
আকরামুল ইসলাম:
ভালো-মন্দ, অপরাধ, শাস্তি বা আইন কোন কিছুই বোঝার বয়স এখনো ঠিকঠাক হয়নি শিশুটির। তবে এরই মধ্যে হাতে তুলে নিয়েছে ফেন্সিডিল। শিশুটি মাদক বিক্রেতা বা মাদকসেবীও নয়। ফেন্সিডিলের বোতল কুড়িয়ে মাদক বিক্রেতাকে দিতে হয় শিশুটির। তার বিনিময়ে কিছু টাকা পায় শিশুটি।
সাতক্ষীরা ভোমরা স্থলবন্দর সীমান্তের ঘোষপাড়া এলাকার চিত্র এটি। শুক্রবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে দেখা হয় একটি ৩০-৩৫ বছর বয়সী মহিলার সঙ্গে ৭-৮ বছর বয়সী একটি শিশুকে দেখা যায় ফেন্সিডিলের খালি বোতল কুড়াতে। বোতল কুড়িয়ে বস্তায় ভরছেন। ছবিটি ধারণ করার পূর্বেই ২৫০-৩০০ ফেন্সিডিলের খালি বোতল কুড়ানো শেষ হয়েছে তার।
ছবিটি ধারণ করার সময় ওই মহিলা জানায়, রাস্তার পাশে খালি বোতল পড়ে আছে, খারাপ দেখায়। তাই কুড়াচ্ছি। এগুলো কি করবেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ফ্যাক্টরীতে বিক্রি করবো।
ওই সময় সঙ্গে থাকা শিশুটি বলে উঠে, আমরা এই বোতল কুড়িয়ে বিক্রি করি। প্রত্যেকটি বোতলের জন্য আমাকে ৪-৫ টাকা করে দেয়। তবে করা দেয় টাকা। সে প্রশ্নের ঠিকঠাক উত্তর দিতে পারেনি ওই শিশু।
ওই মহিলাও তখন নিরব ছিলেন। মহিলার নাম পরিচয় জানা যায়নি। শিশু ছেলেটি ওই মহিলার সন্তান বলে কথোপকথনে ধারণা হয়েছে।
সাতক্ষীরার ভোমরা সীমান্তে মাদকের চোরাচালানের খবরটি নতুন নয়। মাদকসেবীরা দল বেঁধে হাজির হয় ভোমরা সীমান্ত এলাকায়। সীমান্তকে মাদক সেবনের নিরাপদ স্থান হিসেবে মনে করেন সেবীরা।
পরিচয় গোপন রাখার শর্তে একজন মাদকসেবী জানান, ভোমরায় সব সময় ফেন্সিডিল পাওয়া যায়। রাত দিন কোন ব্যাপার নয়। ভোমরা লক্ষিদাড়ি সীমান্তে ফেন্সিডিল বিক্রি করেন আব্দুর রশিদ, টুটুল, কামরুল ইসলাম। সীমান্তের ঘোষপাড়ায় বিক্রি করে দিলীপ কুমার ঘোষ। আলীপুরে বিক্রি করেন সেলিনা বেগম। সাতক্ষীরা শহরের বিনেরপোতা এলাকার শিমুলও সীমান্ত এলাকায় গিয়ে দিনভর মাদক বিকিকিনি করে থাকেন। লক্ষীদাড়ি সীমান্তের বিপরীতে ভারতে বিক্রি করেন শ্যাম পদ। শহরের দিকে মাদক সেবন করতে গেলে অনেক সময় পুলিশ প্রশাসনের ঝামেলায় পড়তে হয়। তবে সীমান্তে আসলে সেই ঝামেলায় পড়ার সম্ভাবনা কম।
প্রশাসনের নজরদারি মধ্যে কিভাবে এগুলো হচ্ছে এমন প্রশ্নে তিনি জানান, প্রশাসন যেমন তৎপর তেমন মাদক বিক্রেতারও তৎপর রয়েছে। প্রশাসনের যেমন কৌশল রয়েছে তারাও ভিন্ন ভিন্ন কৌশলে ভারত থেকে মাদক নিয়ে আসাসহ বিক্রিও অব্যাহত রেখেছে।
মাদকের বিষয়ে সাতক্ষীরা ৩৩ বিজিবির অধিনায়ক মোহাম্মদ গোলাম মহিউদ্দিন খন্দকার জানান, সীমান্তে মাদক চোরাচালান বা মাদক বিকিকিনির সুযোগ নেই। আমরা নিয়মিত মাদক বিরোধী বিশেষ অভিযান পরিচালনা করছি। মাদকসেবী ও বিক্রেতাদের আমরা আটক করে আইনের আওতায় নিয়ে আসছি। মাদক বিরোধী বিশেষ অভিযান আমাদের অব্যাহত রয়েছে।
সীমান্তে ফেন্সিডিলের বোতল কুড়িয়েও আয় করছে শিশু-মহিলাও মাদক চলছে হরহামেশা অভিযানের পরও কিভাবে এগুলো হচ্ছে এমন প্রশ্নে তিনি জানান, সীমান্তের রাস্তায় ২-১টি বোতল থাকতে পারে। তবে ২০০-৩০০ বার তার বেশী বোতল পড়ে থাকে। আর সেগুলো কুড়িয়ে বিক্রি করছে এ তথ্য সঠিক নয়। সীমান্তের যে কোন চোরাচালান, মাদক রোধে বিজিবি কাজ করে যাচ্ছে। মাদক বিরোধী বিশেষ অভিযান অব্যাহত আছে।