
পাইকগাছা প্রতিবেদক
খুলনা জেলার উপকূলীয় উপজেলা পাইকগাছা, যেখানে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব, দীর্ঘস্থায়ী জলাবদ্ধতা এবং নিরাপদ পানির সংকট বহুদিন ধরেই জনজীবনে নানামুখী দুর্ভোগ তৈরি করে আসছে। এ পরিস্থিতির প্রতিবাদে ও সমাধানের দাবিতে আজ ৩০ জুলাই বুধবার সকাল ১১টায় পাইকগাছায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের সামনে ওয়াবদা বেড়িবাঁধে “পানি ও জলবায়ু অধিকার নিশ্চিত করো, বাজেটে বৈষম্য বন্ধ করো !” এই স্লোগানে ওয়াশ বাজেট মনিটরিং ক্লাবের সভাপতি ও অব.সহকারী অধ্যাপক জিএমএম আজহারুল ইসলামের সভাপতিত্বে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। উপজেলা ওয়াশ বাজেট মনিটরিং ক্লাবের সদস্য ও সাংবাদিক পূর্ণ চন্দ্র মন্ডল এর সঞ্চালনায় এসময় বক্তৃতা করেন, মা-সদস্য প্রতিনিধি লাবণী দাশ, নাজমা আক্তার, ওয়াশ বাজেট মনিটরিং ক্লাবের লিল্টু রাণী মন্ডল প্রমুখ। সার্বিক সহযোগিতায় ও তত্ত্বাবধায়নে ছিলেন,উপজেলা কো- অর্ডিনেটর পিন্টু চন্দ্র দাস। মানববন্ধনের মাধ্যমে পানিসংকট, জলাবদ্ধতা ও বাজেট বৈষম্যজনিত সমস্যার বিরুদ্ধে জনসচেতনতা তৈরি এবং সংশ্লিষ্ট নীতি নির্ধারকদের প্রতি কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়। ‘অ্যাকশন টু ক্লাইমেট চেঞ্জ এনসিউরিং সাসটেইনেবল সলিউশন (অ্যাকসেস)’ প্রকল্পের অধীনে মানববন্ধনের আয়োজন করে জাতীয় পর্যায়ের উন্নয়ন সংস্থা ডর্প এবং এতে কারিগরি ও আর্থিক সহায়তা প্রদান করে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা হেলভেটাস বাংলাদেশ।
পাইকগাছা একটি নদী ও উপকূলঘেরা এলাকা, যেখানে অতিবৃষ্টি, নদীভাঙন এবং জোয়ারভাটার ফলে সৃষ্ট দীর্ঘস্থায়ী জলাবদ্ধতা এই অঞ্চলের প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদিও এখানে টিউবওয়েল ও একাধিক পানির উৎস বিদ্যমান, তবে জলাবদ্ধতা ও লবণাক্ততার কারণে অধিকাংশ টিউবওয়েল অকেজো হয়ে পড়ছে অথবা নিরাপদ পানির মান বজায় রাখতে পারছে না। পাশাপাশি, সরকারি খাস পুকুর ও পিএসএফগুলোর রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে পানির সংকট আরও তীব্রতর হচ্ছে। এতে কৃষি উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে এবং নারী, শিশু ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যঝুঁকি দিন দিন বাড়ছে।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, “টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ ছাড়া পাইকগাছার জলাবদ্ধতা কোনোভাবেই নিরসন সম্ভব নয়। জলাবদ্ধতা থেকে সৃষ্ট স্থায়ী জলাবসান মাটির উর্বরতা ধ্বংস করছে এবং একে ঘিরেই ধ্বংস হচ্ছে আমাদের পানির উৎসগুলো। আজ যদি এই সংকট সমাধানে কার্যকর বাজেট বরাদ্দ ও বাস্তবায়ন না হয়, তাহলে অদূর ভবিষ্যতে এ জনপদ নিরাপদ পানির অভাবে বসবাসের অনুপযুক্ত হয়ে পড়বে। তাই এখনই সময় বাজেট বৃদ্ধি এবং তার সঠিক ও কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত করার।”
বক্তারা আরও বলেন, এই উদ্যোগ শুধু অবকাঠামোগত সমস্যা নয়, বরং সচেতনতা ও অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার একটি প্রচেষ্টা। বিশেষ করে নারী ও তরুণ জনগোষ্ঠীকে পানি ও জলবায়ু অধিকার বিষয়ে সচেতন করে বাজেট প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত করাও এ কর্মসূচির অন্যতম উদ্দেশ্য।
মানববন্ধনে উপস্থাপিত প্রধান দাবিসমূহ: সরকারি খাস পুকুর সমূহকে জনগণের নিরাপদ পানির উৎস হিসেবে ব্যবহার নিশ্চিত করতে যথাযথ বরাদ্দ, সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ, জলাবদ্ধতা নিরসনে টেকসই অবকাঠামো গঠন ও বাজেট বাস্তবায়নের পরিকল্পনা গ্রহণ, দীর্ঘস্থায়ী ও পরিবেশবান্ধব বেড়িবাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে জলবায়ু দুর্যোগ প্রতিরোধ সক্ষমতা গড়ে তোলা, পানি, স্যানিটেশন ও হাইজিন (ওয়াশ) খাতে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং সুশাসন নিশ্চিত করতে সিএসও ও সিবিওদের সক্রিয় অংশগ্রহণ। এই মানববন্ধনে মা সংসদ, স্বাস্থ্য গ্রাম দল, ওয়াশ বাজেট মনিটরিং ক্লাব, স্থানীয় সাংবাদিক, নাগরিক সমাজ এবং সচেতন জনগণসহ প্রায় ৫০ জনের বেশি ব্যক্তি অংশগ্রহণ করেন। তারা হাতে প্ল্যাকার্ড, ফেস্টুন ও ব্যানার নিয়ে বিভিন্ন শ্লোগানের মাধ্যমে তাদের ক্ষোভ ও দাবি প্রকাশ করেন।