বাইপাস এর স্টেডিয়াম এর ধারে বিশাল সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালই বলি, আর দক্ষিণ কলকাতার মুকুন্দপুরের সারি সারি ঝাঁ চকচকে হাসপাতালগুলিই বলি, লকডাউন এর ফলে বাংলাদেশ থেকে রোগী আসা বন্ধ থাকায় সবেরই নাভিশ্বাস। দীর্ঘদিন ওপিডি বন্ধ রেখেছিলো হাসপাতালগুলি, কিন্তু সরকারের নির্দেশে সেগুলি একে একে খুলছে। কিন্তু বিমান যোগাযোগ বন্ধ, চলছে না মৈত্রী ট্রেন, সড়ক পথও বন্ধ। বাংলাদেশি রোগী না থাকায় ধুঁকছে হাসপাতালগুলি। শুধু কি হাসপাতাল? এই হাসপাতালগুলোকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা হোটেল, গেস্ট হাউস, ভাতের হোটেল, মুদ্রা বিনিময় কেন্দ্র, ওষুধের দোকানগুলোও বিপন্ন বাংলাদেশের রোগী না থাকায়। শনিবার সকালে সরজমিনে দেখতে গিয়েছিলাম এইরকমই একটি সুপারস্পেশালিটি হাসপাতালে, মুকুন্দপুরে। হাসপাতালের বিখ্যাত কার্ডিওলজিস্ট বললেন, আমাদের হাসপাতালের নাম ডাক আছে হার্ট এর চিকিৎসার জন্যে। কিন্তু প্রায় পঞ্চান্ন শতাংশ রোগী আসে বাংলাদেশ থেকে।
বাংলাদেশের রোগীদের জন্যে স্পেশাল প্যাকেজও আছে। ওঁরা আসতে পারছেন না। দেখুন কেমন শুনশান। দেখলাম তাই। ওপিডি তে অন্যসময় রোগীর ভিড়ে হাঁটা দায় হয়। এদিন ওপিডি যেন ভোরের ময়দান। এই হাসপাতালের বাইরে একটি গেস্টহাউসের মালিক বললেন, একজন রোগী মানে অন্তত তিনজন সঙ্গী। আমার গেস্টহাউস কোনোদিন খালি থাকতো না। এখন দেখুন সব শূন্য। গেস্টহাউসের পাশেই একটি চা সিঙ্গারার দোকানে দেখা হলো নারায়ণগঞ্জের বদরুদ্দীন মিয়ার সঙ্গে। ফুফার হার্ট এর চিকিৎসা করাতে এসেছিলেন। লকডাউন এর দুদিন আগে অপারেশন হয়। আটকে পড়েছেন। ফুফা এখন অনেক ভালো। লকডাউন উঠলেই বাড়ি নিয়ে যাবেন। বললেন, অনেক বাড়তি খরচ হয়ে গেল। বাজেট এর বাইরে চলে গেল ব্যাপারটা। লকডাউন উঠলেও হাসপাতালগুলো ছন্দে ফিরতে আরো কয়েক মাস সময় লাগবে মনে করছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। মুকুন্দপুর হাসপাতালের বাইরে এলে মনে হতো এক টুকরো বাংলাদেশ যেন উঠে এসেছে কলকাতায়। শনিবার বাংলাদেশের হৃদয়ের সেই শব্দ শোনা গেল না।