প্রিন্ট এর তারিখঃ মে ২৫, ২০২৫, ৫:১৫ এ.এম || প্রকাশের তারিখঃ ডিসেম্বর ৩১, ২০১৯, ১২:৪০ পূর্বাহ্ণ
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ সাতক্ষীরা জেলার গুরুত্বপুর্ন অংশ শ্যামনগরে অপরাপর রাজনৈতিক সংগঠনগুলো যখন নিজেদের গুছিয়ে নিয়ে সামনের দিকে অগ্রসরমান ঠিক তখনই সম্পুর্ন ভিন্ন চিত্র বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রজনৈতিক সংগঠন বাংলাদেশ জাতীয়বাদী দল (বিএনপি) এর।
আত্মকোন্দল, সুবিধাবাদী মানসিকতা আর কর্মী সমর্থকদের থেকে নেতাদের যোজন যোজন দুরের অবস্থান স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশে চার বার সরকার পরিচালনকারী সংগঠনটিকে ক্রমেই দুর্বল করে তুলেছে।
শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের হাতে গড়া বিএনপির এমন দুরাবস্থা মেনে নিতে না পেরে উপকুলবর্তী এ অঞ্চলের অনেক নেতা ইতিমধ্যে বিএনপির রাজনীতি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। বিশেষ করে বিভাজনের রাজনীতি ও ত্যাগী কর্মী সমর্থকদের মুল্যায়ন না করাসহ ‘হাইব্রিড’ ব্যক্তিরা নেতাদের কাছের মানুষ হয়ে যাওয়ায় এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে শহীদ জিয়া প্রনীত আদর্শচ্যুত হয়ে এবং বেগম খালেদা জিয়া ও তারুন্যের অপহংকার তারেক রহমানের নির্দেশনার বাইরে যেয়ে রাজনীতি করার অপচেষ্টায় দিনকে দিন শ্যামনগরের বিএনপি দুর্বল হয়ে পড়ছে।
অর্থের বিনিময়ে ভিন্নমতের ব্যক্তিদের ইউপি নির্বাচনে মনোনয়ন দেয়াসহ কমিটি গঠন নিয়ে অর্থ বানিজ্য এবং দলীয়কর্মসুচিসহ সভা-সমাবেশে উপস্থিত কর্মী সর্মথকদের জন্যে অর্থ খরচ করার ক্ষেত্রে নেতাদের কৃপনতা স্থানীয় বিএনপির দৈন্যদশাকে উম্মুক্ত করে দিয়েছে।
সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড বিএনপি নিচু সারির নেতাকর্মী সমর্থকদের সাথে কথা বলে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের হাতে গড়া দলটির এমন চিত্র ফুটে উঠেছে।
উল্লেখ্য এক সময় শহীদ জিয়া প্রনীত অর্থনৈতিক সংস্কার সহায়ক ১৯ দফা কর্মসূচি এক সময়ে সারা বাংলার মানুষের মাঝে ব্যাপক সাড়া জাগায়। তাতে অল্প দিনের মধ্যে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি দেশের বৃহত্তম একটি রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে আবির্ভুত হতে সক্ষম হয়। পরবর্তীতে আশির দশকে দীর্ঘ নয় বছরের স্বৈরশাসন বিরোধী আন্দোলন সংগ্রামে বেগম খালেদা জিয়ার আপোষহীন ভুমিকার কারনে বিএনপি বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপুর্ন রাজনৈতিক সংগঠনের রুপ নিয়ে গনমানুষের দলে পরিনত হয়।
এসময় কেন্দ্রের পাশাপাশি সারা দেশের মত সুন্দরবন সংলগ্ন উপকুলীয় অঞ্চল শ্যামনগরেও বিএনপি একটি রাজিৈনক সংগঠনে পরিনত হয় এবং গনমানুষের মুখপাত্রের স্বীকৃতি লাভ করে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়।
