আহাদুর রহমান:
বাড়ির পাশে এক বিঘা আয়তনের তিনটি ঘের নিয়ে চারা মাছের চাষ করেন আলমগীর। এরই মধ্যে চোখ পড়ে ঘেরের পাশের বাড়ির মফিজুলের সংসারে। গোপনে তার স্ত্রীর মোবাইল নম্বর যোগাড় করে শুরু হয় কথোপকথন। এক পর্যায়ে মোবাইলে প্রেমালাপ থেকে পরকীয়া। এভাবেই সুখের সংসারে তুষের আগুন। অবশেষে ভেঙেই গেল ১৪ বছরের সংসার।
সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার কুল্যা ইউনিয়নের পুরোহিতপুরের মফিজুল ইসলাম। বয়স ৩৬। কর্মজীবনে চাষ থেকে শুরু করে যখন যে ধরনের কাজ পান তা দিয়েই সংসার চালান। ১৪ বছর আগে বিয়ে করেন কুল্যোর মোড়ের দাউদ সরদারের মেয়ে হাফিজা খাতুনকে (২৮)। সংসার জীবনে এই দম্পতির ১১ বছর বয়সী হাফিজ ও ৯ বছর বয়সী রনি নামের দুই ছেলে সন্তান আছে। সুখেই চলছিল সব। কিন্তু হঠাৎ সুখের সংসারে অশুরের আগমন। তারই বাড়ির পাশের এক বিঘা আয়তনের তিনটি পুকুর নিয়ে চালাই মাছের চাষ করে কুল্যা ইউনিয়নের পুরোহিতপুর গ্রামের কেরামত সরদারের ছেলে আলমগীর হোসেন(৩০)।
এ সময় তার কু-নজর পড়ে মফিজুলের সংসারে। সুযোগ বুঝে মফিজুলের স্ত্রী হাফিজার মোবাইল নম্বর যোগাড় করে শুরু করেন প্রেমালাপ। এক সময় স্বামীর অগোচরে মত্ত হন পরকীয়া প্রেমে। প্রায় চার বছর ধরে চলে এভাবেই। তার মধ্যে মফিজুলের ছেলেরা বড় হয়। করোনার কারণে স্কুল বন্ধ থাকায় তারাও বাড়িতে থাকে। এরই মধ্যে তাদের চোখে পড়ে মায়ের কুকীর্তি। তারা বাবাকে এ বিষয়ে জানাতে চায়। হাফিজা বিষয়টি আঁচ করতে পেরে বড় ছেলে হাফিজকে বালিশ চাপা দিয়ে ও ছোট ছেলে রনির গলায় শিকল পেঁচিয়ে হত্যার চেষ্টা করে।
কিন্তু এ সময় মফিজুলের পরিবারের লোকজন টের পাওয়ায় এ যাত্রায় বেঁচে যায় দু’শিশুর জীবন। তারপরই বের হয়ে আসে আসল ঘটনা। মফিজুল ছেলেদের থেকে জানতে পারেন তার স্ত্রী পরকীয়ায় আসক্ত। ঘটনাটি প্রায় ছয় মাস আগের। এরপরই হাফিজা মায়ের সাথে বাবার বাড়িতে চলে যায়। একাধিকবার বাচ্চাদের মুখের দিকে তাকিয়ে চেষ্টাও করেন তাকে এ পথ থেকে ফেরাতে। কিন্তু বিধিবাম। হাফিজা মানতে নারাজ। সে প্রথমে তার খালাতো ভাই আগরদাড়ি গ্রামের রেজাউল কবিরাজের ছেলে ইদ্রিসদের বাড়ি। তার কিছুদিন পর বাবার বাড়িতে ফিরে যায়।
গত তিন মাস আগে ঢাকায় একটি গার্মেন্ট্স এ কাজ নেন হাফিজা। তারপরও একাধিকবার মফিজুল চেষ্টা করে সংসার টেকানোর জন্য। কিন্তু হাফিজা শর্ত দেয় এ ক্ষেত্রে অবশ্যই আলমগীরকে তার বাড়িতে অবাধ যাতায়তের সুযোগ দিতে হবে। চলতি মাসের ১৭ তারিখ হাফিজা আলমগীরের সাথে ঢাকায় যাওয়ার জন্য সাতক্ষীরা শহরের বিআরটিসি কাউন্টারে আসে। এসময় জানতে পেরে মফিজুল কাউন্টারে গিয়ে তাদের আটকায়। আলমগীর মফিজুলকে দেখে পালিয়ে যায়। কিন্তু হাফিজা ও তার খালাতো ভাই ইদ্রিস পালাতে পারেনি। তবে স্থানীয় এক মেম্বারের সহযোগীতায় তাদের ছাড়িয়ে নেয় আলমগীর। এ বিষয়ে কুল্যা ইউনিয়ন পরিষদে একটি অভিযোগ করেন মফিজুল ইসলাম। যা এখনও বিচারাধীন।
মফিজুল ইসলাম বলেন, আমার সুখের সংসার পুরোটাই ধ্বংস করে দিয়েছে আলমগীর। এর জন্য দায়ী হাফিজা, তার মা মাসুমা ও খালাতো ভাই ইদ্রিস। আমার দুই বাচ্চার মা বেঁচে থেকেও এতিম। তাদের খাওয়ার কষ্ট হচ্ছে। এতদিনের সংসারে অশান্তি করে সে চলে গেল। বারবার বুঝিয়েও তাকে ফেরাতে পারলাম না। এখন উল্টো বিভিন্ন সময় অপরিচিত মোবাইল নম্বর থেকে ফোন দিয়ে অব্যাহত হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। এদিকে আলমগীর আমাকে দেখে নেওয়ার জন্য নাকি ১০ লাখ টাকা জোগাড় করে রেখেছে। আমার ছোট দু’শিশু সন্তান নিয়ে আমি এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।