নিজস্ব প্রতিবেদক: শ্যামনগর উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ রফিজ মিয়ার নারী শিক্ষকের শীলতাহানি কেলেঙ্কারিতে ডানহাত হিসেবে কাজ করছেন ৭৯ নম্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ নুর আলী । উপজেলা শিক্ষা অফিসার প্রধান শিক্ষক নুর আলী কে তুরুপের তাস বানিয়ে খেলছেন । মোঃ নুর আলী নিজের ক্ষমতার সর্বোচ্চ অপব্যবহার করে ওই নারী শিক্ষিকাকে নানাবিধ চাপ, দমন ও নিপীড়ন করে চলেছেন দির্ঘদিন ধরে। ঘটনা সুত্রে জানা যায় ওই শিক্ষিকা কোভিড- ১৯ এর বুস্টার ডোজ গ্রহনের মেসেজ পেয়ে প্রধান শিক্ষকের কাছে তিন দিন ছুটি প্রার্থনা করেন । প্রধান শিক্ষক ঐদিন ক্লাস্টার মিটিংয়ে থাকায় দরখাস্ত রেখে যেতে বলেন নারী শিক্ষককে । দরখাস্তে প্রার্থিত তিনদিন ছুটি ভোগ করার পর বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখেন তার স্বাক্ষরের স্থানে তিন দিন অনুপস্থিত লেখা হয়েছে। তিনি হাজিরা খাতায় অনুপস্থিত করার বিষয়টি জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক বলেন উপজেলা শিক্ষা অফিসার আমাকে এই কাজটি করতে বলেছেন। আপনার সমস্যা হলে আপনি শিক্ষা অফিসারের সাথে দেখা করেন। অনুপস্থিতি লেখাজনিত সমস্যা সমাধান করতে ওই নারী শিক্ষক স্কুল শেষে অফিসে শিক্ষা অফিসারের কক্ষে দেখা করেন। সমস্যা সমাধানের পরিবর্তে শিক্ষা অফিসারের কক্ষে প্রবেশ করার পর ন্যক্কারজনক সেই ঘটনাটি ঘটে। বিষয়টি তিনি প্রধান শিক্ষককে জানালে কোন ব্যাখ্যা প্রদান না করে বিষয়টিকে সাধারণ ভাবে নিতে বলেন। ভুক্তভোগী ওই নারী শিক্ষক তার স্বামীকে জানালে স্বামী উপজেলা শিক্ষা অফিসারের কাছে বিষয়টি জানতে চান । ওই সময়ে শিক্ষা অফিসারের কক্ষে ধাকা দালাল শ্রেণীর কতিপয় শিক্ষক নেতা উল্টো জরিমানা করে স্বামীকে উপস্থিত সবাইকে খাওয়ানো প্রস্তাব দেন এবং বিষয়টি সাদামাটা ভাবেই গ্রহণ করার প্রস্তাব দেন। নারী শিক্ষক আরো অসহায় হয়ে প্রতিকারের কথা বললে উপজেলা শিক্ষা অফিসার তার ২ মাসের বেতন আটকে রাখেন। পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হচ্ছে জেনে প্রধান শিক্ষক নুর আলীকে ব্যবহার করেন উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ রফিজ মিঞা।
শুরু হয় প্রধান শিক্ষক মোঃ নূর আলীর পক্ষ থেকে নানামুখী চাপ। ওই নারী শিক্ষক তার সমস্যার সমাধান পাইতে শিক্ষক নেতৃবৃন্দদের সাহায্য চান। শিক্ষক নেতৃবৃন্দদের পক্ষ থেকে আশার বানী না পেয়ে তার সমস্যার প্রতিকারের জন্য জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সাতক্ষীরা, জেলা প্রশাসক, সাতক্ষীরা এবং মহা-পরিচালক, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর, ঢাকা বরাবর আবেদন করলে প্রধান শিক্ষক ঐ নারী শিক্ষকের সাথে চাকুরীবিধির নিয়মনীতি উপেক্ষা করে বিভিন্ন ধরনের কুট কৌশল ব্যবহার করা শুরু করেন।
