এস.এম.পিন্টু: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনীতির মাঠে সরব হয়ে ওঠছেন অনেকেই। সরাবছর দেখা নেই, কোন যোগাযোগ নেই এমন ব্যক্তিরাও হঠাৎ উদয় হয়ে ছুটছেন ঢাকায়, কিনছেন মনোনয়ন ফরম। ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগের টিকেট পেতে শুরু করেছেন তদবীর। টিকেট পেলেই যেন তাঁরা এমপি হয়ে যাবেন এমন মুডেও আছেন কেউকেউ। ফলে এখন রাজনীতি বা জনসেবার ধারে কাছে না গিয়েও ভোটে দাঁড়াতে চান অতিথি পাখির দল বা বসন্তের কোকিলও। চট্টগ্রাম শহর ও উপজেলায় অনেক লোকের সাথে কথা বলে এমনটিই ফুটে ওঠেছে। তবে রাজনীতি করেন না বা জনগণের সাথে সম্পৃক্ততা নেই এমন লোককে মনোনয়ন না দেয়ার পক্ষেই মতামত সাধারণ জনতা ও দলীয় সিনিয়র নেতাদের। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় সুত্রে জানা গেছে ৩০০ আসনের বিপরীতে ৪ দিনে দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি হয়েছে ৩৩৬২টি। গড়ে প্রতি আসনে ১১ জনের অধিক প্রার্থী রয়েছে। দলীয় সুত্র দাবী করছে যারা এমপি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন তাদের প্রত্যেকেরই একটা ভোট ব্যাংক থাকা উচিত। প্রার্থীদের তালিকা অনুযায়ী বুঝা যায় আওয়ামী লীগের প্রচুর ভোট রয়েছে। দল যেহেতেু একজনকে মনোনয়ন দিবে তাহলে সবাই একজোট হয়ে কাজ করলে খুব সহজেই দলীয় প্রার্থী জিতবে। অপর একটি সুত্র জানায়, বছরের পর বছর মাঠের রাজনীতিতে দেখা নাই, নির্বাচনী এলাকার জনসাধারণের সাথে যোগাযোগ নাই, নিজের ব্যবসা বাণিজ্য ও পরিবার নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করেছেন এমন ব্যক্তিরাও হঠাৎ করে জেগে ওঠেছেন নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার জন্য। সারাবছর বিদেশে কাটিয়েছেন, এলাকার ভোটাররা ভালো করে চিনেওনা এমন লোকও কিনেছেন মনোনয়ন ফরম। অপেক্ষা করছেন গ্রীণ সিগন্যালের। এধরণের লোকদের দলীয় মনোনয়ন দেয়া হলে ভোটের মাঠে লজ্জাজনক পরাজয় হবে বলেও মনে করছেন অনেকে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় একাধিক নেতা জানান, দলীয় মনোনয়ন ফরম যে কেউ কিনতে পারে। কিন্তু চুড়ান্ত মনোনয়নের সিদ্ধান্ত দেয়ার আগে চুল ছেড়া বিশ্লেষণ করা হবে। মাঠের অবস্থান ভালো না হলে তাদেরকে কোনভাবেই মনোনয়ন দেয়া হবেনা। গতকাল মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) সন্ধ্যায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া গণমাধ্যমকে জানান, গত চার দিনে সর্বমোট তিন হাজার ৩৬২ জন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কিনেছেন এবং জমা দিয়েছেন। অনলাইন আবেদন করেছেন ১২১ জন। এতে পাওয়া গেছে মোট ১৬ কোটি ৮১ লাখ টাকা। এর মধ্যে চট্টগ্রাম বিভাগের ৬৫৯ জন মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। তারমধ্যে চট্টগ্রাম মহানগর ও জেলার ১৬টি আসনে মনোনয়ন দৌড়ে আছেন ২০৩ জন প্রার্থী।
প্রসঙ্গত চট্টগ্রাম থেকে সংসদ নির্বাচনের মনোনয়ন ফরম যারা সংগ্রহ করেছেন তাদের মধ্যে রাজনীতির মাঠে ও ভোটারের কাছে যথেষ্ঠ সুনাম রয়েছে এমন প্রার্থীও কম নয়। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য: চট্টগ্রাম-০১ (মিরসরাই) আসনের বর্তমান সাংসদ ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের পুত্র মাহবুব উর রহমান রুহেল, গিয়াস উদ্দিন ও একেএম বেলায়েত হোসেনসহ আরও তিনজন। চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) সংরক্ষিত মহিলা আসনের বর্তমান সাংসদ খাদিজাতুল আনোয়ার সনি, চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এটিএম পেয়ারুল ইসলাম, এম আর আজিমসহ আরো ১৯ জন দলীয় মনোনয়নপত্র নিয়েছেন। চট্টগ্রাম-৩ (সন্দ্বীপ) আসনের বর্তমান সাংসদ মাহফুজুর রহমান মিতা, ডা. জামাল উদ্দিন চৌধুরী, জাফর উল্যা টিটু, সেলিম উদ্দিন হায়দার, এ,কে, এম বেলায়েত হোসেন, রফিকুল ইসলাম, আব্দুল কাদের মিয়া, মিজানুর রহমান মিজান, রুমানা নাসরিন, সারোয়ার হাসান জামিল, মহিউদ্দিন হেলাল, ইউসুফ আলী জীবন, মো. বেলায়েত হোসেন, রাজিবুল আহসান সুমন ও এ্যাডভোকেট জামসেদ। চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড) আসনের বর্তমান সাংসদ দিদারুল আলম, সদ্য পদত্যাগ করা সীতাকুণ্ড উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম আল মামুন, সীতাকুণ্ড উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল্লাহ আল বাকের ভুঁইয়া, চসিকের কাউন্সিলর ড. নিছার উদ্দীন আহমেদ মঞ্জু। চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী) মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আবদুস সালাম (এম এ সালাম), নগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ইব্রাহীম হোসেন চৌধুরী বাবুল, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা যুবলীগের সভাপতি ও হাটহাজারী উপজেলা চেয়ারম্যান রাশেদুল ইসলাম, ইউনুচ গণি চৌধুরী, মনজুরুল আলম চৌধুরী, মোহাম্মদ শাহজাহান চৌধুরী, মোহাম্মদ শামীম উল্লেখযোগ্য। চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী, মুসলিম উদ্দীন চৌধুরী, সাবেক পৌর মেয়র দেবাশীষ পালিত ও মাহফুজুল হায়দায়র চৌধুরী রোটন। চট্টগ্রাম-৭ (রাঙ্গুনীয়া) আসনে তথ্যমন্ত্রী ও বর্তমান সংসদ সদস্য ড. হাছান মাহমুদ। চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও) আসনের বর্তমান সাংসদ নোমান আল মাহমুদ, সাবেক এমপি মঈনুদ্দীন খান বাদলের সহধর্মিনী সেলিনা খান, সাবেক সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম, কফিল উদ্দিন খান, সাইফুল ইসলাম, মোহাম্মদ আরশেদুল আলম বাচ্চু, মোহাম্মদ মনসুর আলম পাপপি, মুজিবুর রহমান, খোরশেদ আলম, মোহাম্মদ এমরান, জিনাত সোহানা চৌধুরী, এ টি এম আলী রিয়াজ খান রক্সি, জাবেদুল আজম মাসুদ ও মোহাম্মদ আবদুল কাদের। চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালী-বাকলিয়া) আসনে শিক্ষা উপমন্ত্রী ও বর্তমান সাংসদ ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র আ.জ.ম. নাছির উদ্দিন, মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এডভোকেট ইব্রাহিম চৌধুরী চৌধুরী বাবুল, সিডিএ চেয়ারম্যান এম জহিরুল আলম দোভাষ, পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও বিএফইউজে’র সাবেক সহসভাপতি রিয়াজ হায়দার চৌধুরী, শাহজাদা মোহাম্মদ ফৌজুল মুকিম খান, আমিনুল হক, মোহাম্মদ শাহজাহান চৌধুরী ও মোহাম্মদ রাশেদুল হাসান মোট ১৭ জন। চট্টগ্রাম-১০ (হালিশহর-ডবলমুরিং) আসনের বর্তমান সাংসদ মহিউদ্দিন বাচ্চু, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র আ.জ.ম. নাছির উদ্দিন, চট্টগ্রাম ১৪ দলের সমন্বয়ক, মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও চসিকের সাবেক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন, কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র আব্দুস সবুর লিটন, এরশাদুল আমিনসহ ১৮ জন। চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর) আসনের বর্তমান সাংসদ এম আবদুল লতিফ, আ.জ.ম. নাছির উদ্দিন, খোরশেদ আলম সুজন, মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আলতাফ হোসেন চৌধুরী বাচ্চু, রোটারিয়ান ইলিয়াছ, চসিকের বর্তমান কাউন্সিলর জিয়াউল হক সুমন, নগর যুবলীগের সহসভাপতি দেবাশীষ পাল দেবু, আওয়ামী লীগ ধর্ম বিষয়ক উপ কমিটির সদস্য শেখ নওশেদ সারোয়ার পিন্টুসহ সর্বোচ্চ ২৮ জন। চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনে বর্তমান সাংসদ ও হুইপ সামশুল হক চৌধুরী, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, কেন্দ্রীয় যুবলীগ যুগ্ম সাধারন সম্পাদক মুহাম্মদ বদিউল আলম, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামীলীগ সহ-সভাপতি মোহাম্মদ নাছির, চেমন আরা তৈয়ব, পটিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগ সাধারন সম্পাদক অধ্যাপক হারুনুর রশিদ, প্রবীণ আওয়ামীলীগ নেতা মেজর জেনারেল অব: আলাউদ্দীন এম এ ওয়াদুদ (বীর প্রতীক), ডক্টর জুলকারনাইন চৌধুরী জীবন, এডভোকেট আবদুর রশিদ, মোহাম্মদ ফারুক, তসলিম উদ্দিন রানা, রাশেদ মনোয়ার, হাবিবুল হক চৌধুরী, মহিউদ্দিন, সাবেক ফুটবলার সত্যজিৎ দাশ রুপ। চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা) আসনে বর্তমান সাংসদ ও ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদসহ চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহজাদা মহিউদ্দিন ও সমীরন নাথ মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ) আসনে বর্তমান সাংসদ নজরুল ইসলাম চৌধুরী, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মুফিজুর রহমান, ব্যারিস্টার ইমতিয়াজ উদ্দিন আহমদ আসিফ, আবদুল কৈয়ুম চৌধুরী, চন্দনাইশ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল জব্বার চৌধুরী, কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক মীর মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, চন্দনাইশ উপজেলা আওয়ামিলীগের সভাপতি জাহেদুল ইসলাম জাহাঙ্গীর, সাধারন সম্পাদক আবু আহমদ চৌধুরী জুনু, কায়কোবাদ উসমানী, ডা.নাছির উদ্দিন, এডভোকেট মাসুদ আলম চৌধুরী, লায়ন রফিকুল ইসলাম ও আফতাব মাহমুদ শিমুল। চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া) আসনে বর্তমান সাংসদ আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, উপজেলা চেয়ারম্যান এম এ মোতালেব, মঈনুদ্দিন হাসান চৌধুরী, আ ম ম মিনহাজুর রহমানসহ ১৩ জন। চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনের বর্তমান সাংসদ মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মুজিবুর রহমান সিআইপি, আবদুল্লাহ কবির লিটন, সদ্য পদত্যাগ করা বাঁশখালী উপজেলা চেয়ারম্যান চৌধুরী মোহাম্মদ গালিব সাদলী উল্লেখযোগ্য। উল্লেখ্য,প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল গত ১৫ নভেম্বর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন। তফসিল অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট অনুষ্ঠিত হবে।