আব্দুর রশিদ/রুবেল হোসেন: সদর উপজেলার ঘোনা ইউনিয়ন বহুমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাসানুর রহমানকে লাঞ্ছিত ও হেনস্থাকারীদের সুষ্ঠ বিচারের দাবীতে সোচ্চার ঘোনা ইউনিয়ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মচারীবৃন্দ। প্রকৃত ঘটনাকে আড়াল করে প্রধান শিক্ষককে কতিপয় ব্যক্তি যে আক্রমনাতœক ও ষড়যন্ত্রমূলক কর্মকান্ড ঘটিয়ে অপমান, অপর্দস্ত, লাঞ্ছিত ও হেনস্থা করা হয়েছে তার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মচারীবৃন্দ। এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চেয়ে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ ফজলুর রহমান মুসা বরাবর লিখিত আবেদনও করেছেন তারা। সোমবার (৩১ জুলাই) বিদ্যালয় ছুটির পর অফিস কক্ষে আলোচনায় মিলিত হন শিক্ষক ও বিদ্যালয়ের ষ্টাফবৃন্দ। তারা সম্মিলিতভাবে উক্ত ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। পরে সভাপতি বরাবর বিচার চেয়ে লিখিত আবেদন করেন তারা।
প্রধান শিক্ষক হাসানুর রহমানকে লাঞ্ছনার বিচারের দাবীতে সভাপতি বরাবর আবেদনকারীরা হলেন বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক মোস্তফা রুহুল কুদ্দুস, হিরন কুমার বিশ্বাস, এস.এম ফিরোজ মাহমুদ, তাছলিমা খাতুন, শ্যামল কুমার, মনিরা সুলতানা, শেখ মাসুদুল হাসান, মোঃ আজগর আলী, কাজী আক্তারুজ্জামান, সহকারী শিক্ষক শামিমা নাসরিন, মোঃ গোলাম কিবরিয়া, মোঃ আব্দুল হামিদ, সেলিনা পারভীন, অঞ্জলী মন্ডল, অফিস সহকারী মোঃ শারাফাত হোসেন, কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর সৌমেন কুমার সরদার, দপ্তরী স্বপন কুমার গাইন, নৈশ প্রহরী রাখাল চন্দ্র বিশ্বাস, পরিচ্ছন্নতাকর্মী মোঃ আল আমিন, আয়া হামিদা খাতুন ও নিরাপত্তাকর্মী উজ্জল কুমার সরকার।
লিখিত আবেদনে তারা উল্লেখ করেন, প্রধান শিক্ষককে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে অপমান করা মানেই সমগ্র শিক্ষককে অপমান করা। বিদ্যালয়টির দীর্ঘ সাত দশকের ইতিহাসে এমন ঘটনা নজির বিহীন। অবিলম্বে এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দায়ীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সভাপতি বরাবর স্ব স্ব স্বাক্ষরিত লিখিত আবেদন পত্র জমা দেন তারা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও ঘোনা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ ফজলুর রহমান মুসা সাতনদীকে বলেন, “ বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মচারীদের লিখিত একটি আবেদন আমি হাতে পেয়েছি। আমি ঘটনা সম্পর্কে পূর্ব থেকে অবগত আছি। বিদ্যালয়ে হামলা করা ও প্রধান শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার বিষয়টি দুঃখ জনক। ঐ মেয়ে দুটিকে ছুটির দিনে স্কুলে পেয়ে প্রধান শিক্ষক আমাকে জানালে আমি তাদের গার্ডিয়ানদের ডেকে ঘটনা খুলে বলে তাদের জিম্মায় দিতে বলি। পরে দুর্বৃত্তরা সংগঠিত হয়ে স্কুলে হামলা করে। এ বিষয়ে আগামী মঙ্গলবার (১ আগষ্ট) ম্যানেজিং কমিটির মিটিং ডাকা হয়েছে। মিটিংয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ”
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার (২৮ জুলাই) ২০২৩ সালের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশের দিন ধার্য থাকায় প্রধান শিক্ষক মোঃ হাসানুর রহমান স্টাফদের নিয়ে একযোগে সকাল ১০ টায় স্কুলে প্রবেশ করেন। সে সময় বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর এক ছাত্রী বহিরাগত এক মেয়েকে অনৈতিক অবস্থায় দেখতে পান। এক পর্যায়ে প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ ফজলুর রহমান মুসাকে বিষয়টি অবগত করলে তিনি উক্ত মেয়েদের স্কুলে রেখে তাদের অভিভাবকদের সংবাদ দেওয়ার জন্য প্রধান শিক্ষককে বলেন। পরে স্থানীয় সংরক্ষিত ইউপি সদস্য নাজমিরা বেগমের স্বামী বুলবুল এসে প্রধান শিক্ষকের কাছে উক্ত মেয়েদের তার জিম্মায় নিয়ে যায়। এ ঘটনার ১৫-২০ মিনিট পরে ৩০/৪০ জন দুর্বৃত্ত স্কুলে হামলা চালায়। তারা ইটপাটকেল ছুড়ে ও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে প্রধান শিক্ষক হাসানুর রহমানকে লাঞ্ছিত করে এবং প্রায় দেড় ঘন্টা তাকে অফিস কক্ষে অবরুদ্ধ করে রাখে। পরে খবর পেয়ে বিদ্যালয়ের সভাপতি ফজলুর রহমান মুসা এসে প্রধান শিক্ষক হাসানুর রহমানকে উদ্ধার করে। পরবর্তীতে রবিবার (৩০ জুলাই) বিদ্যালয় খুললে শিক্ষকবৃন্দ ঘটনার বিস্তারিত শুনে মর্মাহত হন। পরে সোমবার (৩১ জুলাই) বিদ্যালয়ে মিটিং করে যৌথভাবে উক্ত ঘটনার তীব্র নিন্দা ও দায়ীদের বিচার চেয়ে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি বরাবর লিখিত আবেদন করেন তারা।