কিন্তু ২০০১ সালে বিএনপি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসার পর থেকে কতিপয় নেতার নানান বিতর্কিত কর্মকান্ডের পাশাপাশি দলীয় কোন্ধর চরম আকার ধারন করলে বিএনপির রাজনীতি নিম্মমুখী হতে শুরু করে বলে কর্মী সমর্থকদের দাবি।
প্রায় এক যুগ ধরে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার বাইরে থাকা এ রাজনৈতিক সংগঠনের প্রায় তিন লাখ নেতাকর্মীর নামে বর্তমানে প্রায় এক লাখ সাত হাজার মামলা বিচারাধীন থাকা সত্তে¡ও জিয়া-খালেদা-তারেক রহমানের আদর্শের সৈনিকরা সারাদেশে আজও বিএনপির পতাকাতলে সমবেত।
হামলা মামলা অত্যাচার নির্যাতন হয়রানীসহ সকল ভয়-ডরকে উপেক্ষা করে আজও লক্ষ-কোটি বিএনপি নেতাকর্মী কর্মী ও সমর্থক অন্তরে ধারন করা শহীদ জিয়ার আদর্শ থেকে এতটুকু বিচ্যুত হয়নি।
কিন্তু সম্পুর্ন বিপরীত অবস্থা বিরাজ করছে শ্যামনগরে। উপজেলা বিএনপির পাশাপাশি দলটির এমন কোন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন নেই যার পুর্নাঙ্গ কমিটি রয়েছে। অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন তো দুরের কথা মুল দলেরই ঠিক কবে সর্বশেষ সভা হয়েছে তাও নিশ্চিত করে বলতে পারেন না নেতাকর্মীরা।
আর শ্যামনগর বিএনপির এমন দুরাবস্থার জন্য মুলত শীর্ষ নেতাদের পকেট কমিটি গঠনের প্রবনতার পাশাপাশি প্রধান প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক সংগঠনের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের সাথে গোপন আতাঁতের অভিযোগ খোদ বিএনপি কর্মী সমর্থকদেরই।
অভিযোগ রয়েছে কর্মী সর্মথকদের উজ্জীবিত করার পরিবর্তে স্থানীয় বিএনপির শীর্ষ নেতারা চুপচাপ পরিস্থিতি বুঝে চলার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। শীর্ষ কোন নেতা অদ্যাবধি জেল-জুলুমের শিকার (রাজনৈতিক কর্মসুচ পালনের জন্য) না হলেও উপজেলা বিএনপির হাজার হাজার নেতা ডজন ডজন মামলার আসামী হয়ে একাধিকবার কারাবাস করলেও ছাত্রদলের কতিপয় নেতা ছাড়া কারাবরনকারীদের দেখতে কেউ কখনও জেলগেটে গেছেন এমন তথ্যও কোন নেতাকর্মী বা সমর্থকরা দিতে পারেনি।
রাজনীতিবমিুখ হওয়া নেতাকর্মী ও সর্মথকদের অভিযোগ এক সময়ের বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিতি পাওয়া সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার শীর্ষ নেতারা নিজস্ব এক একটি বলয় সৃষ্টি করে পকেটের লোকজনকে কমিটি করেন। তাদের এহেন ক্ষমতা কুক্ষিগত করার মানসিকতার কারনে স্থানীয় বিএনপির রাজনীতি এখন স্মৃতির অতলে হারিয়ে যেতে বসেছে। দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত ও ত্যাগী নেতাকর্মীদের মুল্যায়ন না করে বরং সুবিধাবাদী গোষ্ঠীকে দল ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের গুরুত্বপুর্ন পদে আনতে শীর্ষ নেতাদের প্রানান্তকর চেষ্টা স্থানীয় বিএনপির রাজনীতিকে কলুষিত করছে।
