আব্দুল্লাহ আল মাহফুজ:
মৌলভীবাজার জেলার কোমলগঞ্জ থানায় রয়েছে বিশাল আকৃতির একটি প্রাকৃতিক বন। সরকারী ভাবে সংরক্ষন করে বন বিভাগ এর নাম করণ করে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান। এই বনের আয়তন ১২৫০ হেক্টর।
[embed]https://youtu.be/M04UbNp2gUU[/embed]
প্রতিষ্ঠার ইতিহাস: পশ্চিম ভানুগাছ সংরক্ষিত বনের একটি অংশকে সংরক্ষন করে ১৯৭৪ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ-সংশোধন) আইন অনুযায়ী ০৭ জুলাই ১৯৯৬ সালে জাতীয় উদ্যান হিসাবে ঘোষনা করা হয়।
বনের ধরন: মিশ্র চির-হরিৎ বন।
ব্যবস্থপনা: ২০০৫ সাল থেকে সহ-ব্যবস্থপনা পদ্ধতিতে পরিচালিত হচ্ছে, যা বন বিভাগ, সংলগ্ন ৩০টি গ্রাম ও স্থানীয় স্টোকহোল্ডারদের অংশীদারিত্বে ও ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত। বনের প্রবেশ মুল্য থেকে প্রাপ্ত অর্থ সহ-ব্যবস্থপনা কমিটির মাধ্যমে পর্যটকদের সুবিধা বৃদ্ধি ও স্থানীয় জনগণের কল্যাণে ব্যয় করা হয়।
উল্লেখযোগ্য উদ্ভিদ প্রজাতি: চাপালিশ, ঢেউয়া, লটকন, আগর, পিতরাজ, কদম, কড়ই, শিমুল, চিকরাশি, হারগজা, গর্জন, জলপাই নাগেশ্বর, ডুমুর, বট, অশ্বখ, গামার, কাউ, চালমুগড়া, জারুল, রকতন, চালতা, চম্পাফুল, উদল, আমলকি, হরিতকি, বহেরা, জাম, অর্জুন, সেগুন, তুন, আওয়াল, লোহাকাট সহ বিভিন্ন প্রজাতির অর্কিড, বেত ও বাঁশ।
উল্লেখযোগ্য বন্যপ্রাণী: ১৫ প্রজাতির উভচর প্রাণী, ২০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী ৫২ প্রজাতির সরিসৃপ প্রাণী এবং ২৬০ প্রজাতির পাখি রয়েছে এ উদ্যানে। এছাড়াও উল্লুক, লজ্জাবতি বানর, হনুমান, শুকুর, মায়াহরিণ, খরগোশ কাঠবিড়ালী, উড়ন্তকাঠবিড়ালী, সজারু, ভালুক, বাঘডাস, বনবিড়াল, মেছোবাঘ, বেজি, শিয়াল, বাদুর, বনমোরগ, পেঁচা, ধনেশ, মাছরাঙ্গা, বউ কথাকও, কোকিল, টিয়া, ময়না, শকুন, অজগর, রাজগোখরো, দারাশ, কালকেউটে, লাউডগা, দুধরাজ, কালনাগীন, বিভিন্ন প্রজাতির ব্যঙ ও কচ্ছপ রয়েছে।
পর্যটকদের সুবিধা সমুহ: দর্শনার্থীদের জন্য রয়েছে পায়ে হাটা আঁকা বাকা নির্জন পথ। কিছু জায়গায় রয়েছে বিভিন্ন ধরনের পাখির কিচির মিচির। বনের ভিতরে রেল লাইনের বাঁক মাঝে মাঝে নির্জন বনের মাঝে রেলের ঝকঝক শব্দ দর্শনাথীদের মনকাড়ে। বনের গভীরে গেলে দেখা মেলে বিভিন্ন ধরণের বন্য প্রজাতির গাছ। যে গাছ গুলো সাধারণ গাছের তুলনায় অধিক লম্বা। আরো আছে রাবার বাগান, চা বাগান, ছোট ছোট টিলার উপর কমলা বাগান, কৃষি জমি এবং গ্রাম ও জলা ভূমি। বনের ভিতরে রয়েছে পর্যটকদের জন্য রেষ্ট হাউজ ও গবেষনাগার।
দর্শনাথী শিমুল হোসেন বলেন, এ বন ভেষজ ঔষধের কারখানা। প্রাচীন আমল থেকেই বিভিন্ন গাছ থেকে ঔষধ তৈরী হয়। ভেষধ ঔষধের প্রশংসা করে শিমুল হোসেন বলেন, সুন্দরবনেও এত ধরণের ঔষধী গাছ আছে বলে মনে হয় না।
আরেক দর্শনার্থী হাসিব বলেন, বন ঘুরে দেখার মজা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। নির্জন বনের মধ্যে পাখির কলরব দর্শনার্থীদের আকর্ষন করে। দেশের মধ্যে এত সুন্দর বনজঙ্গল বিভিন্ন প্রাণী গাছপালার সমাহার আর কোথাও দেখিনি।
ফিরোজ আলম বলেন, বাংলা দেশের যতগুলো বন বয়েছে তাদের মধ্যে এটি অন্যতম। তিনি বলেন এই বনের মধ্যে দিয়ে একটি রেল লাইন রযেছে। রয়েছে কমলা বাগান।
একজন কমলা চাষী বলেন, তিনি টিলায় কমলা বাগান করে সাবলম্বি। তার বাবা কমলার চাষ শুরু করে বর্তমানে সে সেগুলা দেখা শুনা করে।