিতে ২০০৫ সালের ১৮ জুলাই উজিরপুর বাজারের নিজ দলীয় অফিস ও ইউনিয়ন পরিষদের অস্থায়ী অফিসে টাঙানো তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া, বন ও পরিবেশ মন্ত্রী তরিকুল ইসলামসহ স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দেয়ালে টাঙানো ছবি ভাংচুর ও পদদলিত করার মিথ্যা অভিযোগে মোজাম্মেলল হক গাইন কালিগঞ্জ থানায় বাংলাদেশ কৃষক সমিতির সহসভাপতি সাইফুল্লাহ লস্করসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার আইনে মামলা (জিআর-১০২/০৫) করেন। এ মামলায় সাইফুল্লাহ্ লস্কর, আলী নুর খান বাবুল, আশরাফ মীর, মোশাররফ হোসেনসহ পাঁচ জনের দুই বছর করে কারাদন্ড হয়। যা বর্তমানে আপিল মামলা হিসেবে যশোর জজ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। এরপর থেকে তিনি আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তিনি চাপের মুখে ২০১২ সালে নলতা আহছানিয়া মিশন ডিগ্রী কলেজ মাঠে তৎকালিন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী ডাঃ আ.ফ.ম রুহুল হকের হাতে ফুলের তোড়া দিয়ে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। ২০১৫ সালে কালিগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রয়াত শেখ ওয়াহেদুজ্জামানের সান্নিধ্যে এসে সাবেক সভাপতি মতিয়ার রহমানসহ ত্যাগী নেতা কর্মীদের বাধা বিপত্তি স্বত্বেও চম্পাফুল ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি মনোনীত হন। আওয়ামী লীগ না করলেও নিজেদের অসিত্ব ঠেকিয়ে রাখতে কাইয়ুম গাইনকে ১নং ওয়ার্ডের সভাপতি, আব্দুল জলিল মোল্লাকে ২নং ওয়ার্ডের সভাপতি, বিএনপি সমর্থক আজু মোড়লকে ৪নং ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক ইউপি সদস্য আব্দুস সাত্তারকে ৫ নং ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক, আনোয়ার হোসেনকে ৬নং ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক ৮ নম্বও ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি হিসাবে বি,এন,পি কর্মী আব্দুল্লাহকে ও ৯নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহিনুর ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ফজলুর রহমানকে মনোনীত করেন। মোজাম বাহিনীর চাপে আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতা কর্মীরা একপর্যায়ে কোনঠাসা হয়ে পড়ে। এসবের পরও আওয়ামী লীগের আগামি কাউন্সিল অধিবেশনে এক ধরনের সুবিধাভোগী নেতাদের ম্যানেজ করে মোজাম্মেল হক গাইন আবারো চম্পাফুল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি হওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছেন। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা কর্মীরা আশাবাদি যে, দলীয় প্রধান ও বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের যেখানে দলের মধ্যে কাউয়া খোঁজা শুরু করেছেন সেখানে মোজাম্মেল হক গাইনের মত লোক কোন মতেই আগামি কাউন্সিলে কমিটিতে ঢোকার সূযোগ পাবে না।
এসব বিষয়ে চম্পাফুল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মোজাম্মেল হক গাইন বলেন, ২০০০ সালের আগে তিনি বিএনপি করতেন। পরে তিনি আওয়ামী লীগের নীতি ও আদর্শে বিশ্বাসী হয়ে তিনি ওই দলে যোগদান করেছেন। তার বিরুদ্ধে আনীত কোন অভিযোগের ভিত্তি নেই। সাইফুল্লাহ লস্কর হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হলেও পরে ওই মামলা থেকে অব্যহতি দেওয়া হয়েছে।