কর্মী এবং সমর্থকদের অভিযোগ যারা এক সময় শহীদ জিয়া, খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানের সমালোচনা করে পিঠ বাঁচিয়ে চলার চেষ্টায় তৎপর ছিলেন, আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী রাজনীতিকদের ছত্রছায়ায় থেকে ধরাছোয়ার বাইরে ছিলেন তারাই এখন আবারও দলের নেতৃত্বে আসার পায়তারা শুরু করছেন। এসব নেতাকর্মীর আরও অভিযোগ যারা দশম জাতীয় নির্বাচনের পর অওয়ামীলীগ দলীয় সংসদ সদস্যের সংবর্ধনা সভায় অংশ নিয়ে “৫ জানুয়ারীরর নির্বাচনের অবশ্যই প্রয়োজন ছিল” বলে প্রকাশ্যে বক্তব্য দিয়েছিলেন, যারা সদ্য অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়েছেন, নৌকার পক্ষে প্রচারনায় অংশ নিয়েছেন- তারাও এখন উপজেলা বিএনপির গুরুত্বপুর্ন পদে যেতে দিনরাত একাকার করে দৌড়াচ্ছেন।
এমনকি গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে শুরুতে (কৈখালী ইউনিয়নে) আওয়ামীলীগের প্রার্থী হওয়ার জন্য নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রচারনা চালানো এক ব্যক্তিকে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে (আওয়ামীলীগ থেকে প্রত্য্যখ্যাত হওয়ার পর) বিএনপির পক্ষে নির্বাচনে অংশ গ্রহনের সুযোগ করে দেয় স্থানীয় কতিপয় বিএনপি নেতা। অথচ একই ইউনিয়নে দীর্ঘ বাইশ বছর ধরে বিএনপির সভাপতির দায়িত্ব পালনকারী দলের দুর্দিনের কান্ডারী আবুল খায়ের মল্লিককে কোন সুযোগ না দিয়ে মৌসুমী পাখিকে সুযোগ দিয়ে উপজেলা ও জেলা বিএনপির একটি মহল শুধু টাকার কাছে নিজেদের বিকিয়ে দিয়ে অনন্য নজীর সৃষ্টি করে গোটা এলাকায় তীব্র সমালোচনার খোরাক হয়েছিলেন।
নির্ভরযোগ্য একটি সুত্র আরও জানিয়েছে শুরুতে আওয়ামীলীগের মনোননয়ন চেয়ে ব্যর্থ হয়ে বিএনপির টিকিটে নির্বাচন করে পরাজিত হওয়া ঐ ব্যক্তি এখন উপজেলা বিএনপি সভাপতি ও তার পুত্রের সবচেয়ে আস্থাভাজন হওয়ায় তাকে পরবর্তী কমিটির যুগ্ম-সম্পাদক বা সাংগঠনিক সম্পাদকের মত গুরুত্বপুর্ন পদ দেয়ার চক্রান্ত চলছে।
বাদঘাটা গ্রামের পাঁচ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপি নেতা নুর ইসলামসহ অনেকের অভিযোগ, এক যুগেরও বেশী সময় আগে অনুষ্ঠিত সম্মেলনের পর থেকে অদ্যাবধি ঐ কমিটি বহাল তবিয়তে রয়েছে। এর মধ্যে অনেকে দল ত্যাগ করে ভিন্ন শিবিরে যোগ দেয়া সত্তে¡ও উপজেলা বিএনপির এক শীর্ষ নেতা ও তার প্রধান পরামর্শক সন্তানের অনাগ্রহে উপজেলা বিএনপিকে পুনর্গঠনের কোন উদ্যোগই গ্রহন করা হচ্ছে না দীর্ঘদিন ধরে।
