লিটন ঘোষ বাপি: আগামী ১৯ অক্টোবর মহাপঞ্চমী তিথিতে দেবীর বোধনের মাধ্যমে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দূর্গা পূজা অনুষ্ঠিত হবে। বাঙালী সমাজে সনাতন ধর্মের গন্ডি পেরিয়ে শারদীয় দূর্গোৎসব সার্বজনীনে পরিনত হয়েছে। আগামী ১৪ অক্টোবর মহালয়ার মধ্যদিয়ে দেবী দুর্গার আগমনের বার্তা মর্তলোকে পৌঁছে যাবে। এখন মা আসবেন মাটির পৃথিবীতে। বাবার বাড়িতে সপরিবারে। তারই আগমনী সুর যেন এখনই ভাসছে সোনা রোদের ঝিলিকে, নীল আকাশে, পেঁজা তুলো মেঘে। প্রকৃতির মতোই পূজা মন্ডবে শুরু হয়ে গিয়েছে মায়ের আগমনীর আবাহন। ঢাকে কাঠি পড়ার আগেই কাঠামোয় পড়েছে মাটির প্রলেপ। কিছু কাঠামোয় বাঁধা হয়েছে খড়। যারা ইতিমধ্যেই খড়ের প্রতিমায় মাটির প্রলেপ দেওয়া শুরু করেছেন, তাঁরা এই রোদে শুকিয়ে নিতে পারছেন প্রথম প্রলেপের মাটি। আর মাটি যত দ্রুত শুকাবে ততই দ্রুত হবে প্রতিমা বানানোর কাজ। তাই হাত চালিয়ে একের পর এক মূর্তি গড়ার পাশাপাশি মৃৎশিল্পীরা রোদে মূর্তি শুকনোর কাজটাও সেরে নিচ্ছেন এই ফাঁকে। মাকে সাজানোর উপকরণ যারা বানান, তাদের ও নাকেমুখে দেখা যাচ্ছে ব্যস্ততার চাপ। এরা বিক্রি করেন মায়ের চুল, শোলার, জরির গয়না, চাঁদমালা। দিন যত এগোবে, ব্যস্ততা ততই বাড়বে। তখন রাতের ঘুম ভুলে ঝড়ের গতিতে তারের মুকুট, শোলার গয়না, ডাকের সাজে রকমারি নকশা গড়বে দশ আঙুল। সব মিলিয়ে তাই বাঙালির সেরা উৎসব আসার আগেই পুজোর গন্ধে মাতোয়ারা পুজো মণ্ডপ গুলি। সেখানে মৃৎশিল্পীদের পরিশ্রমের সঙ্গে মিলেমিশে একাকার মৃন্ময়ীর গায়ের মাটির গন্ধ। গর্জন তেলের বদলে তাঁদের ঘাম দিয়েই যে চিকমিক করে উঠবে প্রতিমার মুখ! মা দুর্গার আগমনে অশুভ শক্তির বিনাশ করতে আর জগতের শান্তি প্রতিষ্ঠিতা হবে এই বিশ্বাস নিয়ে দেবহাটা উপজেলার ২১টি পূজা মন্ডপে চলছে সাজসজ্জা ও প্রতিমা তৈরির কাজ। আগামী ২০ অক্টোবর শুক্রবার ষষ্টীর মধ্য দিয়ে শুরু হবে হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা। এ বছর দেবহাটায় উপজেলায় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ২১টি পূজা মন্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজা। যার মধ্যে কুলিয়া ইউনিয়নে ৭টি, পারুলিয়া ইউনিয়নে ৭টি, সখিপুর ইউনিয়নে ২টি, নওয়াপাড়া ইউনিয়নে ১টি ও দেবহাটা ইউনিয়নে ৪টি পূজা মন্ডপে অনুষ্ঠিত হবে শারদীয় দুর্গা পূজা। আর এই পূজা মন্ডপ গুলোর মধ্যে রয়েছে- কুলিয়া ইউনিয়নের বালিয়াডাঙ্গা সার্বজনীন দুর্গাপূজা মন্ডপ, হিজলডাঙ্গা সার্বজনীন দুর্গাপূজা মন্ডপ, বহেরা সার্বজনীন দুর্গাপূজা মন্ডপ, কুলিয়া ঘোষপাড়া সার্বজনীন দুর্গাপূজা মন্ডপ, শ্যামনগর পশ্চিমপাড়া সার্বজনীন দুর্গাপূজা মন্ডপ, শ্যামনগর পূর্বপাড়া সার্বজনীন দুর্গাপূজা মন্ডপ ও সুবর্নাবাদ সার্বজনীন দুর্গাপূজা মন্ডপ, পারুলিয়া ইউনিয়নের উত্তর পারুলিয়া চারা বটতলা সার্বজনীন দুর্গাপূজা মন্ডপ, স›ন্যাসখোলা সার্বজনীন দুর্গাপূজা মন্ডপ, দক্ষিণ পারুলিয়া সার্বজনীন দুর্গাপূজা মন্ডপ, নোড়ারচক সার্বজনীন দুর্গাপূজা মন্ডপ, বড়শান্তা সার্বজনীন দুর্গাপূজা মন্ডপ, মাঝ পারুলিয়া সার্বজনীন দুর্গাপূজা মন্ডপ ও উত্তর কোমরপুর সার্বজনীন দুর্গাপূজা মন্ডপ, সখিপুর ইউনিয়নের উত্তর সখিপুর পালপাড়া সার্বজনীন দুর্গাপূজা মন্ডপ, কোঁড়া পাকড়াতলা সার্বজনীন দুর্গাপূজা মন্ডপ, নওয়াপাড়া ইউনিয়নের গাজীরহাট সার্বজনীন দুর্গাপূজা মন্ডপ এবং দেবহাটা সদর ইউনিয়নের দেবহাটা বাজার সার্বজনীন দূর্গাপূজা মন্ডপ, দেবহাটা ফুটবল মাঠ সর্বজনীন দুর্গাপূজা মন্ডপ, টাউনশ্রীপুর সার্বজনীন দুর্গাপূজা মন্ডপ ও টাউনশ্রীপুর পালপাড়া সার্বজনীন দুর্গাপূজা মন্ডপ। এ বছর দুর্গাপূজা সম্পর্কে প্রতিমা শিল্পীদের কাছে জানতে চাইলে তারা বলেন, গত বছরের তুলনায় এই বছরে উৎসব উদ্দীপনার মধ্যে দিয়ে দুর্গাপূজা উদযাপন করা হবে। অন্যান্য বছরে তুলনায় এই বছরে দুর্গাপূজায় কমপক্ষে এক মাস আগে থেকে পূজা মন্ডবে সাজসজ্জার কাজ শুরু হয়েছে। তাই এই বছর উৎসব উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে জাঁক-জমকভাবে দুর্গাপূজা পালন করবে দেবহাটা উপজেলার মানুষ।