
নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাইসুল ইসলাম রাসেল। সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার নলতা ইউনিয়নের উত্তর কাজলা গ্রামের আমিরুল ইসলামের পুত্র। কিন্তু বাবা-মায়ের দাম্পত্য জীবনে কলহ চলে আসলে রাইসুলের ঠাই হয় ইন্দ্রনগর ফাজিল মাদ্রাসার এতিমখানায়। ওই মাদ্রাসা থেকে সে আলিম পাস করে। ছাত্র জীবন থেকেই সে ইসলামি ছাত্র শিবিরের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলো। ২০১৩ সালে দেশজুড়ে সাধারণ মানুষের হাট-বাজার, বাড়ি-ঘর, স্কুল-কলেজ সর্বত্র পেট্রোল বোমা মেরে শত শত নিষ্পাপ শিশু, নারী ও কর্মজীবী মানুষকে আজীবনের জন্য পঙ্গু করে দেয় জামায়াত-শিবির চক্র। তখন উত্তপ্ত হয়ে ওঠে সাতক্ষীরা জেলা।
জামায়াত-শিবিরের হিংস্রতায় রাজনীতির নামে দেশজুড়ে আগুন-সন্ত্রাস ও কুপিয়ে হত্যাযজ্ঞ মত জঘন্য কাজে নেতৃত্ব দেয় রাইসুল। ১৩ সালে ১৮ সেপ্টেম্বর সাতক্ষীরার কদমতলা নামক স্থানে ঢাকা থেকে সাতক্ষীরা গামী ৬টি পরিবহনে তৎকালীন জামায়াতের সাতক্ষীরা জেলা সেক্রেটারি নুরুল হুদা, ইসলামিক টেলিভিশনের কথিত সাংবাদিক আবু সাঈদ ও শিবির নেতা রাইসুলের নেতৃত্বে ১০০/১৫০ জন জনতাবদ্ধ্যে বোমাবাজির করার জন্য অস্ত্র-শস্ত্রে উক্ত স্থানে সজ্জিত হয়ে পরিবহন ভাঙচুর করে ব্যপকভাবে ক্ষতিসাধন করে। এবং যাত্রীদের নির্বিচারে মারপিক করে গুরুতর জখম করে তান্ডব সৃষ্টি করে। খবর পেয়ে সাতক্ষীরা সদর থানার এস আই আসাদুল ইসলামের নেতৃত্বে সংগীয় অফিসার ফোর্স ঘটনাস্থলে গিয়ে ঘটনা নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করলে এতে নাশকতাকারীরা আরোও বেপরোয়া হয়ে যায় এবং দুপক্ষের ব্যপক সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়। এসময় পুলিশ ৫০ রাউন্ড গুলি এবং ৩ রাউন্ড টিয়ার গ্যাস সেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে তাদেরকে ছত্রভঙ্গ করে। এসময় ঘটনাস্থল থেকে রাইসুল ইসলামসহ ৯ জন জামায়াত-শিবিরের নেতাদের আটক করে পুলিশ। এ ঘটনায় সাতক্ষীরা সদর থানার এস আই আসাদুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। যার নাম্বার জিআর ৭৬২/১৩ (সাত)। পরে রাইসুল জামিনে মুক্তি পায়।
এছাড়াও ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি জামায়াত নেতা দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর ফাঁসির রায় ঘোষণার পর জেলা জুড়ে জামায়াত-শিবিরের তান্ডব শুরু হয়। শহরতলীর বকচরা মোড়ে পুলিশ ও বিজিবির ধাওয়া খেয়ে কদমতলার দিকে ফেরার পথে জামায়াত-শিবিরের কিছু নেতা-কর্মী প্রথমে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা প্রভাষক মামুনের বাড়িতে প্রবেশ করে মামুনকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে জামায়াত-শিবিরের কয়েকশ’ নেতাকর্মীকে ডেকে এনে ছাত্রলীগ করার অপরাধে মামুনকে নৃশংসভাবে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করে। এক পর্যায়ে তারা মামুনের স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস ও বাবা শহীদুল ইসলামসহ তার ছোট বোনকে মারপিট করে ঘরের নীচের তলার দরজায় তালা মেরে ঘরে পেট্রোল ঢেলে ও গান পাউডার ছড়িয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ ঘটনার সাথে রাইসুলের সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।