তৃনমুলের এসব নেতাদের অভিযোগ পদ হারানোর ভয়ে সম্মেলন করে নুতন নেতৃত্ব গড়ে তোলার ব্যাপারে শীর্ষ নেতাদের যেমন কোন আগ্রহ নেই, তেমনী অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের জেলা কমিটিসমুহকে ম্যানেজ করে তারা বিভিন্ন সময়ে পকেট কমিটি এনে নামকাওয়াস্তে কার্যক্রম চালিয়ে নিচ্ছে। মুলত বাপ-বেটার যুগল পরিকল্পনায় শ্যামনগর উপজেলার এমন করুন দশা দেখতে হচ্ছে বলেও অনেক ত্যাগী নেতাকর্মী ও সমর্থকদের দাবি।
ক্ষুব্ধ অসংখ্য নেতাকর্মী জানান উপজেলা বিএনপির সামগ্রিক কর্মকান্ড পরিচালিত হয় উপজেলা সভাপতি মাষ্টার আব্দুল ওয়াহেদ এবং তার ছেলে মাসুদুল আলম দোহার নির্দেশনায়। এই দুই ব্যক্তির একক সিদ্ধান্তের কারনে দিনে দিনে উপজেলা বিএনপির কার্যক্রমে স্থবিরতা নেমে এসেছে।
প্রায় অভিন্ন অভিযোগ করেন উপজেলা সদর ইউনিয়ন বিএনপি নেতা আমিনুর রহমান। তিনি বলেন, রাজনীতি করতে হয় মাঠে। কিন্তু বর্তমান উপজেলা বিএনপির শীর্ষ নেতারা শোবার ঘরে বসে বসে রাজনীতি চর্চা করায় বিএনপির রাজনীতি থেকে মানুষ মুখ ফিরিয়ে নিতে শুরু করেছে।
দীর্ঘ এক যুগেরও বেশী সময় ধরে উপজেলা বিএনপি একটি দলীয় কার্যালয় এর ব্যবস্থা করতে পারেনি উল্লেখ করে সোহরাব হোসেন নামের এক বিএনপি কর্মী বলেন, নিতান্ত কেন্দ্রের নির্দেশে কোন কর্মসূচি পালন করতে হলে সভাপতি সাহেব তার বৈঠকখানায় কয়েকটি চেয়ার নিয়ে একটি ব্যানার টানিয়ে নিজস্ব আট/দশ জন মানুষকে জড়ো করে কোন রকমে একটি ছবি তুলে তা পত্রিকা বা সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দিয়ে দায়িত্ব এড়িয়ে যান। সভাপতির এহেন কর্মকান্ডের কারনে অসংখ্যা দলীয় নেতকার্মী উস্মা প্রকাশ করেন বলেও তিনি অভিযোগ করেন।
দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত থাকা সত্তে¡ও সংকটময় মুহুর্তে উপজেলা বিএনপির শীর্ষ নেতা কিংবা তার পরিবারের নাগাল পাওয়া যায়না উল্লেখ করে অসংথ্য নেতাকর্মী অভিযোগ করে বলেন, ইতিপুর্বে কেন্দ্রীয় কর্মসুচি পালনের সময় তাদেরকে রীতিমত শাসানো হয়েছে। কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসুচি পালনের সময় ছাড়াও বেগম খালেদা জিয়াকে তার ৪৩ বছরের স্মৃতি বিজড়িত বাড়ি থেকে বের করে দেয়ার সময়েও স্থানীয় নেতাকর্মীরা সমর্থকরা মিছিল বের করলে উপজেলা বিএনপি সভাপতিসহ তাদের কয়েক গুনধর কর্মী মিছিলকারীদের নানাভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শন করেছিলেন। এছাড়া মামলা মোকদ্দমাসহ কোন ধরনের রাজনৈতিক ঝক্কি ঝামেলায় পড়ার পর শীর্ষ এসব নেতাদের পাশে না পেয়ে ইতিমধ্যে অসংখ্য নেতাকর্মী সমর্থক এখন রাজনীতি বিমুখ হয়ে পড়েছেন বলেও প্রতিবেদককে অবহিত করেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ককেটি সুত্র জানায় বিএনপি সভাপতির ছেলে স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মী সমর্থকদের থেকে আওয়ামীলীগ ঘরানার বিশিষ্ট কয়েক জনের সাথে দারুন সখ্যতা বজায় রাখেন অজ্ঞাত কারনে। তিনি যখনই ঢাকা থেকে বাড়িতে আসেন তখন তার সমবয়সী এবং দু’তিন বছরের সিনিয়র প্রভাবশালী কয়েকজন আওয়ামীলীগের প্রথমসারীর নেতাকে বাসায় দাওয়াত করে খাওয়ান বলেও অভিযোগ রয়েছে।
