শ্যামনগরে বিএনপি কর্মীর চাঁদাবাজি, দখলবাজি, অপরাধ-অপকর্মের সংবাদ দৈনিক সাতনদী পত্রিকায় প্রকাশ হতেই কতিপয় অসভ্য জীবের জঘণ্য ধৃষ্টতা দেখতে পেলেন শ্যামনগর তথা গোটা সাতক্ষীরাবাসী। বেপরোয়া কর্তৃত্বে উন্মত্ত হয়ে ওঠা চিহ্নিত অপরাধীরা জেলার জনপ্রিয় দৈনিক সাতনদী পত্রিকা আগুনে পুড়িয়ে দিলো, তারাই ঘোষণা করলো সংশ্লিষ্ট সাংবাদিককে খুঁজে বের করে কঠিন শায়েস্তা করারও। লুটপাটে অভ্যস্ত লোভী ব্যক্তির যাবতীয় অপকর্মকে চাপা দিতে রীতিমত বিএনপির ব্যানারকে ব্যবহার করা হলো। এখানেই শেষ নয়, উপজেলা বিএনপির শীর্ষ নেতা পালের গোদা সেজে পুরো জঘণ্যতাকে বৈধতা দেয়ারও পাঁয়তারা চালালেন। আসলে থানা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড পর্যায়ে থাকা ঘনিষ্ট পান্ডাদের চাঁদাবাজি, লুটপাটের ভাগ পাওয়ার বিপরীতে এসব নেতা বিবেক বিবেচনাকে যেন শরবত বানিয়ে গিলে ফেলেছেন, চোখেও পড়েছেন কাঠের চশমা। লজ্জা, ঘৃণা, নৈতিকতা চুলোয় জ্বালিয়ে পুড়িয়ে নিশ্চিহ্ন করতে করতেই তারা মানুষের ঘরবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, গণমানুষের বিবেক খ্যাত পত্রিকা পোড়াতেও সিদ্ধহস্ত হয়ে উঠেছেন। দিন দিনই মূর্তমান আতংক হয়ে উঠছেন। আজ যারা সবাইকে দলের প্রতিপক্ষ বানিয়ে হামলা, দখল, জ্বালানো পোড়ানোর অপকর্মে লিপ্ত হয়েছেন, খুব শিগগির তারা নিজ দলের নেতা-কর্মি-সমর্থকদের উপরও ঝাঁপিয়ে পড়বেন-তাদের কাছে কেউ নিরাপদ না। নিজের আস্ফালন প্রদর্শনের খুটি হিসেবেই তারা দল-সংগঠনকে ব্যবহার করে থাকে মাত্র। সংবাদপত্র হচ্ছে সমাজের আয়না। সমাজ কেমন অবস্থায় আছে, কোন দিকে যাচ্ছে- তা সংবাদপত্রের পাতায় চোখ রাখলেই স্পষ্ট হয়ে উঠে। গণমানুষের সেই আয়না খ্যাত সংবাদপত্র আগুনে পোড়ানোর মানে হলো বাক স্বাধীনতার বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া, মুক্ত মত প্রকাশের কন্ঠকে গলা টিপে রুদ্ধ করে দেওয়া। এই গর্হিত কাজটি প্রকৃত কোনো রাজনীতিবিদ, দলীয় নেতা-কর্মিরা কোনভাবেই করতে পারেন না। সমাজের অসচেতন, গণ্ড, অসভ্যরাই কেবল গণমাধ্যমকে আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু করতে পারেন, এ জঘণ্রতা আর কাউকে মানায় না। কোন পত্রিকার প্রতিবেদনে তথ্যগত ভুল ছাপা হলে, পত্রিকায় প্রতিবাদ পাঠানোর মৌলিক অধিকার সকলেরই আছে। শুধু নেতা, কর্মি, কর্তাদের জন্য নয়- একজন সাধারণ পাঠকও প্রতিবাদ পাঠানোর অধিকার ও ন্যায্য সুবিধা পাওয়ার দাবিদার। তার আত্মপক্ষ সমর্থন ও নিজস্ব অভিমত প্রকাশের জন্য সর্বদাই পত্রিকার সম্পাদকীয় প্রতিষ্ঠানটি প্রস্তুত থাকে। কিন্ত শ্যামনগরের কথিত ষন্ডারা সেই চিরাচরিত নিয়ম কানুনকে পাত্তা দেয়নি, তারা পেশীশক্তির উপর ভর করেছে। বাকশালী আওয়ামিলীগ সরকারকে বিদায় করে আমরা কী এমন নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণেরই স্বপ্ন দেখেছিলাম? নিশ্চয়ই না। তবে দলের নাম ভাঙ্গিয়ে, পদ-পদবী ব্যবহার করে যারা ন্যাক্কারজনক ঘটনাটি ঘটিয়েছেন তারা আরো অপকর্ম, লুটপাট, দখলবাজি, চাঁদাবাজি চালাতে চান, সন্ত্রাসী সাম্রাজ্য প্রতিষ্টার স্বপ্ন দেখছেন। সংবাদপত্রে আগুন দেওয়া, সাতনদী পত্রিকার সাংবাদিক কে হুমকি দেওয়া এগুলো আইন বিরোধী, রাজনৈতিক শিষ্ঠাচার পরিপন্থী। পত্রিকা পোড়ানোর জঘণ্যতায় জড়িত কুলাঙ্গারের নাম বাংলা ভাষায় লেখা হলে বাংলা ভাষার জনক ইশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের প্রতি অবিচার করা হবে। আমরা এই ধৃষ্টতার তীব্র নিন্দা জানাই।