# দলীয় বিভাজন সৃষ্টিকারী ও ষড়যন্ত্র করার অভিযোগ।
# বিভিন্ন এলাকায় মাদক ব্যবসায়ীদের সেল্টারদাতা।
# সরকারি অফিসে দালালী, তদবির।
# বর্তমান আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের প্রশ্রয় দিয়ে যাচ্ছেন।
স্টাফ রিপোর্টার: দলীয় বিভাজন সৃষ্টিকারী, ষড়যন্ত্র কারী, দলীয় নেতাদের নামে মিথ্যা মামলায় আসামি করার অভিযোগ এনে দেবহাটা উপজেলা বিএনপি’র সদস্য সচিব মহিউদ্দীন সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বরাবর লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। ওই অভিযোগে অভিযুক্ত মহিউদ্দীন সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে কেন্দ্রীয় কমিটির মহাসচিব, সিনিয়র যুগ্ম সচিব, ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক ও খুলনা বিভাগ এবং সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক খুলনা বিভাগ বরাবার অনুলিপি প্রেরণ করা হয়েছে। লিখিত অভিযোগে আবেদনকারী জানান, বিগত কমিটি নিয়ে ঝামেলা সৃষ্টি হয়। ওই কমিটিতে মহিউদ্দীন সিদ্দিকী সদস্য সচিব হন। সে সময় থেকে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে সাংগঠনিক কার্যক্রমে অসহযোগীতা করছেন। এরই জের ধরে গত ১ নভেম্বর দেবহাটার পারুলিয়া ইউনিয়নে খলিশাখালি মাছের ঘেরে সন্ত্রাসীরা অবৈধ অস্ত্র নিয়ে অস্থান করছে এমন সংবাদ পেয়ে সেখানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী অস্ত্র উদ্ধারের কার্যক্রম পরিচালনার সময় ডাকাত কামরুল ইসলাম সহ ৭ ব্যাক্তিকে আটক করেন। পরবর্তিতে গনপিটুনিতে কামরুল মারা যাওয়ার খবর পাওয়া যায়। সেই সুযোগ গ্রহন করে মহিউদ্দিন সিদ্দিকি (মৃত কামরুলের স্ত্রী) বাদীনির সাথে যোগসাযোগে করে গত ১০ নভেম্বর দেবহাটা থানায় একটি মামলা দায়ের করান। উক্ত মামলায় দেবহাটা উপজেলা বিএনপি’র আহবায়ক ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান শেখ সিরাজুল ইসলাম সিরাজ, সাবেক যুবদলের সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক, বর্তমান কমিটির সদস্য এবং পারুলিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গোলাম ফারক বাবু, এবং কালীগঞ্জ উপজেলা বি.এন.পি নেতা ও বর্তমান নলতা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আজিজুর রহমানের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে সংগঠনের কার্যক্রমে বাধা এবং সামাজিক ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করছে। বিষয়টি নিয়ে পরবর্তীতে ওই মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে বিএনপিসহ সকল অঙ্গ সংগঠন নেতাকর্মি এবং সাধারণ জনগন পারুলিয়া বাসস্ট্রান্ডে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করে। ওই মানববন্ধনে সদস্য সচিব মহিউদ্দীন সিদ্দিকীকে আসার জন্য বলা হলে তিনি না এসে উল্টো তাহার অনুসারীদের মামলার ভয় ভীতি দেখিয়ে আসতে বাধা প্রদান করে। এমনকি বিভিন্ন স্থানে বলতে থাকেন মামলার প্রেক্ষিতে ওই নেতাদের থেকে বহিষ্কার হয়ে যাবে বলেও অপপ্রচার করতে থাকে। যাহা সংগঠন বিরোধী ও অত্যান্ত আপত্তিকর বলে প্রকাশ করেছেন অভিযোগের আবেদনকারী। আরো জানান, মহিউদ্দিন সিদ্দিকি বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রী থেকে ১৯৯৩ সালে বি.এন.পি তে যোগদান করেন। এই অনুপ্রবেশ কারী যোগদানের পর থেকে সাংগঠনিক কর্মকান্ডের নামে এখনো পর্যন্ত বিশৃঙ্খলা ও দলীয় বিভাজন সৃষ্টি করে আসছে।
নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক কয়েকজন বিএনপি নেতা জানান, মহিউদ্দীন সিদ্দিকী বিগত দিন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ছত্রছায়ায় ছিলেন। বিশেষ করে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকের সাথে তা সু-সম্পর্ক ছিল। তাদের সাথে মিশে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছেন। এতে করে বিগত দিনে তার নামে রাজনৈতিক ভাবে কোন মামলা হয়নি। তিনি তৎকালিন সময় তাদের সাথে মিলে মিশে চলেছেন আর এখন তিনি তাদের সেভ করে চলেছেন। বর্তমানে তিনি তার অনুসারীদের দিয়ে বিভিন্ন স্থানে চাঁদাবাজী, দখল, প্রভাব বিস্তার করে চলেছেন। সরকারি বিভিন্ন অফিসে দালালি, তদবির সুপারিশ, ওএমএস চালের ডিলার নিয়োগ সহ সরকারি সহয়তার ক্ষেতে প্রভাব বিস্তার করে যাচ্ছেন। বিশেষ করে চররহিমপুরের চোরাঘাট নিয়ন্ত্রক আনারুল, দেবহাটা সদর ইউনিয়নের মাদক ব্যবসায়ী, চোরাঘাট নিয়ন্ত্রক ও শ্রমিকলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আরমান মেম্বর, ঘলঘলিয়ার আছাদুল সহ বিভিন্ন জনকে সেল্টার দিয়ে চলছেন। চোরাঘাট, মাদকপাচার চক্রকে নিজের নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা অব্যহত রেখেছেন। গোপাখালির একটি খাল থেকে তার নির্দেশে অসিম ও বুলবুল নামের দুই ব্যক্তি চাঁদা আদায় করেছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। তিনি ২০০৮ সাল থেকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পদাক মনিরুজ্জামান মনি, প্রায়ত সাংগঠনিক সম্পাদক আবু রায়হান, সহ-সভাপতি নজরুল চেয়ারম্যান, যুবলীগের সভাপতি মিজানুর রহমান মিন্নুর সহ বিভিন্ন নেতাকর্মীদের নিয়ে বিএনপি’র নেতাকর্মীদের বহু মামলায় আসামি করে ব্যাপক হয়রানি করা হয়। মহিউদ্দীন সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে কথা বললে তিনি বিভিন্ন ভাবে মামলা বিএনপি নেতাদের ফাঁসিয়ে দেওয়া হয়। যার প্রেক্ষিতে গত নভেম্বর মাসে ৩ বিএনপি নেতাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে।
এদিকে, গত ৩ ডিসেম্বর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশক্রমে জানানো হয়, ওয়ার্ড থেকে ইউনিয়ন, থানা, জেলা কমিটি করতে হবে। কেন্দ্রীয়, জেলা, থানা, শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক, ইউনিয়নে এইচ.এস.সি, ওয়ার্ডে এস.এস.সি পাস জেলখাটা ত্যাগীরা পদ পাবে। প্রতিটি কমিটিতে ১০০% জেলখাটা ত্যাগীরা জানতে হবে, থাকতে হবে এবং প্রকৃত বিএনপিরাও কমিটিতে থাকবে। কমিটি করার সময় কেন্দ্রীয় নেতা ও বিশেষ ক্ষমতায় জেলখাটা ত্যাগীদের ডাকতে হবে ও জানাতে হবে। কোন কমিটিতে আওয়ামী, নব-বিএনপি বিদেশ থেকে আসা, বিতর্কিত আওয়ামী সমর্থিত ফেইস বুকে ছবি আছে, আওয়ামী নেতার-কর্মীর সাথে ছবি আছে, যাদের বয়স ৬৫ উপরে তারা কোন ক্রমে কমিটিতে আসবে না। কমিটি সম্পর্কে কোন অভিযোগ থাকলে কেন্দ্রীয় দপ্তর অথবা জেলা জাতীয়তাবাদী আইনজীবি ফোরাম এর সভাপতির কাছে অভিযোগ দাখিল করা যাবে। কেন্দ্রীয় দপ্তর বা ফোরাম সভাপতি ইচ্ছা করলে অভিযোগকৃত ঐ কমিটি রাখতে বা বাতিল অথবা সংযোগজন করতে পারবে। দায়িত্বশীলরা বোর্ড গঠন করে খসরা কমিটির দায়িত্ব দিতে পারবে। বি.এনপির নব কমিটির সকলের সহযোগিতা কামনা করেছেন।
এসব অভিযোগের বিষয়ে মহিউদ্দীন সিদ্দিকীর কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সঠিক না। আমরা ১৫ বছর রাজনীতি করে জেলে গেছি, নেতাকর্মীরা সব জানে। নেতাকর্মীদের নামে দায়ের হওয়া মামলার বিষয়ে কিছুই জানি না। মামলাটি সত্য না মিথ্যা সেবিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন।