বিনোদন ডেস্ক :
স্বাগতম ১৪৩০ বঙ্গাব্দ। কুসংস্কার আর পুরনো জীর্ণতাকে পেছনে ফেলে ব্যক্তিগত, ধর্মীয়, সাম্প্রদায়িক, শ্রেণিগত অবস্থানের ঊর্ধ্বে উঠে বাঙালির শত শত বছরের ঐতিহ্য, কৃষ্টি-সংস্কৃতি ও অসাম্প্রদায়িক মানবিক চেতনার লালন ও বার্তা সর্বত্র ছড়িয়ে দেয়ার মূলমন্ত্র নিয়েই প্রতিবছরের ন্যায় এবারও উৎসবমুখর আয়োজনে পালিত হতে যাচ্ছে দিনটি (শুক্রবার, ১৪ এপ্রিল)।
পুরনো বছরকে বিদায় ও নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে প্রতি বছরই বর্ণাঢ্য আয়োজনে পহেলা বৈশাখ পালন করে থাকে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। এবারও নতুন বছরকে বরণ করে নিতে সকাল থেকেই রয়েছে নানা কর্মসূচি।
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জনসংযোগ কর্মকর্তা সাবিনা ইয়াসমিন জানান, সকাল ৯টা ৩০ মিনিটে থাকবে আলপনা অঙ্কন কর্মশালার সনদপত্র প্রদান অনুষ্ঠান। এতে অংশগ্রহণকারী প্রশিক্ষণার্থীদের হাতে সনদপত্র তুলে দেবেন একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী।
এরপর সকাল ১০টা থেকে জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে থাকছে নতুন বর্ষ বরণ ও পহেলা বৈশাখের আলোচনা। আলোচনা পর্বের পর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের শুরুতেই নজরুল সংগীত পরিবেশন করবেন সুজিত মোস্তফা। রবীন্দ্রসংগীত পরিবেশন করবেন লাইসা আহমেদ লিসা, বাউল গান পরিবেশন করবেন শরীফ সাধু ও কণ্ঠশিল্পী পুতুল। এছাড়াও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির শিশু সংগীত দলের পরিবেশনায় থাকবে সমবেত সংগীত। লোকসংগীত ভাওয়াইয়া ও বাউল গান পরিবেশিত হবে। পূজা ও পলাশ এর কণ্ঠে পরিবেশিত হবে ভাওয়াইয়া এবং বিউটি ও সন্দীপনের কণ্ঠে পরিবেশিত হবে বাউল গান।
একাডেমির জ্যেষ্ঠ শিল্পীদের অংশগ্রহণে পরিবেশিত হবে বৈশাখের নৃত্য। এছাড়াও থাকবে মঙ্গল শোভাযাত্রা নৃত্য, ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠী সম্প্রদায়ের নৃত্য- বৈসাবি, একাডেমির নৃত্যশিল্পীদের ধামাইল ও বাউল নৃত্য পরিবেশনা ও পুঁথিপাঠ। আরও থাকবে নিঃসঙ্গ লড়াই যাত্রার অংশবিশেষ এবং রুপা চক্রবর্তী ও জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়ের আবৃত্তি।
বলা দরকার, বাংলা বর্ষবরণকে ঘিরে পার্বত্য জেলাগুলোতে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ঐতিহ্যবাহী উৎসব ‘বৈসাবি’ আনন্দমুখর পরিবেশে পালিত হয়। বর্ষ বরণের এ উৎসবকে চাকমা সম্প্রদায় বিজু, মারমা সম্প্রদায় সাঙ্গরাই এবং ত্রিপুরা সম্প্রদায় ‘বৈসুক’ নামে উদযাপন করে থাকে। পুরানো বছরের বিদায় এবং নতুন বছরকে বরণ উপলক্ষে এ বর্ষবরণ উৎসব সেই আদিকাল থেকেই পালিত হয়ে আসছে।
এবারও বর্ষবরণের মূল আয়োজন থাকছে রমনার বটমূলে। ছায়ানটের আয়োজনে এবারের মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘ধর নির্ভয়ে গান’। ১৪ এপ্রিল ভোরের আলো ফুটতেই রমনার বটমূলে আহীর ভৈরবের সুরে, ছন্দের বন্ধনে এবারের নতুন বছর আবাহনের শুরু হবে। গোটা অনুষ্ঠান সাজানো হয়েছে নতুন স্নিগ্ধ আলোয় স্নাত প্রকৃতির গান, মানবপ্রেম-দেশপ্রেম আর আত্মবোধন-জাগরণের সুরবাণী দিয়ে।
এছাড়াও বর্ষবরণের আরেকটি বড় উৎসব হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অঞ্চলে মঙ্গল শোভাযাত্রার মাধ্যমে। ‘বরিষ ধরা মাঝে শান্তি বারি’—রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই গানকে প্রতিপাদ্য করে সকাল ৯টায় শোভাযাত্রাটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ থেকে শুরু হয়ে শাহবাগ মোড় ঘুরে আবার চারুকলায় গিয়ে শেষ হবে।
এছাড়া দেশের প্রায় সবগুলো এন্টারটেইনমেন্ট টিভি ও রেডিও চ্যানেলে প্রচার হবে বিশেষ নাটক ও গানের অনুষ্ঠান।