একসময় উত্তপ্ত সাতক্ষীরার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসলে পুলিশি অভিযান থেকে বাঁচতে নাশকতা মামলার আসামী রাইসুল এলাকা থেকে পালিয়ে ঢাকাতে চলে আসে। তার পরিবারের ৬ সদস্যের মধ্যে ৫ সদস্যই সরকার বিরোধী আন্দোলনের আসামী। দীর্ঘদিন গা ঢাকা দিয়ে থাকার পর শুরু হয় রাইসুলের আওয়ামীলীগের ছত্রছাঁয়ায় আসার মিশন। কৌশলে সে ঢুকে পড়েন আওয়ামী মোটরচালকলীগ নামের একটি সংগঠনে। সেই সংগঠনের হয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে নিজেকে প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা ও আওয়ামী মোটরচালকলীগের দপ্তর সম্পাদক হিসেবে পরিচয় দিতে শুরু করে। ২০১৯ সালের ৩০ মার্চ সাতক্ষীরা সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান বাবু ও তৎকালীন জেলা ছালীগের সাধারণ সম্পাদক সুজনের সাথে প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা পরিচয়ে শুভেচ্ছা বিনিময় করে। এরপর আস্তে আস্তে সে নিজেকে অনেক বড় আওয়ামী লীগের নেতা হিসেবে জাহির করতে শুরু করে। শুরু হয় তার ফটো রাজনীতি। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সাথে ছবি তুলে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করে জানান দেয় সে বর্তমানে অনেক বড় আওয়ামী লীগ নেতা। এর ভিতরে সে নিয়মিত শিবিরের নেতাকর্মীদের সাথে যোগাযোগ রাখে বলে জানা যায়।
পরে রাইসুলকে গ্রেফতার করতে তার গ্রামের বাড়ি সাতক্ষীরার নলতার উত্তর কাজলা গ্রামে পুলিশে গ্রেফতার অভিযান চালায় এবং পুলিশ ঢাকায় তার অবস্থান জেনে ফেলায় সে গ্রেফতার এড়াতে গত জানুয়ারিতে সাতক্ষীরা কোর্টে হাজিরা দিয়ে জামিন নিয়ে নির্ধিদায় আবারও মোটরচালকলীগের দপ্তর সম্পাদক হিসেবে পরিচয় দিয়ে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ন স্থানে অবাধ যাতায়াত করছে। যা রাষ্ট্রের জন্য হুমকি স্বরুপ। ইতোমধ্যে সে প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি উপস্থিতির কয়েকটি অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছে। গত ২১ ফ্রেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি উপস্থিতে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে নিরাপত্তা রক্ষীদের চোখ ফাঁকি দিয়ে ঢুকে পড়ে। এছাড়াও সে আওয়ামিলীগের কেন্দ্রীয় নেতা-কর্মীদের সাথে সুযোগ বুঝেই ছবি তুলে ফেসবুকে সাটিয়ে নিজেকে আওয়ামী লীগের উর্ধ্বতন নেতাদের খুব কাছের বলে পরিচয় দেয়।
এলাকাবাসী জানান, রাইসুল ছোট বেলা থেকে ইন্দ্রনগর মাদ্রাসায় পড়ালেখা করাকালীন সময়ে ছাত্র শিবিরের রাজনীতি করতো। ১৩ সালে তার বিরুদ্ধে নাশকতা মামলা হওয়ার পর দীর্ঘদিন পালিয়ে থাকার পর হঠাৎ আওয়ামীলীগ নেতা পরিচয়ে সে ফিরে আসে।
এব্যাপারে নলতা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল হোসেন বলেন, রাইসুল একজন শিবির নেতা। এবং সরকার বিরোধী নাশকতা মামলার আসামী। সে এখন নিজেকে প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা ও মোটরচালকলীগ নামের একটি সংগঠনের দপ্তর সম্পাদক হিসেবে পরিচয় দেয়। বিষয়টি অত্যান্ত দুঃখজনক। তাকে দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় এনে শাস্তি দেয়া উচিৎ।