
শেখ বাদশা: আশাশুনি উপজেলার বুধহাটা, কুল্যা, সদরের ধুলিহর ও বিনেরপোতা এলাকা দিয়ে প্রভাবিত বেতনা নদী এখন মৃত প্রায়। আশাশুনি উপজেলা এলাকায় এখনও নদীতে জোয়ার ভাটা প্রভাবিত হলেও সদরের মধ্যে এক প্রকার নেই বললেও চলে। নদীটি আশাশুনির খোলপেটুয়া নদী থেকে একটি শাখা বের হয়ে বেতনা নদী হিসেবে কাদাকাটি, বুধহাটা, কুল্যা, ধুলিহর ইউনিয়নের বুক চিরে, বিনেরপোতা, রাজনগর, ঝাউডাঙ্গা বাজার, কলারোয়া বাজার, কুশোরডাঙ্গা ইউনিয়নের মধ্যে দিয়ে জগদানন্দকাটি বাজার ও বাগআচড়া ইউনিয়ন হয়ে নাভরণ বাজার হয়ে শাখরা নদীতে গিয়ে মিশে গেছে। বেতনা নদীতে আশাশুনি উপজেলার মধ্যে জোয়ার ভাটা প্রভাবিত থাকলেও সাতক্ষীরা সদরসহ কলারোয়া, নাভরণ এলাকায় খালে পরিনত হয়েছে।
বেতনা নদীর তীরে গড়ে উঠেছে একাধিক ইটভাটা, বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এসকল অবৈধ দখলদারের তালিকা তৈরি করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। তালিকা তৈরি হলেও অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ করা হয়নি। নানা কারণে থমকে গেছে এই উদ্যোগ। অপর দিকে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের এক শ্রেণির কর্মচারীদের সহযোগিতায় নদীর বুকে ইটভাটা স্থাপন, নদীর পাড় বেধে জায়গা দখল করে সরু খালে পরিনত করা, নদীর উপর কাঠের সাঁকো তৈরি করে মাটি ও কাঁচা ইট এপার ওপার করা, চর থেকে মাটি কাটা, চর দখল করে ইট ভাটার চাতাল ও মৎস্য ঘের করা, নদীর সাথে সংযুক্ত একাধিক খালের মুখ বেধে মৎস্য চাষ করছে স্থানীয় ভূমি দস্যুরা। ফলে এককালের খরস্রোতা বেতনা নদীর যেন এখন আর কোন অস্তিত্বই নেই। নদীর অধিকাংশ স্থানে শুকনো ও মরা খালে পরিণত হয়েছে। ভেস্তে গেছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ‘ব্লু-গোল্ড প্রোগ্রাম-এর কার্যক্রম। বর্তমানে বেতনা নদী পায়ে হেঁটে এপার ওপার করে মানুষ। এভাবে চলতে থাকলে আগামী দু’বছরেই বেতনা নদীর নতুন নাম হবে ‘বেতনা বাওড়’।
এদিকে নদীর ভেতর ও চরের পলিমাটি ভেকুমেশিন লাগিয়ে মাটি কেটে নিয়ে ব্যবহার করছে ভাটাগুলোতে। আবার সুযোগ বুঝে এক শ্রেণীর সুবিধাভোগী মহল নদীর দু’পাশের চরের কিছু কিছু জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে ভূমিহীনদের নামে ইজারা নিয়ে মাছের ঘের ও ধান চাষ শুরু করেছে। পরবর্তীতে সেখানে ঘরবাড়ি তৈরি করে বিক্রয় বাবদ তাদের কাছে থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অংকের টাকা। এই ভাবে বসতি স্থাপন করায় বিভিন্ন স্থানে নদীর চরে গড়ে উঠেছে পাড়া মহল্লা। এসকল বসতিরা নদীর ধারে নির্মান করছে অস্বাস্থ্যকর পায়খানা। তাছাড়া বেতনা নদীর চরে জেগে ওঠা সরকারি খাস জমির দখল নিতে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে অহরহ ঘটছে সংঘর্ষের মত ঘটনাও। এসকল ভূমি দস্যুদের নদীর তীর থেকে উচ্ছেদ না করলে বেতনা নদীর নাম পরিবর্তন হয়ে বেতনা বাওড় নামে রুপান্ত্রিত হতে সময় লাগবে না। ঠিক তেমনি বর্ষা মৌসামে জলাবদ্ধতার হাত থেকে রক্ষা পাওয়া কঠিন হয়ে দাড়াবে সাধারণ মানুষের। এমতাবস্থায় বেতনা নদীটির প্রাণ ফিরে পেতে দ্রুত নদী খনন ও দখলদার উচ্ছেদ করা জরুরী বলে মনে করছেন স্থানীয় সচেতন মহল।