প্রধান শিক্ষক উপজেলা শিক্ষা অফিসারের পরামর্শ মোতাবেক বিভিন্ন সময়ে প্রয়োজনীয় ছুটি বন্ধ করে দেন। প্রধান শিক্ষক ঐ শিক্ষককে উপজেলা শিক্ষা অফিসারের কাছে ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চাইতে বলেন।
ওই নারী শিক্ষক উপজেলা শিক্ষা অফিসারের কাছে ক্ষমা চাইতে যাওয়ার বিষয় অস্বীকার করলে প্রধান শিক্ষক নুর আলী নানাভাবে ওই নারী শিক্ষকের উপর স্টিমরোলার চালাতে থাকেন তাকে সাফ জানিয়ে দেন কোন রকমের ছুটি তাকে দেয়া হবে না । নারী শিক্ষকের মায়ের মৃত্যু বার্ষিকী পালন করতে একদিনের নৈমিত্তিক ছুটি দাবি করলেও প্রধান শিক্ষক ওই নারী শিক্ষকের ছুটির অনুমতি দেননি। বিষয়টি সহকারী উপজেলা শিক্ষা প্রধান শিক্ষককে অনুরোধ করে এক দিনের ছুটির ব্যবস্থা করে দেন। দীর্ঘ সময় ধরে প্রধান শিক্ষক নারী শিক্ষকের উপর নানারকম চাপ প্রয়োগ করতে থাকেন। একই বিদ্যালয়ের দুজন নারী শিক্ষক একই ভ্যান গাড়ীতে যাতায়াত করতেন। প্রধান শিক্ষক অপর নারী শিক্ষককে জানিয়ে দেন তাকে একা আসতে এবং প্রধান শিক্ষক দুজনের ভাড়া মিটিয়ে দেবেন। যাতে বুক্তভোগী নারী শিক্ষকের পরিবহন সংকট তৈরী হয় এবং যথা সময়ে বিদ্যালয়ে আসতে না পারেন।
প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয় অন্য সকল সহকারী শিক্ষকের সাথে যে ব্যবহার করেন লাঞ্চিত নারী শিক্ষকের সাথে ব্যবহার করবেন তার উল্টোটা। অন্যান্য সরকারি শিক্ষকগণ দীর্ঘদিন ধরে নৈমিত্তিক ছুটি ভোগ করে আসছেন কিন্তু লাঞ্চিত শিক্ষকের বেলাতে ঘটছে উল্টো কথা। উপর মহলের নির্দেশ আছে, “তোমাকে কোন প্রকার ছুটি দেওয়া হবে না।” একটাই কথা উপজেলা শিক্ষা অফিসারের নিকট থেকে মাপ চেয়ে আসলেই সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে যাবে। এমন পরিস্থিতিতে উক্ত নারী শিক্ষক জেলা প্রশাসক এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর মহাপরিচালক বরাবর প্রতিকার চেয়ে আবেদন করলে অত্যাচারের মাত্রা আরো বেড়ে যায়।
পান থেকে চুন খসলেই ওই নারী শিক্ষকের উপরে আরো চাপ প্রয়োগ করা হয় একই প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে অন্যান্য সকল সহকারী শিক্ষক প্রধান শিক্ষককে নিয়ে চার কাপে চায়ের কাপে মুখ দেয় তখন ঐ নারী শিক্ষক চা খেতে চাইলে তাকে জানানো হয় এক কাপ চায়ের দাম ৭ টাকা । টাকা না দিলে চা খাওয়া যাবেনা । এত অমানবিকতার পরও শিশুদের সামনে সামান্য বিষয় নিয়ে অপমান করতে দ্বিধা করেন না প্রধান শিক্ষক নুর আলী। নিজ কন্যার জন্য বিদ্যালয় থেকে প্রাক-প্রাথমিকের একটি পুরোনো বই নেওয়ায় শিশুদেও সামনে চোর বলা হয় তাকে। এমনকি দুপুরের টিফিন খাওয়ার বেলাতেও অফিসে বসে খাওয়ার সুযোগ নেই তার। তাকে দুপুরের টিফিন খেতে হলে শ্রেণিকক্ষে শিশুদের সামনে বসেই খেতে হয়। কেন এমনটি হচ্ছে ওই নারী শিক্ষকের প্রশ্নের উত্তরে প্রধান শিক্ষক জানান উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে বিরোধ করে কেউ কোন সময়ে টিকতে পারেনি ।
