শ্যামনগরে সন্ত্রাসীদের ভয়ে প্রবাসীর স্ত্রী বাড়ি ছাড়া: পর্ব-১
নিজস্ব প্রতিবেদক: সাতক্ষীরার শ্যামনগরে অন্যের জমিকে নিজের জমি দাবী করে এবং অনৈতিক প্রস্তাব দিয়ে সুবিধা করতে না পেরে এক প্রবাসীর স্ত্রীর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে মেতেছে স্থানীয় একটি কুচক্রী মহল। একাধিক নাশকতা মামলার আসামী ও শীর্ষ সন্ত্রাসীদের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে প্রবাসীর স্ত্রী ফাতেমা খাতুন।
শ্যামনগর উপজেলা সদরের জাওয়াখালী গ্রামের সৌদি প্রবাসী আজাদ হোসেনের স্ত্রী ফাতেমা খাতুন জানান, দুই বছর আগে জাওয়াখালী গ্রামের অরবিন্দ মৃধার কাছ থেকে বাড়ি সহ ৩১শতক জমি ক্রয় করে সেখানে বসবাস করছেন তিনি। উক্ত জমি থেকে ৬ শতক জমি নিজে ক্রয় করেছেন বলে দাবী করেন প্রতিবেশী মৃত জাহাঙ্গীর আলমের স্ত্রী হাসিনা খাতুন। ফাতেমার পক্ষে জমি সংক্রান্ত সকল কাগজপত্র থাকা সত্তে¡ও উক্ত জমি অবৈধভাবে ভোগদখলের উদ্দেশ্যে বহিরাগতদের ব্যবহার করে হাসিনা। বহিরাগতরা অবৈধ সুযোগ সুবিধা নিয়ে ফাতেমাকে জমি ছেড়ে দেয়ার জন্য চাপ দিতে থাকে এবং নানা সময় তাকে অনৈতিক প্রস্তাব দিয়ে থাকে বলে জানায় ফাতেমা। এ নিয়ে স্থানীয়ভাবে আপোষ মীমাংসার চেষ্টার পর স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিদের পরামর্শে সিভিল কোর্টের দারস্থ হয় ফাতেমা। আদালত উক্ত জমিতে অন্যের অনধিকার প্রবেশ ও অবৈধ ভোগদখলের বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। কিন্তু উক্ত নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে প্রতিপক্ষের হয়ে গত ৫ ফেব্রুয়ারী এক শীর্ষ সন্ত্রাসীর নের্তৃত্বে ২০-২৫ জন মোটরসাইকেল যোগে লাঠিসোটা ও অস্ত্র শস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ফাতেমার বাড়িতে হামলা চালায়। এ সময় তারা তার বাড়িঘর ও জিনিসপত্র ভাংচুর এবং বাড়ির বেড়া ও বড় বড় গাছপালা কর্তন করে। এতে ফাতেমা থানায় মামলা করতে গেলেও থানা তার মামালা না নিয়ে উল্টো ভুক্তভোগীর বিরুদ্ধে মামলা নিয়েছেন বলে সাংবাদিকদের অভিযোগ করেছেন তিনি। মামলায় আদালতের মাধ্যমে জামিন লাভ করলেও সন্ত্রাসীদের ভয়ে বাড়িছাড়া হয় প্রবাসীর স্ত্রী ফাতেমা।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়দের মাধ্যমে এবং ফাতেমার মা মর্জিনা বেগমের দেয়া বর্ননা মতে জানা গেছে, ফাতেমা বাড়ীতে না থাকা সত্তে¡ও তাকে ফাঁসাতে উপরোক্ত ঘটনার জের ধরে গত ২১ ফেব্রুয়ারী রবিবার দিবাগত রাত পৌনে ১০টার দিকে হাসিনা গং সন্ত্রাসীরা পূর্বপরিকল্পিতভাবে খড়-কুটা ও বাঁশ দিয়ে তৈরী হাসিনার একটি ছোট্ট রান্নাঘরে আগুণ ধরিয়ে দিয়ে আগুণ আগুণ বলে চিৎকার করতে থাকে। সাথে সাথে প্রতিবেশী কয়েকজন ও রাস্তা দিয়ে চলা কয়েকজন মিলে ফাতেমার মায়ের কাছ থেকে তাদের বাড়ীতে থাকা মোটরের পাইপ দিয়ে পানি ঢেলে কয়েক মিনিটের মধ্যেই আগুন নিয়ন্ত্রনে আনে। ইতোমধ্যেই পূর্বপরিকল্পনা মোতাবেক থানা পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেয় তারা। ফায়ার সার্ভিসের গাড়ী আসার শব্দ শুনে হাসিনার বাড়ির লোকজন পূনরায় সেখানে খড়-কুটা ছড়িয়ে আগুণ প্রজ¦ল্লিত রাখার চেষ্টা করে বলে অভিযোগ করেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন।
তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করে প্রতিপক্ষরাই তাদের ক্ষতিসাধন করার জন্য আগুণ লাগিয়ে ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দিতে চেয়েছে বলে হাসিনার পরিবার অভিযোগ করেছেন মর্মে জানা গেছে।
এদিকে ঘটনার কিছুক্ষণ পর শ্যামনগর থানার এসআই তরিকুল ইসলাম সহ অন্যান্য পুলিশ সদস্যরা ও ফায়ার সার্ভিসের দু’টি গাড়ী সেখানে পৌছায়। কিন্তু ততোক্ষনে আগুণ নিভে যায় বলে জানায় স্থানীয়রা।
থানা পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে ফিরে যাওয়ার পর ঘরে আগুন দেয়ার মিথ্যা অভিযোগ করে ঐ রাতেই ফাতেমার নামে আরও একটি মামলা করার চেষ্টা করে। কিন্তু তাতে সুবিধা করতে না পেরে পরদিন সোমবার সকালে তারা মামলা করতে সাতক্ষীরা কোর্টে গিয়েছে বলে গুঞ্জন শোনা যায়। তবে এ রিপোর্ট লেখার সময় সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, উক্ত রান্না ঘরে আগুণ দেয়ার ঘটনায় ফাতেমাকে ফাঁসাতে প্রতিপক্ষরা সাতক্ষীরা কোর্টে মামলা করার জন্য গেলেও তারা এ সংক্রান্ত সাজানো মামলা দায়ের করতে ব্যার্থ হয়। সেখান থেকে ফিরে তারা আবারও থানায় ঘোরাঘুরি করলেও থানা পুলিশ এ সংক্রান্ত কোন মামলা গ্রহণ করেনি।
এ ব্যাপারে ফাতেমার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “প্রতিপক্ষরা তার জমি অবৈধ ভোগদখল ও অসৎ উদ্দেশ্য চারিতার্থ করার লক্ষ্যে হামলা মামলা করা সহ নানাভাবে ষড়যন্ত্র করে আসছে। সন্ত্রাসীদের ভয়ে বেশ কিছুদিন যাবৎ আমি বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছি। আমাকে জব্দ করার লক্ষ্যেই রবিবার রাতে তারা নিজেদের রান্না ঘরে আগুণ লাগিয়ে আমাকে ফাঁসাতে চেয়েছে। তাদের এহেন ষড়যন্ত্রের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই এবং ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।”
এ ব্যাপারে স্থানীয় কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, ফাতেমাকে ফাঁসাতে হাসিনার রান্নাঘরে আগুণ দেয়ার নাটক সাজানো হয়েছে। ঘটনার সময় ফাতেমা বাড়ীতেও ছিল না। এতে তেমন কোন ক্ষয়ক্ষতিও হয়নি। অথচ হীন উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য ফাতেমার বিরুদ্ধে এ জাতীয় চক্রান্ত অব্যহত রেখেছে তার প্রতিপক্ষরা।
এ ব্যাপারে ঘটনাস্থল পরিদর্শনকারী এসআই তরিকুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, রান্না ঘরে আগুণ লাগানোর ঘটনাটি পূর্বপরিকল্পিত বলে আমাদের কাছে মনে হয়েছে।
এ ব্যাপারে শ্যামনগর থানার ওসি (তদন্ত) কাজি সহিদুল ইসলাম জানান, ফাতেমা এবং হাসিনার মধ্যে জমি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। এলাকায় শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে তারা যাতে নিজেদের মধ্যে আপোষ মিমাংসা করে নেয় সে ব্যাপারে থানা পুলিশও চেষ্টা করছে। কিন্তু উভয় পক্ষই অন্যের কথায় চলায় তা হচ্ছে না। আর রান্না ঘরে আগুনের বিষয়ে তিনি বলেন, ঘটনাটি দূর্ভিসন্ধিমূলক বলে মনে হয়েছে। এটি অন্য কাউকে ফাঁসানোর চেষ্টাও হতে পারে।