হাবিবুর রহমান: জমি গ্রাস করতে চাচাকেও ছাড়েনি তালা সদর সহকারি ভূমি কর্মকর্তা আনিছুর রহমান। বাবার সুক্ষ্ম কাগজ কলমের ফাঁকিকে পুঁজি করে তার মরহুম চাচার অসহায় প্রতিবন্ধী পরিবারটিকে উচ্ছেদের চেষ্টা চালাচ্ছে সে। অন্যদিকে উঠে না গেলে বল প্রয়োগের হুমকিও দিয়েছে সে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, আজিজুর রহমান ও শেখ আমিনুর ইসলাম দুলু পরষ্পর ভাই ও তাদের আরও তিন বোন আছে। তাদের পিতা মারা যাওয়ার পর বড় ভাই আজিজুর বিভিন্ন কৌশলে জমি হাতিয়ে নেন। আজিজুর মুহুরি হওয়ায় আইনের পথঘাট তার হাতের তালুর মতো চেনা। তাই তিনি জমির খাজনা বাকি রাখতে রাখতে নিলাম করিয়ে দেন। সে জমি নিজেই আবার কিনে নিয়ে জমির মালিক বনে যান। এ পুরো প্রকিয়াই অবৈধ। এভাবে এতিম ভাই বোনদের শরীক ফাঁকি দিয়ে পুরো জমি হাতিয়ে নেন। বঞ্চিত হয় অসহায় এই পরিবারটি। এরই মধ্যে এই জমি নিয়ে বিভিন্ন শালিষ হয়। কিন্তু তারপরও আজিজুর জমি দিতে অস্বীকার করে। তবে তিনি দুলুকে প্রস্তাব দেন যে দুলুর নামে ২ কাঠা জমি লিখে দিবে কিন্তু বোনদের জমি দিবে না। দুলু তাতে বাধ সাধলে তাকেও বঞ্চিত করে আজিজুর। শুধু তাই নয় আশে পাশের আরও কয়েকজনের জমি এভাবে লিখে নিয়েছে আজিজুর। এরই মধ্যে ভূমি অফিসে চাকরি পায় আনিছুর রহমান। বাবার দেখানো পথে হেটে দুর্নীতির মাস্টারমাইন্ড আনিছুর উচ্ছেদের চেষ্টা চালাচ্ছে মরহুম দুলু’র অসহায় পরিবারটিকে যার তিন সদস্যই মুক ও বধীর।
বাবার সাথে গোলযোগের সুত্র ধরে আনিছুরের নামে মামলা হয়। সে সময় বেশ কিছুদিন সাময়িক বরখাস্ত ছিলো সে। তখন দুলু বেঁচে থাকা কালে তার পরিবারের সাথে ঘনিষ্টতা বাড়ায় আনিসুর। কিন্তু যখনই তার বাবা মামলা তুলে নেয় তখনই চোখ উল্টে আপন চাচা, প্রতিবন্ধি চাচাতো ভাইকে উচ্ছেদের অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়। প্রায় দিনই সে মরহুম দুলু’র স্ত্রী জাহানারা বেগম(৫০) কে বাড়িঘর ছেড়ে চলে যেতে বলে। এখন প্রায়ই মামলার হুমকি দেয়। চাকরি ফিরে পেয়ে দুর্নীতি করে অসৎ পথের আয়কে পুঁজি করে নানা ভাবে হয়রানি করছে তাদের। হুমকি দিচ্ছে বল প্রয়োগেরও।
জানা যায়, শেখ আমিনুর ইসলাম দুলু ও জাহানারা বেগমের বড় ছেলে ইকবাল হোসেন(৩২) মুক ও বধীর ও ছোট ছেলে ইমরান নাজির পরিবারের সুখের জন্য ঢাকায় চাকরি খুঁজে বেড়াচ্ছে। তাকে ভর্তি করা হয় খুলানা বোয়ালখালী প্রতিবন্ধি স্কুলে। প্রায় ৭বছর পূর্বে সে স্কুলেরই আরেক ছাত্রী বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী পারভীন বেগমের সাথে বিয়ে হয়। স্কুলটির তৎকালীন সভাপতি ছিলেন বিভাগীয় কমিশনার আব্দুস সামাদ। তিনিই তাদের বিয়ের খরচ বহন করেন। বেশ কিছু উপহারও দেন এ দম্পতিকে। অন্যদিকে জাহানারা বেগমও অসুস্থ্য। নিয়মিত ওষুধ খেতে হয় তাকেও। তার ব্যয়ও নেহায়েত কম না। তার উপর উচ্চমূল্যের বাজারে খুব কষ্টে কোনরকমে টিকে আছে পরিবারটি। দূর্নীতির ও অসততার মাধ্যমে প্রভাবশালী বনে যাওয়া নায়েব আনিছুর ও মুহুরি আজিজুরের হাত থেকে বাঁচাতে জেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ জরুরী।
জাহানারা বেগম জানান, আমার দুই ছেলে। বড় ছেলে প্রতিবন্ধী। ছোট ছেলেটা চাকরির জন্য ঢাকায় ছুটাছুটি করছে। আমার বড় ছেলে বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী। খুলনা বোয়ালখালী প্রতিন্ধী স্কুলে পড়া কালীন ওই স্কুলের ছাত্রী বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী পারভীন বেগমের সাথে বিয়ে দেন ওই স্কুলের তৎকালীন সভপতি ও খুলনার বিভাগীয় কমিশনার আব্দুস সামাদ। বিয়ের যাবতীয় খরচ তিনি নিজে বহন করেন। সেই সময় বেশ কিছু ব্যক্তিগত উপহার সামগ্রীও দিয়েছিলেন তিনি। ভাগ্যের নির্মমতায় আমার ছেলের একটি মেয়ে হয় যার নাম ইয়াসফা(৪)। কিন্তু সেও বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী।
জাহানারা বেগম আরও বলেন, আমার স্বামী বিভিন্ন দূরারোগ্য ব্যধীতে আক্রান্ত ছিলেন। গতবছর তিনি মারা যান। খুব কষ্টে আমাদের দিন চলে। এরই মধ্যে আজিজুরের ছেলে আনিছুর (নায়েব) বার বার আমাদের জায়গা ছেড়ে চলে যেতে বলে। নানা রকম ভয়ভীতি দেখায়। উচ্ছেদের চেষ্টা চালায়। আমার স্বামীর ভিটে ছেড়ে কোথাও যাব না। আনিছুরের বাবা কারসাজি করে জমিটি পুরো নিজের নামে নিয়েছে। আইনি প্রক্রিয়ায় যেয়ে তা উদ্ধারের সামর্থ আমাদের নেই। কোন রকমে খেয়ে না খেয়ে দিন চলে। তার উপরে ঘন ঘন আনিছুরের হুমকি। আমরা অসহায় বলে কেউ এ বিষয়ে মাথা ঘামায়না। আনিছুর সরকারি চাকরি করে। বার বার আমাকে মামলার হুমকি দেয়। তার সাথে আমরা পেরে উঠিনা।
আনিছুরদের কবল থেকে রক্ষা পেতে জেলা প্রশাসকের কাছে আকুতি জানিয়েছে এ অসহায় পরিবারটি।