
প্রমথ সানা, পাইকগাছা থেকে:
সৌন্দার্যের লীলাভূমি ও জীব বৈচিত্রে সবুজের সমাহারে ভরপুর পাইকগাছা সামাজিক চর বনায়ন। সবুজ শ্যামলীর নৈসর্গিক সৌন্দার্যের হাতছানি শীবসা নদের কোল জুড়ে এক অপূর্ব শোভায় শোভিত হয়েছে পাইকগাছার এসকল নদীর চর বনায়ান। পৌরসভা সদরে সাড়ে ৫ হেক্টর, লতা ১২ হেক্টর, দেলুটি ১৪ হেক্টর ও সোলাদানা ইউনিয়ানে সাড়ে ২৩ হেক্টর চর বনায়ন রয়েছে যা মোট ৫৫ হেক্টর ম্যানগ্রোভ বাগান।
সরজমিনে এসকল বনায়ন ঘুরে দেখা যায়, সকাল সন্ধ্যায় সেখানে শুধু পাখির কলোবরে মুখরিত নয় প্রকৃত প্রেমিরাও ছুটে যাচ্ছে সবুজের মোহে। শিবসা নদের চর ভরাটের জমিতে উপজেলা বন বিভাগ এ সকল পতিত চরভরাটি জমি জুড়ে বনায়ন করার পরিকল্পনা গ্রহণ করে। সে অনুযায়ী ২০১১, ২০১২ ও ২০১৪ আর্থিক সালে এ বাগানগুলো সৃজন করা হয়।
মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে ব্যবধানে গাছগুলো দ্রæত বেড়ে পূর্ণ বয়স্ক হয়ে উঠেছে। গাছগুলো প্রচন্ড বর্ধনশীলতার জন্য অধিকাংশ গাছ ৩০ থেকে ৫০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়েছে। পর্যাপ্ত শাখা প্রশাখায় তর তর করে বেড়ে উঠেছে গাছগুলো। গাছগুলো এত দ্রæত বর্ধনের জন্য পরিবার পরিজন নিয়ে সবাই প্রতিনিয়ত ভীড় করছে। বলা যায়
এ সকল বাগান গুলি প্রত্যেকটি দৃশ্যমান, সফল ও দৃষ্টিনন্দন। এ বনায়নে আছে শিয়াল, সাপ, বেজি, গুইসাপ, ইঁদুর, মৌমাছি সহ বিভিন্ন প্রজাতির কীটপতঙ্গ। এখানে আছে জানা অজানা অনেক পাখি। রঙে, রূপে-আকারে, গানের আর গতিতে এরা বনকে করে তোলে আরো প্রাণবন্ত। এযেন প্রতিটা বাগান মনে করিয়ে দেয় সুন্দরবনের প্রতিচ্ছবি। কেওড়া, ছইলা, বাইন, কাকড়া, গোলপাতাসহ নানা প্রজাতির গাছ রয়েছে এ বনায়নে। বর্ষায় থোকায় থোকায় ঝুলে থাকে কেওড়া আর ছইলা।
মৌচাক বাঁধে মৌমাছি। সামাজিক বনবিভাগের প্রচেষ্টায় এখানে গড়ে উঠতে পারে আরো অনেক ছোট ছোট ম্যানগ্রোভ সুন্দরবন। যা পরিবেশের ভারসাম্য ও জীববৈচিত্র সংরক্ষণে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারে। এ অঞ্চলে ১০০ হেক্টর পতিত চর জমি রয়েছে। সেখানে ম্যানগ্রোভ প্রজাতির বনায়ন করা সম্ভব।
এসকল বন থেকে কেওড়া, ছইলা, গোলপাতা, মধু বিক্রয় করে স্থানীয় উপকার ভোগীগণ লাভবান হচ্ছে। এঅঞ্চলে সামাজিক বনায়নে আরও প্রচার প্রসার ঘটালে দরিদ্র জনগোষ্ঠী বেকারত্বের পাশাপাশি আর্থিক সংকট দূর হবে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় ভূমিকা রাখবে।
এ প্রসংগে উপজেলা সফল বন কর্মকর্তা প্রেমানন্দ রায় এর সাথে আলোচনাক্রমে জানান, নানা প্রতিকূলতার মাঝেও চরবনায়ান সফল হয়েছে। প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় উপকার ভোগীবৃন্দের সার্বিক সহযোগিতায় বাগানগুলো সুরক্ষিত থাকবে বলে তিনি আশা-পোষন করেন।