তবে উপজেলা বিএনপি সভাপতি বা তার ছেলেই শুধু নয়। বরং উপজেলা বিএনপির গুরুত্বপুর্ন পদে আসতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করা অসংখ্য নেতা এখন মৌসুমী পাখির মত কেন্দ্রীয় নেতাদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন উপজেলা বিএনপির গুরুত্বপুর্ন পদটি বাগিয়ে নিতে। অথচ তারাই কিনা এক সময় জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়াসহ তারুন্যের প্রতীক তারেক রহমানকে নিয়ে কটাক্ষভরা মন্তব্য করে বিরোধীদের কাছে বাহাবা কুড়িয়েছিলেন চেষ্টা করেছেন পিঠ বাঁচাতে।
কয়েকজন বিএনপি কর্মী ও নেতা দাবি করেন, দল ক্ষমতায় না থাকার পরও আশেক-ই এলাহী মুন্না গত দশ বছরেরও বেশী সময়ে বহাল তবিয়তে রয়েছেন। স্ত্রীকে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত করার পাশাপাশি তিনি প্রভাবশালী একাধিক আওয়ামীলীগ নেতাদের ছত্রছায়ায় থেকে সব সময় ধরাছোয়ার বাইরে অবস্থান করেছেন। দুই তিন বার গ্রেফতার হলেও নানা কৌশলে এবং প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপে তিনি স্বল্প সময়ের ব্যবধানে কারামুক্ত হয়ে নিজের ব্যবসায়িক কাজে মনোনিবেশ করলেও দলীয় কর্মসুচিতে তাকে কখনও সোচ্চার কোন ভূমিকায় দেখা যায়নি। বরং তিনি আলিশান বাড়ি তৈরীসহ তার ব্যবসা বানিজ্য নিয়ে ব্যস্ত থাকার কারনে কখনই দলীয় কোন কর্মসুচিতে সেভাবে অংশ গ্রহন করেনি।
একইভাবে বিএনপির টিকিটে পুরুষ ও নারী উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী হওয়া দুই বিএনপি নেতা মহসীন উল মুলক ও নুরজাহান পারভীন ঝরনা নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর থেকে মুলত আওয়ামী ঘরানার হয়ে মেয়াদকালজুড়ে কেবলই নিজেদের আখেরই গুছিয়েছেন। বিএনপির মনোনয়ন পাওয়া এ দুই নেতার দিয়ে তাদের নিকট জনের বাইরে কেউ কোনদিন কোন উপকার পেয়েছে কিংবা দুঃসময়ে পাশে পেয়েছে এমন উদাহরন হাতড়িয়ে কুঁজে পাওয়া যাবে না বলে অভিযোগ খোদ বিএনপি কর্মী সমর্থকদের।
উল্লেখ্য এবারও উপজেলা বিএনপির গুরুত্বপুর্ন পদে প্রতিদ্ব›দ্বীতার জন্য সুবিধাবাদী এসব নেতা নেত্রীরা প্রস্তুতি নিচ্ছেন। নেতাকর্মী সমর্থকদের অভিযোগ যখন রাতের পর রাত নির্ঘুম বাড়ি ছাড়া হয়ে পলায়নপর জীবনযাপন করেছেন- তখন এসব সুবিধাবাদি জনপ্রতিনিধিরা ন্যুনতম সাহায্য সহযোগীতা করাতো দুরের থাক, একটু খোঁজ খবর পর্যন্ত নেয়নি।
উপজেলা বিএনপির ক্ষুব্ধ বেশ কয়েক নেতাকর্মী জানান ওয়ান ইলাভেন এর সময় দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া গ্রেফতার হওয়ার পর সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন “ওসব দলপাটি বাদ দিছি, কে গ্রেফতার হলো আর কে বাইরে থাকলো তা আমার জানার কি দরকার’ - বলে বিএনপির তীব্র সমালোচনা করেছিলেন। অথচ সেই আমজাদুল ইসলামসহ নুরনগরের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান যিনি বিএনপি ক্ষমতা থেকে যাওয়ার পর অদ্যবধি একটি সভা-সমাবেশে অংশ নেয়নি সেই গোলাম আলমগীরকে নিয়ে বর্তমান সভাপতি আবার পকেট কমিটি নেয়ার সর্বোত চেষ্টা চালাচ্ছেন বলে নেতাকর্মীদের অভিযোগ। ডিএম আব্দুস সামাদ যিনি বিএনপি অফিসকে ‘মিনি বাজার’ বানিয়েছিলেন, তিনিও আসন্ন কমিটিতে জায়গা পেতে বেশ তোড়জোড় শুরু করেছেন বলেও জানা গেছে।
এদিকে বর্তমান সভাপতির শ্যালক সদর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী বাবু চেয়ারম্যান হওয়ার পর থেকে বিএনপি নেতাকর্মীদের তুলনায় ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীদের বেশী প্রাধান্য দেয়ার কারনে তিনিও এখন বিএনপি নেতাকর্মী সমর্থকদের থেকে যোজন যোজন দুরে।
যে কারনে স্থানীয় তথা তৃনমুল বিএনপি নেতাকর্মী কর্মী এবং সমর্থকদের দাবি শ্যামনগর উপজেলা বিএনপির কমিটি করতে হবে সম্মেলনের মাধ্যমে। এছাড়া উপজেলা বিএনপির সম্মেলনের আগেই প্রতিটি ওয়ার্ডে সম্মেলন করতে হবে। যাতে সত্যিকারের তাগী এবং কর্মঠ নেতাকর্মী সমর্থকরা সংগঠনে জায়গা পেতে পারে।
এদিকে অভিযোগ রয়েছে উপজেলা বিএনপির সভাপতির ছেলে তার ভগ্নিপতির গোপালপুর পিকনিক কর্নারের বিবাদমান জমির বিষয় নিয়ে স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতাদের সাথে ঝামেলায় জড়িয়ে সংঘর্ষের পর বিষয়টিকে রাজনৈতিক রং দিয়ে কেন্দ্রে প্রচারনা চালিয়ে গুরুত্বপুর্ন পদ বাগিয়ে নেয়ার চেষ্টায় তৎপর রয়েছেন। ইতিমধ্যে তিনি শ্যামনগরকে পৌরসভা ঘোষনা করার পর থেকে তিনি নিজেকে মেয়র প্রার্থী হিসেবেও প্রচারনা শুরু করেছেন। উল্লেখ্য এর আগে তার পিতা উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল ওয়াহেদ শ্যামনগর সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এবং তার মামা লিয়াকত আলী তৎপরবর্তী সময়ে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করলেও পরবর্তীতে বর্তমান চেয়ারম্যানের কাছে বিপুল ভোটে পর্যদুস্থ হন।
স্থানীয়দের অভিযোগ এই পরিবারটির পরিবারতন্ত্রের কারনে উপজেলা বিএনপির রাজনৈতিক কার্যক্রম যেমন নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছে, তেমনী তাদের এমন পরিবারতন্ত্রের কারনে নুতন কোন রাজনৈতিক নেতৃত্বের বিকাশ ঘটছে না। এক কথায় এক সময়ের জৌলুসেভরা বিএনপি এখন একটিমাত্র পরিবারের আত্মকেন্দ্রীক মানসিকতার কারনে দেওলিয়াপনার শেষ পর্যায়ে পৌছেছে।