প্রধান শিক্ষক নুর আলী ইতিমধ্যে এতই ক্ষমতা দেখিয়েছেন যে বিষয় ভিত্তিক প্রশিক্ষণ বিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষক থাকা সত্ত্বেও ডিপিএড প্রশিক্ষণরত শিক্ষককে দিয়ে বিষয় ভিত্তিক প্রশিক্ষণে অংশ গ্রহণের ব্যবস্থা করেছেন একই সাথে দুটি প্রশিক্ষণ চলমান থাকার বিষয়টি চাকরি বিধি রয়েছে কিনা আমাদের জানা নেই। লাঞ্ছিত নারী শিক্ষকের দমনের জন্য সর্বশেষ তিনি অন্য সকল সহকারী শিক্ষকগনের এবং এসএমসি কমিটির সদস্যদের কে ভুল বুঝিয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসারের কাছে লিখিত আবেদন করেছেন যার মনগড়া প্রতিবেদন তৈরী করে তাকে চাকুরীচ্যুৎ করতে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের বরাবর পাঠিয়ে পাঠিয়েছেন বলে অফিস সূত্রে জানা গেছে।
একজন প্রধান শিক্ষক হয়ে তার বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকের সাথে এমন বৈরী মনোভাব তৈরী হলে চাকুরীর সার্থকতা কোথায়? প্রাথমিক শিক্ষার জন্য নেতিবাচক প্রভাব পড়ার অন্যতম কারণ এটি। এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক নুর আলীর সম্পর্কে তথ্য উদঘাটন করতে গিয়ে আরো জানা যায়, নানাবিধ অপরাধ (আর্থিক দূর্ণীতি সহ) সংঘটিত করার অভিযোগে তাকে শাস্তিতে বর্তমান বিদ্যালয়ে বদলী করা হয়েছে। বর্তমানে তিনি পারিবারিকভাবে নারী কেলেঙ্কারির মামলায় আসামি হয়ে মহামান্য হাইকোর্ট থেকে জামিনে রয়েছেন। তিনি বিদ্যালয় সার্বিক পরিবেশ বিঘœ করছেন বলে এলাকাবাসীর অভিমত। নারী কেলেঙ্কারীতে ফেঁসে যাওয়া উপজেলা শিক্ষা অফিসার কে বাঁচাতে তার নিজের প্রতিষ্ঠানে সহকারি শিক্ষক কে বিপদের দিকে ঠেলে দিতে যাচ্ছেন প্রধান শিক্ষক মোঃ নূর আলী। সর্বশেষ সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, এলাকার সাধারণ মানুষ, শিক্ষার্থী অভিভাবক গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এই বিষয়টি নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। শিক্ষকদের দলাদলি বিদ্যালয় ও কোমলমতি শিশুদের জন্য মারাত্মক প্রভাব পড়ে। স্বাভাবিকভাবে আনন্দ চিত্তে পাঠ গ্রহণ করতে পারছে না শিশুরা। যা সত্যি উদ্বেগের কারণ। বর্তমান সরকার শিক্ষা বান্ধব। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আধুনিকায়ন করছেন, যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছেন কোমলমতি শিশুদের আনন্দ দান করিয়ে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে দেশের সম্পদ তৈরি করতে ।
শ্যামনগর উপজেলার ৭৯ নম্বর অন্তাখালি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বহীন আচরণের কারণে শিক্ষকদের মধ্যে দলাদলি ও বিভেদ সৃষ্টি করার কারণে কোমলমতি শিশুরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এমনটাই মনে করছেন এসএমসি কমিটির সদস্যবৃন্দ। এলাকার সাধারণ মানুষ, এলাকার সুধীমহল কোমলমতি শিশুদের অভিভাবকবৃন্দ এই সমস্যার সমাধান চান তারা একই সাথে প্রকৃত অপরাধী কে শাস্তি দিয়ে বিদ্যালয় এর সার্বিক সুন্দর পরিবেশ কামনা করেন।