রুবেল হোসেন: বর্তমান সময়ে সারা বিশ্বে ক্যান্সারকে ঘাতক ব্যাধী হিসাবে ধরা হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে ২০২০ সাল পর্যন্ত ব্রেস্ট ক্যান্সারে ২৩ লক্ষ মহিলা আক্রান্ত হয় যার মধ্যে ৭ লক্ষ মহিলা মৃত্যুবরণ করেন। পৃথিবী ব্যাপী ৮ টি ক্যান্সার ডায়াগনসিস হলে ১ টি হয় ব্রেস্ট ক্যান্সার। তবে প্রথম স্টেজে চিকিৎসা নিলে ব্রেস্ট ক্যান্সার পুরোপুরি নিরাময় করা সম্ভব বলে মনে করেন উপমহাদেশের বিশিষ্ট ব্রেস্ট ক্যান্সার সার্জন, জাতীয় ক্যান্সার গবেষনা ইনস্টিটিউট এর সার্জিক্যাল ওকোনলজী বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডাঃ মোঃ মিজানুর রহামান।
সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ ও সাতক্ষীরা ক্যান্সার কেয়ার সেন্টার কর্তৃক আয়োজিত “ব্রেস্ট ক্যান্সার ম্যানেজমেন্ট:আমরা কোথায়” শির্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
ডাঃ মিজানুর রহমান আরো বলেন, “স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে ১৯৭২সালে আমাদের দেশে গড় আয়ু ছিল ৪৭ বছর যা এখন ৭৩ বছরেরও বেশি। গড় আয়ু বৃদ্ধির সাথে সাথে ক্রনিক ডিজিজ (হৃদরোগ, ক্যান্সার) ও বৃদ্ধি পেয়ছে। উন্নত দেশগুলো এমনকি পার্শ্ববতী দেশ ভারত ও উদ্ভুত সমস্যা মোকাবেলায় সক্ষম হলেও আমরা এখনো অনেক খানি পিছিয়ে আছি। ব্রেস্ট ক্যান্সারে উন্নত দেশে মৃত্যুর হার মাত্র ২৫% কিন্তু আমাদের দেশে মৃত্যুর হার ৮০%। কিন্তু আমাদের দেশে ব্রেস্ট ক্যান্সারের যথাযথ চিকিৎসা থাকা স্বত্ত্বেও আমরা ব্রেস্ট ক্যান্সার নিরাময় করতে পারছি না। প্রথম পর্যায়ে রোগ সনাক্ত করে সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ করলে আমি হলফ করে বলতে পারি কাউকে অন্তত ব্রেস্ট ক্যান্সারে মরতে হবে না। আমাদের কাছে রোগীরা রোগ সনাক্তের ৬ মাস পরে এমননি অনেকে দেড় বছর পরেও আসে। তখন তাদের রোগের অবস্থা এডভান্স পর্যায়ে পৌছায় ফলে চিকিৎসায় তা আর নিরাময় করা সম্ভব হয় না। অনেকে ব্রেস্ট ক্যান্সারকে সাধারণ চর্মরোগ মনে করে অপচিকিৎসা নিয়ে মৃত্যুমুখে পতিত হন। আমার গবেষনা মতে ৫৫% রোগী আসেন প্রথম পর্যায়ে আসেন। ৩০% রোগী আগে অপারেশন ও বিভিন্ন চিকিৎসা নেওয়ার পর আমাদের কাছে আসেন। প্রাথমিক পর্যায়ে আমরা রোগীক সার্জারি এবং এডভান্স পর্যায়ে কেমোথেরাপি দেওয়ার পরামর্শ দেই। ক্যান্সারের সঠিক চিকিৎসা দেশে আছে বিধায় অপচিকিৎসা ও বিদেশ নির্ভর না হয়ে প্রথম পর্যায়ে চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে।
এসময় তিনি সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেন। কলেজের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের প্রতি বিভিন্ন দিক নির্দেশনা প্রদান করেন।
শনিবার (২৬ নভেম্বর) সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজের হল রুমে আয়োজিত সেমিনারে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ডাঃ কাজী আরিফ আহমেদ এর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন সাতক্ষীরা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক এবং খুলনা মেডিকেল কলেজের অনকোসার্জারী বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ডাঃ মোঃ মনোয়ার হোসেন, জেলা মেডিকেল এসোসিয়েশনের সভাপতি ডাঃ আজিজুর রহমান, গাইনি বিভাগের প্রধান ডাঃ শংকর প্রসাদ মন্ডল, সার্জারী বিভাগের প্রধান ডাঃ শরিফুল ইসলাম, মেডিকেল কলেজ শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ডাঃ শামসুর রহমান, ইনসেপটা ফার্মাসিউটিক্যাল লিঃ ডেপুটি সেলস ম্যানেজার আমিরুল ইসলাম প্রমুখ। এসময় সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজের পক্ষ থেকে প্রধান অতিথি সাতক্ষীরার কৃতি সন্তান ডাঃ মোঃ মিজানুর রহমানকে সম্মাননা স্মারক (ক্রেস্ট) প্রদান করা হয়। কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীবৃন্দ এসময় উপস্থিত ছিলেন।
সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ ও সাতক্ষীরা ক্যান্সার কেয়ার ওয়েলফেয়ার সেন্টারের যৌথ আয়োজনে ও ইনসেপটা ফার্মাসিউটিক্যালস এর সহযোগীতায় আয়োজিত সেমিনার সঞ্চালনা করেন রেডিওলোজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ডাঃ সুতপা চ্যাটার্জি।
এসময় বাহার বারী মাহমুদা ওয়েল ফেয়ার ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন মেধা তালিকায় উর্ত্তীর্ন ৫ জন শির্ক্ষার্থীকে পুরষ্কৃত করা হয়। এবং আর্থিকভাবে অসচ্ছল ৫ জন মেধাবী শিক্ষার্থীকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়।