অভিযোগ রয়েছে উপজেলা বিএনপির সভাপতি নিজে সাবেক প্রধান শিক্ষক হওয়ার কারনে অন্যেও মতামতকে খুব একটা গুরুত্ব দেন না। উল্লেখ্য ৩০ ডিসেম্বর একাদশ নির্বাচনের প্রাক্কালে উপজেলা বিএনপির এক কর্মীর পক্ষ থেকে ধানের শীষে ভোট প্রার্থনা ও দেশনেত্রীর মুক্তির আবেদন জানিয়ে শ্যামনগরের বিভিন্ন এলাকায় লিফলেট বিরত করা হলে উপজেলা বিএনপির সভাপতি বিষয়টি নিয়ে তীব্র ভৎর্সনা করেন।
এদিকে অভিযোগ উঠেছে উপজেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক পদ ছেড়ে আওয়ামীলীগে যোগদানকারী সাদেকুর রহমান সাদেম ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের পর আওয়ামীলীগে যোগ দেন। কিন্তু ৩০ ডিসেম্বর সকালে ভোট ্রগহনের শুরু থেকেই তার ভাই আব্দুল ওঞাব, ডালিম ও হালিমসহ তার পরিবারের লোকজনের পাশাপাশি কর্মী সমর্থকরা নৌকার পক্ষে নিজেদের কেন্দ্রে প্রকাশ্যে তৎপরতা চালিয়েছিলেন। আসন্ন উপজেলা বিএনপির কমিটিতে গুরুত্বপুর্ন পদে জায়গা পেতে ৩০ ডিসেম্বর সকাল থেকে নৌকা প্রতীকের ছবি বুকে ঝুলিয়ে নৌকার পক্ষে কাজ করা ডালিম ও হালিমসহ তার ভাইরা আবারও সক্রিয় হয়েছেন বিএনপির গুরুত্বপুর্ন লাভের জন্য। নৌকার প্রতীক ধারন না করলেও উপজেলা বিএনপির সাবেক ঐ সাধারন সম্পাদকের ভাই ব্যক্তিগত কারনে ধানের শীষ প্রার্থীর বিপক্ষে তাকার সিদ্ধান্তের কথা আগেই জানিয়েছিলেন।
অভিযোগ রয়েছে বিএনপির পরেই যুবদলেল ভুমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ন হওয়া সত্তে¡ও কমিটি পাওয়ার বাইরে গত এক দশকে কখনও সংগঠনটির নেতাদের সক্রিয় দেখা যায়নি। যুবদল সভাপতি আজিবর রহমান ও সম্পাদক সফিকুল ইসলাম দুলু নিজেদের ব্যবসা বানিজ্য নিয়ে তৎপর থাকলেও কখনই ভুলেও সংগঠনকে সক্রিয় করার চেষ্টা চালাননি।
উল্লেখ্য ্ইতিপুর্বে শ্যামনগর উপজেলা বিএনপি আব্দুল ওয়াহেদ ও সাদেকুর রহমান- এ দুই ভাগে বিভক্ত ছিল। কিন্তু একাদশ নির্বাচনের পুর্বে সাধারন সম্পাদকের ভাই ডালিমসহ অন্যরা প্রকাশ্যে নৌকার পক্ষে প্রচারনা চালালেও নির্বাচনের সপ্তাহকাল পরেই জেলা আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দের হাতে ফুলের তোড়া উঠিয়ে দিয়ে সাদেকুর রহমানও আওয়ামীলীগে যোগদান করেন। ফলে দীর্ঘদিনের পথের কাট দুর হওয়ায় আব্দুল ওয়াহেদ এবং তার ছেলের মাথার চিন্তা দুর হতেই তারা তাদের পকেটের মানুষদের নিয়ে আবারও একটি নিস্কর্ম এবং আঙুলি হেলনে চলতে অভ্যস্থ একটি কমিটি গঠনের জন্য তৎপরতা শুরু করেছে।
বিএনপি কর্মী বংশীপুর গ্রামের হুমায়ন কবীর বলেন, প্রায় দুই দশক ধরে শ্যামনগর বিএনপির নেতৃত্ব একটি পরিবারের হাতে জিম্মি হয়ে রয়েছে। শহীদ জিয়ার আদর্শকে বাস্তবায়নসহ বেগম খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানের হাতকে শক্তিশালি করে সোনার বাংলা গড়ে তোলার জন্য দেশের অপরাপর জেলা উপজেলার মত আমাদের উপজেলাতেও কর্মী সম্মেলনের মাধ্যমে নুতন নেতৃত্ব গড়ে তুলতে হবে। অন্যথা বিএনপিকে আগামীকে হাতড়িয়ে খুঁজে পাওয়া যাবে না বলেও তিনি তার অভিমত ব্যক্ত করেন।
