
কিশোর কুমার : ক্ষুদ্রঋণ নিয়ন্ত্রনকারী কর্তৃপক্ষ মাইক্রাক্রডিট রেগুলাটরি অথরিটি(এমআরএ) এর লাইসেন্স ছাড়াই ক্ষুদ্র সঞ্চয় ও ঋণের ব্যবসা চালিয়ে আসছে পাটকেলঘাটা থানার মির্জাপুর বাজারের বেসরকারি সংস্থা ‘সান’। প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ৩০০ গ্রাহকের কাছ থেকে ৩০ লাখ টাকার আমানত নিয়ে অর্থ ফেরত না দিয়ে তালবাহানা শুরু করেছে । এছাড়া প্রতিষ্ঠানটির সব ধরণের কার্যক্রম সহ ও অফিস বন্ধ রাখছে সংস্থাটি। এমআরএ আইনে-২০০৬-এর ১৫ ধারা অনুযায়ী এ নির্দেশ দেয়া হয়, যো দেশে কোন এনজিও সংস্থা ক্ষুদ্রঋণ বিতরণ করতে চাইলে তাদের আলাদাভাবে এমআরএ’র অনুমোদন নিতে হবে । তবে এ প্রতিষ্ঠানটি কোন অনুমোদন ছাড়াই আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
সরজমিনে অনুসন্ধানে গিয়ে জানা গেছে, সমাজ সেবা অধিদপ্তরের নামে মাত্র অনুমোদন নিয়েই নব্বই দশকে ক্ষুদ্র ঋণের ব্যবসা শুরু করে এ সংস্থাটি । ২০০১ সালের দিকে প্রতিষ্ঠানটির তৎকালীন পরিচালক আজিজুল ইসলাম গ্রাহকের অর্থ ফেরত দিতে ব্যার্থ হওয়ার কারনে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করে রাখে। কয়েক বছর বন্ধ হওয়ার পর “সান” সংস্থাটির সাবেক পরিচালক আজিজুরের সাথে সমঝোতার মাধ্যমে তালার জগদানন্দকাটি গ্রামের গোবিন্দ দাশের পুত্র সাগর দাশ পরিচালক হিসাবে পুনারায় কার্যক্রম শুরু করে। কয়েকটি সমাজিক কার্যক্রম যেমন, পাল্ট্রি মুরগি চাষের প্রশিক্ষণ ও সেলাই প্রশিক্ষণ কর্মশালা দিয়ে শুরু করে আসছিল । এরপর প্রতিষ্ঠানটির পার্শবর্তী গ্রাম মির্জাপুর, জগদানন্দকাটি, বারাত, কেশা, বকশিয়া, নায়াকাটিতে ক্ষুদ্র সঞ্চয়ের মাধ্যম আমানত সংগ্রহ করতে থাকে । এরপর কার্যক্রম বিস্তার লাভ করতে থাকে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে। প্রতিষ্ঠানটি থেকে প্রায় ৮-১০ কিলামিটার দূরত্ব ধানদিয়া ইউনিয়নের ফুলবাড়ি, সেনেরগাঁতি সহ বেশকিছু গ্রামেও কার্যক্রম শুরু করে। প্রথম দিকে সঞ্চয়ের পাশাপাশি ঋণ বিতরণ করলেও পরবর্তীতে তা বন্ধ করে দেয়। কয়েক বছর পর ধানদিয়া-ফুলবাড়ি এলাকার প্রায় ১০০ থেকে ১৫০ গ্রাহকের কাছ থেকে টাকা নিয়ে সেখানে যাতায়াত বন্ধ করে দেয়। ঐসব গ্রাহকের পক্ষে মির্জাপুর এসে এনজিও পরিচালককে খুঁজে বের করা ও অর্থ আদায় করা কষ্টস্বাধ্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। তাই অনেকেই তাদের টাকা ফেরত পেতেও ব্যর্থ হয়। কিছু গ্রাহক অনেকবার মির্জাপুর এসে অর্থ আদায়ের চেষ্টা করলেও তারা অর্থ ফেরত নিতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটি টাকা ফেরত দিতে ব্যর্থ হয়। নাম প্রকাশ অনিচ্ছুক ফুলবাড়ি গ্রামের এক গ্রাহক প্রতিবেদককে জানায় , আমার বিয়ের প্রথম দিকে কিছু টাকা সঞ্চয় করেছিাম। সে সময় দেখি সান সংস্থায় টাকা জমিয়ে তা ফেরত চাইলে তারাই তা বাড়িতে এসে দিয়ে যেত। কখনও অফিসে যেতে হত না। তাই আমিও প্রতি সপ্তাহে অর্থ জমা রাখতে শুরু করি। যখন টাকা লাগত তুলে ফেলতাম। ২/৩ বছর পর হঠাৎ দেখি এই প্রতিষ্ঠানটি আর সঞ্চয় সংগ্রহে আসে না। এমনকি অর্থও ফেরত ও দেয় না।
তিনি বলেন, আমার মামা শশুরবাড়ি মির্জাপুর এলাকায় হওয়ার সুবাদে তাদের সহযোগিতায় ২ হাজার ২০০ টাকার মধ্যে ১ হাজার টাকা পেয়েছি। এরপর অনেকদিন হয়ে গেলেও সান সংস্থা আমার বাকি টাকা আর ফেরত দেয়নি। এমন অভিযোগে ধানদিয়া ইউনিয়নের শতাধিক গ্রাহকের। এদিকে, মির্জাপুর, কেশা, বারাতসহ সংস্থাটির প্রধান কার্যালয়ের পাশ্ববর্তী গ্রামের বিভিন্ন কারনে ২০১৮ সালের অক্টোবর মাস পর্যান্ত সঞ্চয় সংগ্রহ করেছে। এরপর থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত তারা কোন কার্যক্রম পরিচালনা না করেই অফিস বন্ধ রেখেছে । এমনকি বর্তমানে তাদের কোন অফিসও নেই মির্জাপুরে। সংস্থাটির
পরিচালক সাগর দাশের বাড়িতে গ্রাহকরা মাসের পর মাস হাটাহাটি করেও তাদের টাকা ফেরত পায়নি।
অনুসন্ধানকালে কয়েকজন গ্রাহক জানান, আমাদের টাকা ফেরত দিবে এমন আশায় প্রায় দড় দুই বছর ধরে ঘুরছি। কিন্তু আমরা কোন টাকাও পায়নি। আমরা তার বাড়ি যেতে যেতে আমাদের জুতা ক্ষয় হয়ে গেছে। এখন (সাগর) আমাদের বলছে টাকা ফেরত দিতে দেরি হবে। আবার কাউকে বলছে তিন ভাগের একভাগ দেব। আবার কাউকে বলছে অর্ধেক দেব। বাকি টাকা আর পাওয়া যাবেনা না মর্মে সব পরিশোধ হিসাবে স্ট্যাম্পপে লিখে দিতে হবে।
বিষয়টি নিয়ে সান এনজিওর পরিচালক সাগর দাশের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তার ব্যাবহারিত মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। বিষয়টি নিয়ে তালা উপজেলা সমাজসেবার ফিন্ড সুপারভাইজার এনামুল হকের সাথে কথা বললে তিনি জানান, বিষয়টি আমার জানা নেই, তবে বিষয়টা খতিয়ে দেখা হবে। আর কেহ কোন অভিযোগও করেনি আমাদের কাছে। অভিযোগ পেলে তদন্তপূর্বক ব্যাবস্থা গ্রহন করা হবে।