স্থানীয় নেতাদের অভিযোগ মাঝেমধ্যে ১০/১২ জন মিলে মাইক্রো ভর্তি করে জেলা নেতাদের সাথে সৌজন্য সাক্ষাতের মধ্যে মুলত আপাতত শ্যামনগর উপজেলা বিএনপির রাজনীতি সীমাবদ্ধ। এমনও অভিযোগ রয়েছে শুধুমাত্র রাজনৈতিক কারনে কাশিমাড়ী বিএনপির সাধারন সম্পাদক অলিউল্লাহ মোল্যা পুলিশের হাতে নির্মমভাবে নিহত হওয়ার পর কেন্দ্র থেকে তার পরিবারের খোঁজ নেয়া হয়। অথচ স্থানীয় নিচু সারির দুই/একজনের বাইরে বিএনপির শীর্ষ কোন নেতা কখনই অলিউল্লাহ মোল্যার পরিবারের খোঁজ খবর নেয় না।
তবে স্থানীয় বিএনপির দুর্বলতা, বিভিন্ন অভিযোগসহ নানা বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা বিএনপি সভাপতির ছেলে এবং উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক এ্যাডভোকেট মাসুদুল আলম দোহা জানায় জেলা বিএনপির কমিটি দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে রয়েছে। কেন্দ্র থেকে নির্দেশ না পাওয়ায় জেলা উপজেলা কমিটি গঠনের জন্য কোন নির্দেশণা বা সম্মেলনের বিষয়ে পরামর্শ দিতে পারে না।
পিতা সভাপতি হওয়ার কারনে বড় ছেলে হিসেবে তিনি পিতার সাথে রাজনীতি নিয়ে স্বল্পবিস্তর পরামর্শ করেন স্বীকার করে তিনি আরও বলেন আমরাও চাই মুল দলসহ প্রতিটি অঙ্গ ও সবহযোগী সংগঠনের নেতৃত্ব সম্মেলনের মাধ্যমে নির্ধারিত হোক। সেক্ষেত্রে দল চাঙ্গা হবে। আওয়ামীলীগে নেতাদের নিয়ে গোপনে ভুরিভেজের বিষয়ে তিনি প্রত্যাখান করে জানান জিয়াউর রহমানের শাহাদাৎ বার্ষিকী ও বিএনপির প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালন করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন সারা দেশে কম বেশী দলীয় কর্মসুচি হলেও সাতক্ষীরাতে হচ্ছে না। তার ধারাবাহিকতায় শ্যামনগরেও হয়ত হচ্ছে না। সেজন্য স্থানীয় নেতৃবৃন্দকে দায়ি করা যায় না।
এবিষয়ে উপজেলা বিএনপির সভাপতি মাষ্টার আব্দুল ওয়াহেদ বলেন, সম্প্রতি সাতক্ষীরা জেলার আহবায়ক কমিটি দেয়া হেেছ। জেলা কমিটি গঠনের পর তাদের নির্দেশনায় উপজেলা কমিটি গঠনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
উপজেলা বিএনপির এ শীর্র্ষ নেতা আরও বলেন যারা ইতিপুর্বে দলের দুর্দিনে নেতাকর্মীসহ দলের সাথে বিমাতাসুলভ আচারন করেছে, দলের দুর্নামের কারন হয়েছে তাদেরকে বাদ দিয়ে সময়োপযোগী একটি কমিটি উপহার দেয়ার চেষ্টা করা হবে। তবে পরিবারতন্ত্রের অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, যে যার যোগ্যতার ভিত্তিতে দলে জায়গা করে নেবেন। যারা দলের দুঃসময়ে দলের সাথে বেঈমানী করেছেন তাদেরকে দলে কোন জায়গা দেবে না বিএনপির নেতাকর্মী সমর্থকরা।